প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়েতে শাস্তি কী
রোজিনা খাতুন (ছদ্মনাম)। একটি গার্মেন্টসে অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। দুই বছর আগে রহিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর ঘরে একটি মেয়েসন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু রোজিনা জানতে পারেন তাঁর স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছেন তাঁকে না জানিয়ে।
এ বিষয়ে রোজিনা খাতুন জানার পর তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে স্বামী তাঁকে খোরপোষ দেবেন না বলে হুমকি দেন। এ ক্ষেত্রে রোজিনা বেশ ভাবনায় পড়ে যান। তিনি এক আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান পেলেন। স্বামী যেহেতু আরেকটি বিয়ে করেছেন, সে ক্ষেত্রে আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পাবেন।
আইন অনুযায়ী এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিয়ে করাকে বহুবিবাহ বলে। আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। তবে কোনো ব্যক্তির যদি এক স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে শেষ স্ত্রীর এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ফি দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি দিতে যেসব বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব, ২. শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা, ৩. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা, ৪. দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন, ৫. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি।
অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে শাস্তি কী
কোনো পুরুষ যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে তিনি অবিলম্বে তাঁর বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন। বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীরা আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন।
দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য।
ভরণপোষণের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন। মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবে।
এ ছাড়া অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাশাপাশি দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে, স্বামী যদি স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিয়ে করেন তবে সেই ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে, তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট