পাণ্ডুলিপি বা বইয়ের স্বত্ব : লেখকের করণীয়
বই নকল বন্ধে অনেক চেষ্টা করেও কূলকিনারা করতে পারছেন না প্রকাশকরা। বই বের হওয়ার পর পরই নকল হওয়ার পাশাপাশি, স্বত্ব নিবন্ধন না করে অন্য প্রকাশকদের কাছে পাণ্ডুলিপি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এতে করে প্রকাশকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই লেখকদের পাণ্ডুলিপি বা বইয়ের স্বত্ব নিবন্ধন (কপিরাইট) করে নিতে হবে।
নকল রোধে লেখকদের করণীয়
বই নকল বন্ধে প্রকাশকদের পাশাপাশি লেখকদেরও কিছু কর্তব্য রয়েছে। প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি বিক্রির আগে লেখকদের উচিত পাণ্ডুলিপিটি নিবন্ধন করা। কেননা, লেখকদের পাণ্ডুলিপির নিবন্ধন না থাকায় বই নকলের ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন না প্রকাশক। তাই নকল রোধে লেখকদের বইটিকে স্বত্ব নিবন্ধন করে নেওয়া উচিত আগেভাগেই।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “কপিরাইট শুধু প্রকাশ হওয়া বইয়ের ক্ষেত্রেই নয়, পাণ্ডুলিপিরও কপিরাইট নিবন্ধন করা যায়। কেননা কপিরাইট আইন ভঙ্গ করে নকল করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। কপিরাইট আইন অনুযায়ী সাধারণত লেখক যে কয় বছর বেঁচে থাকবেন, শুধু তিনিই ততদিন কপিরাইটের অধিকারী হবেন। লেখকের মৃত্যুর পর ষাট বছর পর্যন্ত তাঁর উত্তরাধিকারীরা কপিরাইট ভোগ করতে পারবেন। এর পর সাধারণ জনগণ কপিরাইটের অধিকার ভোগ করতে পারবে।
যেখানে নিবন্ধন করতে হবে
বইয়ের স্বত্ব নিবন্ধন করতে লেখককে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত কপিরাইট কার্যালয়ে যেতে হবে। প্রথমে সেখানে উপস্থিত হয়ে আপনাকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। যে জিনিসটির ওপর আপনি স্বত্বাধিকারী চান, আবেদনপত্রে সেটির সকল বিবরণ, কার নামে স্বত্ব হবে, কী শর্ত হবে সবকিছু পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে পাণ্ডুলিপি বা বই দুই কপি করে জমা দিতে হবে। স্বত্ব নিবন্ধনের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া হস্তান্তর সূত্রে, মালিকানার ক্ষেত্রে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হস্তান্তর দলিল দাখিল করতে হবে। যেকোনো বিষয়ের ওপর মৌলিক বই হলে পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশকের হাতে তুলে দেওয়ার আগে কপিরাইট আইন. ২০০০-এর বিধি বিধান মেনে লিখিত চুক্তি করতে হবে। চুক্তিতে অবশ্যই স্বত্বের অধিকার, স্বত্বের মেয়াদ, স্বত্ব নিয়োগের ভৌগোলিক পরিধি উল্লেখ থাকতে হবে।
কপিরাইট আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী ৮০০ টাকা প্রদান করে সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে নিবন্ধন করতে হয়। এ চুক্তির ফলে প্রকাশকের মতো লেখকের নৈতিক ও আর্থিক অধিকারও সুরক্ষিত হয়। এ চুক্তির শর্ত কোনো পক্ষ পালন না করলে আইনের আশ্রয় নেওয়া যাবে। এ ছাড়া পাণ্ডুলিপি বা বই নিয়ে কোনো মামলা-মোকদ্দমা বিচারাধীন নেই এবং এর তথ্য নির্ভুল এ মর্মে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। তবে কেউ আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনপত্র দাখিল করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে ওকালতনামা দাখিল করতে হবে।