হকিং যুক্ত করলেন গ্যালিলিও ও আইনস্টাইনকে
প্রকৃতি রহস্যময়। নানা রকম রহস্যে সে নিজেকে আবৃত করে রাখে। আর সে রহস্যের জট খুলে যাঁরা জ্ঞানটাকে বের করে আনেন, তাঁদেরই বলা হয় বিজ্ঞানী। সে রকমই এক বিজ্ঞানী ছিলেন স্টিফেন হকিং। সিএনএনের খবরে প্রকাশ, আপেক্ষিকতাবাদ, কসমোলজি, কোয়ান্টাম মেকানিকস এবং ব্ল্যাকহোল নিয়ে প্রকৃতির নানা রহস্যের পেছনে বিজ্ঞানকে খুঁজে বের করেছেন তিনি। অথচ পদার্থবিদ্যার এই কিংবদন্তির জন্ম-মৃত্যু নিয়ে প্রকৃতি জন্ম দিল আরেক রহস্যের।
১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিদ টেলিস্কোপের আবিষ্কারক গ্যালিলিও গ্যালিলির মৃত্যুবার্ষিকী পালনে ব্যস্ত সবাই। আর সেদিনেই জন্ম নিলেন ‘বিগ ব্যাং’ থিওরির জনক স্টিফেন হকিং। গ্যালিলিওর মৃত্যুদিনে যাঁর জন্ম, প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে পদার্থবিদ্যার আরেক কিংবদন্তি আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিনে, ৭৬ বছর বয়সে পৃথিবী ছাড়তে হলো তাঁকে।
আজ বুধবার ভোররাতে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে নিজের বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আর তাঁর এই মৃত্যু এক সুতোয় বেঁধেছে তিন কিংবদন্তি বিজ্ঞানীকে। শুধু তাই নয়, মার্চ মাসের আজ, অর্থাৎ ১৪ তারিখকে বিশ্ব পাই দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কারণ, এই তারিখটি মাস ও দিন ক্রমে লিখতে গেলে আমাদের লিখতে হবে ৩.১৪, যা পাইয়ের মান। বিজ্ঞানের রহস্যময় এই মানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল স্টিফেন হকিংয়ের নামও।
তবে এই অদ্ভুত ঘটনা সম্ভবই হতো না, যদি না ১৯৬২ সালে চিকিৎসকের করা ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যেত। ১৯৬২ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে মোটর নিউরন নামে স্নায়ুর এক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন হকিং। মোটর নিউরন রোগের একটি ধরন অ্যামিওট্রপিক লেটারেল স্কেলরোসিসে (এএলএস) আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সে সময়ে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, দুই বছরের বেশি বাঁচবেন না হকিং। এর পর থেকে তাঁর পুরো জীবনই কেটেছে হুইলচেয়ারে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও কম্পিউটার স্পিচ সিন্থেসাইজারের মাধ্যমে কথা বলতেন তিনি।
হকিংয়ের কাজের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল আপেক্ষিকতাবাদ, কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং মহাবিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র ক্ষুদ্র কণা ও তাদের চরিত্র এবং অবশ্যই ব্ল্যাকহোল। ১৯৭৪ সালে ব্ল্যাকহোলের ওপর তাঁর বিখ্যাত থিওরি ‘হকিং রেডিয়েশন’ প্রকাশ হয়। সে বছরই মাত্র ৩২ বছরে বয়সে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হন তিনি। ১৯৭৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের লুকেসিয়ান প্রফেসর হন। এই পদে ছিলেন আইজ্যাক নিউটনও।
বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। বইটির শুধু ইংরেজি সংস্করণই এক কোটি কপি বিক্রি হয়েছিল। ২০০১ সালের মধ্যে ৩৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। ২০০১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘দি ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’।
১৯৬৫ সালে জেন ওয়াইল্ডকে বিয়ে করেছিলেন হকিং। তাঁদের তিন সন্তান। ২৫ বছর পর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। পরে তিনি তাঁর নার্স অ্যালাইন ম্যাসনকে বিয়ে করেন। যদিও এ সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি। তিনি রেখে গেলেন তিন ছেলে লুসি, রবার্ট ও টিম-কে।
আলবার্ট আইনস্টাইনের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় পদার্থবিজ্ঞানী বলা হয় তাঁকে। জীবদ্দশাতেই তিনি পেয়েছিলেন কিংবদন্তির সম্মান। ২০১৪ সালে তাঁকে নিয়ে তৈরি হয় সিনেমা ‘দ্য থিওরি অব এভরিথিং’।