পুনরুদ্ধার হওয়া প্রাচীন শহর হেলিক
আতলান্তিসের ধ্বংসযজ্ঞের নানা কাহিনী প্রচলিত আছে প্রাচীন গ্রিসের উপকথায়। তবে হারিয়ে যাওয়া হেলিক শহরের গল্পটা আরো বেশি রোমাঞ্চকর। কারণ ধ্বংসের প্রায় এক হাজার ৭০০ বছর পর শহরটি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
পেলোপোনেশিয়ান উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আচায়ে এলাকায় ছিল হেলিক শহরের অবস্থান। একই এলাকায় একসাথে ছিল ১২টি শহর। আর সে কারণেই হেলিক ছিল অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় কাজের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
হেলিকের দেবতা ছিলেন পোসাইডন। গ্রিক এই দেবতাকে বলা হয় সমুদ্র ও ভূমিকম্পের দেবতা। হেলিকের অবস্থান ইউরোপের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়। ৩৭৩ খ্রিস্টপূর্বের এক শীতের রাতে ধ্বংস হয়ে যায় হেলিক শহর।
গ্রিক উপকথায় প্রচলিত আছে, শহরটি ধ্বংসের আলামত নাকি আগেই পাওয়া গিয়েছিল। অনেক পশুপাখি নাকি দ্বীপটি ধ্বংসের কয়েকদিন আগে থেকেই তা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।
করিন্থ উপসাগরে সৃষ্ট এক সুনামি থেকে তৈরি ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল হেলিক। পরদিন সকালে উদ্ধারকারীরা এসে না কি আর কাউকেই জীবিত পায়নি।
ভূমিকম্পে হেলিক শহর ধ্বংস হওয়ার জন্য দায়ী করা হয় ভূমিকম্পের দেবতা পোসাইডনকে। উপকথায় আছে, পোসাইডনের মূর্তি দিতে অস্বীকার করায় হেলিকের বাসিন্দাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন সমুদ্রের দেবতা পোসাইডন। আর সেই রাগেই সমুদ্রে সুনামি তৈরি করে শহরটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তিনি।
ধ্বংস হলেও হেলিক কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। ধ্বংস হওয়ার পরও ওই এলাকা বিভিন্ন সময়ে ঘুরে দেখেছেন পর্যটকরা। বিভিন্ন সময়ে সে অভিজ্ঞতা লিখে রেখে গিয়েছিলেন তাঁরা। হেলিক ধ্বংস হওয়ার প্রায় দেড়শো বছর পর জায়গাটি পরিদর্শন করেছিলেন দার্শনিক এরাটোস্থেনেস। তিনি লিখেছেন, দ্বীপটিতে পোসাইডনের একটি তামার মূর্তি দেখেছিলেন তিনি।
গ্রিক পর্যটক পসানিয়াসও হেলিক ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, পানির নিচে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরটির অস্তিত্ব ছিল। মাটির নিচে ডুবে থাকা দেয়ালগুলো দেখা যাচ্ছিল।
হেলিক শহরের মূল ভূখণ্ড খুঁজে পেতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে শুরু হয় গবেষণা। বিংশ শতাব্দীতে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় হেলিকের মূল ভূখণ্ড। যেহেতু শহরটি ডুবে গিয়েছিল, তাই প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য এটি খুঁজে বের করা ছিল বেশ মুশকিল। কারণ সবার ধারণা ছিল, করিন্থ উপসাগরে ডুবে গেছে হেলিক। কিন্তু গ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক দোরা কাটসোনোপৌলু প্রথম এই সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, সাগরে নয় ভূমিতেই অবস্থিত ছিল হেলিক।
অবশেষে ২০০১ সালে গ্রিসের আচায়েতে খুঁজে পাওয়া যায় হেলিকের অবস্থান। ২০১২ সালে মাটি খনন করে শহরটির রূপরেখা পুনরুদ্ধার করা হয়। শহরটি খুঁজে পাওয়ার পর থেকে এখনো সেখানে খননকাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হেলিকের কাহিনী যত উন্মোচিত হবে, ততই প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে মানুষের ধারণা আরো স্পষ্ট হবে।