বাল্যবিবাহ, আইন ও শাস্তি
দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান অনেক বেশি। উন্নত বিশ্বে পুরুষের পাশাপাশি দেশ গড়ায় নারীরাও সমান অবদান রেখে চলেছেন। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলেও এখনো অনেক নারীর জীবন বাল্যবিবাহের কারণে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে যায়। এতে করে সংসার-জীবন বুঝে ওঠার আগে খুব কম বয়সে ‘মা’ হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন মেয়েরা। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ে এবং একই বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হচ্ছে। আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও বাল্যবিবাহকে বাধা মনে করা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ রোধ আইন কয়েক দফা সংশোধন করে নতুন করে বাল্যবিবাহ রোধ নীতিমালা করা হয়েছে। এ আইনে বিধিবিধান নিচে আলোচনা করা হলো :
বাল্যবিবাহ আইন
বাল্যবিবাহ আইন, ১৯২৯ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি কোনো শিশুকে বাল্যবিবাহ করতে বা করাতে বাধ্য করতে পারবে না। এখানে শিশু বলতে ওই ব্যক্তিকে বোঝাবে, যার বয়স পুরুষ হলে ২১ বছরের নিচে এবং নারী হলে ১৮ বছরের নিচে। তবে ২০১৫ সালে সরকার এ নীতিমালা সংশোধন করে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ রাখলেও ১৬-তে ইচ্ছা করলে পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে দিতে পারবে বলে নির্ধারণ করা হয়।
বাল্যবিবাহ আইন, ১৯২৯-এর ১৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো অভিভাবক ২১ বছর বয়সের নিচে পুরুষ বা ১৮ বয়সের নিচে কোনো মেয়ের হয়ে বাল্যবিবাহের চুক্তি করলে, তাঁর এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে মেয়েদের শাস্তির বিধান রাখা হয়নি।
বাল্যবিবাহ নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী, ছেলের বয়স ২১ ও মেয়ের বয়স ১৬ বছরের কম হলে তা বাল্যবিবাহ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে আইনে বলা হয়, বিবাহকারী, বিয়ে পরিচালনাকারী ও অভিভাবককে উল্লিখিত শাস্তি দেওয়া যাবে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে কারাদণ্ড প্রযোজ্য হবে না; জরিমানার বিধান অভিন্ন থাকবে। নতুন এ আইনে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে এ ধরনের বিয়ে বন্ধ করে দোষীদের সাজা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে আইনের খসড়ায়। তবে বিয়ে বাতিলের বিষয় থাকলে তা করবেন পারিবারিক আদালত।
আইনে বলা হয়, বাল্যবিবাহ বন্ধে ১৯২৯ সালের আইনে এক মাসের জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। পরে তা সংশোধন করে এক মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হয়। তার পরও বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটায় শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে নতুন আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বরের শাস্তি
শিশু বিবাহকারী কেউ ২১ বছর বয়সোর্ধ্ব পুরুষ বা ১৮ বয়সোর্ধ্ব মহিলা হয়ে কোনো বাল্যবিবাহের চুক্তি করলে এক মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাবাসে বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য জরিমানায় বা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
বিয়ে পরিচালনাকারীর শাস্তি
এ ছাড়া বাল্যবিবাহ সম্পন্নকারী, অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী, নির্দেশ প্রদানকারীর এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হবে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যদি না তিনি প্রমাণ করেন যে তাঁর বিশ্বাস করার কারণ ছিল, ওই বিয়ে কোনো বাল্যবিবাহ ছিল না।
অভিভাবকের শাস্তি
বাল্যবিবাহের চুক্তি করেছেন এমন ভারপ্রাপ্ত যেকোনো ব্যক্তি, বাবা-মা বা অভিভাবককে ধরা হবে তিনি বা তারা উক্ত বিয়েতে উৎসাহদানের কাজ করেছেন অথবা ওই বিয়ে বন্ধ করায় অবহেলা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি এক মাস পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য জরিমানায় বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।