পোকাই যখন দামি খাবার!
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/05/15/photo-1463308547.jpg)
গোপাল ভাঁড় চা খেতে গিয়েছে চায়ের দোকানে। বায়না দিতেই দোকানি দিয়ে গেল গরম গরম এক কাপ চা। বিমলানন্দে চা খেল বটে, কিন্তু দাম দিতে গিয়ে বেকে বসল গোপাল। কিছুতেই সে পুরো দাম দেবে না। কারণ, চায়ের মধ্যে ছিল একটা নাদুসনুদুস মাছি। ওই মাছিই নাকি অর্ধেক চায়ে ভাগ বসিয়েছে। যুক্তি অকাট্য, কিন্তু দোকানিও কম যায় না। উল্টো পোকার বাড়তি দাম চেয়ে বসল সে। গোপাল রেগেমেগে নালিশ ঠুকে দিল কাজির দরবারে। মোকদ্দমার নথিতে চোখ বুলিয়ে কাজি শেষমেশ রায় দিলেন সেই দোকানির পক্ষেই। খুব অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই! হওয়ারই কথা, জীবনে এই প্রথম এমন কোনো গল্প শুনলেন যেখানে গোপাল হেরে গেল। গোপালও খুব অবাক। কোন দুনিয়ায় এলাম যে মাছি খেতে হবে দাম দিয়ে? ওয়াক! গোপালের জায়গায় আপনি হলেও নিশ্চয়ই লাঠি নিয়ে তেড়ে যেতেন দোকানি আর কাজির বংশ উদ্ধার করতে।
তবে শুনুন, নিছকই গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে এমন আজগুবি গল্প ফাঁদতে বসা নয়। পৃথিবীর আড়াইশ কোটি লোক দিব্যি পোকামাকড় খেয়ে যাচ্ছে। আফ্রিকার গহিন জঙ্গলে নয়, পৃথিবীর আশি ভাগ সভ্য দেশেই এসব খাওয়ার চল আছে। বিশ্বাস না হলে গুগলকে জিজ্ঞেস করুন; চোয়াল ঝুলে পড়বে।
হালের সবচেয়ে দামি ডিনার আইটেম লবস্টারের কথাই ধরুন। শতাব্দী খানেক আগেই চিংড়িকে পাত্তাই দেওয়া হতো না। চিংড়ি বিতর্কে নাই বা গেলেন। বিশ্বে প্রায় এক হাজার রকমের পোকা রয়েছে যেগুলো আহারযোগ্য। এর বেশির ভাগই যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর! তাই পোকা কীভাবে আরো বেশি পরিমাণে খাওয়ার যোগ্য করা যায়, সে চিন্তা করার আহ্বান জানিয়েছে স্বয়ং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।
এমন অনেক পোকামাকড় নাকি বিপুল আমিষের আধার এবং এগুলো চাষ করাও সহজ। ফলে ভবিষ্যতে খাবারের চাহিদা মেটাতে এই পোকামাকড়ের কাছেই যেতে হতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ফ্রান্সের এক বনেদি খাবার কোম্পানির করা ফড়িংয়ের গ্রিল বিক্রি হয় অনলাইনে। দাম কত ধরেছে জানেন? প্রতি ৩০ গ্রামের একটি বোতলের দাম ৯ ইউরো, প্রায় হাজার টাকা!
কড়া করে ভাজা গোবরে পোকা, শূককীট ও পঙ্গপাল নাকি মেক্সিকো, কলাম্বিয়ায় খুব জনপ্রিয়। লাতিন নয় শুধু, ইউরোপে তো অনেক আগে থেকেই পোকা খাওয়ার চল আছে। তবে জার্মানিতেও নতুন চালু হওয়া অনেক রেস্তোরাঁয় ঘাসফড়িং, শুয়োপোকা ভালো দামে বিকোয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মানুষের কাছে একটু যেন বেশিই প্রিয় এসব পোকামাকড়।
বিশ্বজুড়ে মানুষ কেন পোকাপ্রেমী হবে না? বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতামত—শুধু আমিষ নয়, পোকামাকড় ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন ও খনিজের একটি বড় উৎস। সেই সঙ্গে এসব খাবার স্বাস্থ্যকরও। পোকা, বিশেষ করে লার্ভা বা শূককীটগুলো, একেকটি যেন আমিষের স্বর্গ! যেমন একশো গ্রাম উইপোকায় রয়েছে ৬১০ ক্যালরি—যা একটি চকলেটের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া এতে আছে ৩৮ গ্রাম আমিষ ও ৪৬ গ্রাম চর্বি।
পোকামাকড় খেতে কিন্তু তেমন খারাপ নয়, বরং সুস্বাদু—পোকাখেকোরা এমনটাই বলেন। আবার গরু, ছাগল, ভেড়ার চেয়ে এগুলো পালতে খরচ যেমন কম পড়ে, তেমনি পরিশ্রমও হয় কম। এ ছাড়া এরা গ্রিনহাউস গ্যাসও কম উৎপাদন করে।
অন্য একটি বিষয়ও ভাববার রয়েছে বৈকি। ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৯০০ কোটিতে। এত লোকের খোরাকির জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে দ্বিগুণ। ‘পেটে-ভাতে’ বেঁচে থাকার সমীকরণ আরো জটিল হয়ে যেতেই পারে। কে জানে, পোকাই হয়তো তখন হয়ে উঠবে অন্নের ভরসা!