মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাটে একের পর এক মিলছে অভিনেত্রীর লাশ
কৃতিকা চৌধুরী, অঞ্জলি শ্রীবাস্তব আর বিদিশা বেজবরুয়া—নামগুলো পরিচিত লাগছে কি? এরা সবাই বলিউডের নায়িকা। শুধু তাই নয়, এরা সবাই মুম্বাইয়ের একই এলাকার ফ্ল্যাটে নিহত হয়েছেন।
ভারতের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে তুমুল জনপ্রিয় এই তিনজনই বলিউডে এসেছিলেন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাওয়ার আশায়। কিন্তু প্রায় এক মাসের ব্যবধানে মুম্বাইয়ের আলো ঝলমলে দুনিয়ায় মিলেছে তিনজনেরই মৃতদেহ।
প্রথম গত ১৩ জুন মুম্বাই শহরের আন্ধেরি এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে কৃতিকা চৌধুরী (৩০) নামের এক বলিউড অভিনেত্রীর গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আন্ধেরির চার বাংলো এলাকার ভৈরবনাথ আবাসিকে অবস্থিত নিজ ফ্ল্যাট থেকে কৃতিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে বলেছিল পুলিশ।
ঘটনার পরপরই পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কৃতিকার ফ্ল্যাট থে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে জানান তাঁর প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সে সময় ফ্ল্যাটের দরজা বাইরের দিক থেকে তালা দেওয়া ছিল। প্রায় চার-পাঁচদিন ধরে ফ্ল্যাটটি বন্ধ ছিল বলে জানা যায়। পরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে কৃতিকার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
কৃতিকা ২০১৩ সালে বলিউডে মুক্তি পাওয়া ‘রাজ্জো’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ওই ছবিতে মূল চরিত্রে ছিলেন তারকা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত ও পরশ অরোরা।
এরপর একই মাসের ২০ তারিখ। এবারও ঘটনাস্থল আন্ধেরি এলাকা। কৃতিকা চৌধুরী নিহতের সাতদিন পার না হতেই অপর একটি ফ্ল্যাট থেকে ভোজপুরি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জলি শ্রীবাস্তবের (২৯) মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই অভিনেত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর একে ‘আত্মহত্যা’ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, অঞ্জলির স্বজনরা দুদিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে পুলিশকে বিষয়টি জানায়। পরে পুলিশ আন্ধেরির ফ্ল্যাটে গিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ফ্ল্যাটে মিলল ‘জগ্গা জাসুস’ চলচ্চিত্রের অভিনেত্রীর মরদেহ। এবারও ঘটনাস্থল আন্ধেরির খুব কাছেই। গুরুগাঁওয়ে ‘সুশান্ত আবাসিকে’ নিজের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে বিদিশা বেজবরুয়া নামে ওই অভিনেত্রীর ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে গুরুগাঁও পূর্ব এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দীপক সাহারান জানান, মঙ্গলবার দুপুরে অভিনেত্রীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে গুরুগাঁওয়ের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে দরজা ভেঙে বিদিশার ঝুলন্ত মৃতদেহের সন্ধান মেলে।
বিদিশার বাবার বরাত দিয়ে এএনআই আরো জানায়, গত শনিবার মুম্বাইয়ের উদ্দেশে আসাম ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর সোমবার থেকে বিদিশার মোবাইলে ফোন দিয়ে তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। একসময় মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পুলিশের কাছে মেয়ের নিখোঁজ জানিয়ে তেজপুর থেকে গুরুগাঁও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিদিশার বাবা।
এদিকে সুশান্ত অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদিশাকে সর্বশেষ সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছিল সোমবার। ওই দিন তাঁকে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে দেখা যায়। এর পর থেকে তাঁকে আর দেখতে পাননি কেউই।
বিদিশা ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি আসামের লোকনৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রথম পাদপ্রদীপের তলায় আসেন। এরপর টিভিতে উপস্থাপিকা হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন। উপস্থাপনার পাশাপাশি বহু নাটকেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া সগীতশিল্পী হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল।
সর্বশেষ রণবীর কাপুরের ‘জগ্গা জাসুস’ চলচ্চিত্রে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করে বলিউডের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়েছিলেন প্রতিভাময়ী এ শিল্পী। কিন্তু তাঁর স্বপ্নপূরণের আগেই চলে গেলেন বিদিশা।
এদিকে দীপক সাহারান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে একে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই সন্দেহ করছে পুলিশ। কারণ আত্মহত্যার সময়ে বিদিশার ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। আর কেউ ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন না।
তবে বিদিশার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর স্বামী নিশীথকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে বিদিশার বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে খুন করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এত সুচারুভাবে কাজটি করা হয়েছে, যাতে ঘটনাটি আত্মহত্যার বলে মনে হয়। তিনি এ ঘটনায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ স্যানাল ও হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারকে অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই দুই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন বলে এএনআইয়ের কাছে জানিয়েছেন তিনি।