নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠান
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রথমদিন বুধবার কবি নজরুলের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ‘গাহি সাম্যের গান’ গেয়ে মঞ্চে পায়রা অবমুক্ত ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহিত উল আলম।
এরপর আলোচনা সভার প্রধান অতিথি মোহাম্মদ নাসিম কবি নজরুলের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘কবি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক স্নেহ দিয়ে কবি নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক মানুষ হতে হবে। কবি নজরুল এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছেন।’ তিনি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ইসিজি, এক্স-রেসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রদানের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহিত উল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবায়ন করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর কাব্যিক স্বপ্ন দেখেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কোনো মানুষই আসলে অকাজের নয়। কোন মানষকে দিয়ে কোন কাজটি সম্ভব তা বুঝে কাজ দিলে সফলতা আসবেই। পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে যখন সাত কোটি মানুষ ছিল, তখন বাংলাদেশ গরিব ছিল। এখন ১৬ কোটি মানুষের দেশ আর গরিব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে কাজের সঠিক মূল্যায়ন করায় দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উপাচার্য।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক শান্তনু কায়সার এবং ট্রেজারার প্রফেসর এ এম এম শামসুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার মো. আমিনুল ইসলাম। সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা সূচনা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
পরে ‘নজরুলের দার্শনিকতা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। ‘নজরুলের প্রেম সঙ্গীত : দর্শন ও নন্দনতত্ত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান হাবিব। ‘ঔপনিবেশিক শাসনবৃত্তে নজরুলের উপনিবেশবিরোধী চেতনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রেজাউল ইসলাম রেজা। প্রবন্ধ দুটির আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন যথাক্রমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব হোসেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা।
এর আগে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চারুকলা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০১৬-এরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। শতাধিক ছবি এই প্রদর্শনীতে স্থান পায়।
শেষে ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের প্রযোজনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবি নজরুলের গান, কবিতা, নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত, নুসরাত জাহান শিমুর নির্দেশনায় নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের পরিবেশনায় ‘বাদল বরিষণে’ নাটক পরিবেশিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশিষ্ট নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফাতেমাতুজজোহরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।