‘সুন্দরের’ নামে প্লাস্টিক সার্জারি, ডেকে আনছে মৃত্যু
‘বাবা-মা, স্ত্রী-কন্যা কিংবা দেশের মানুষের চেয়ে সুন্দরী হওয়া জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
কলম্বিয়ান এক নারী শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করতে গিয়ে মারা যাওয়ার পর টেলিভিশনে এক প্রতিক্রিয়ায় এই কথা বলেন দেশটির ভ্যালে ডেল কাকার গভর্নর দিলিয়ান ফ্রান্সিসকা টোরো।
কলম্বিয়ার স্থানীয় সংবাদপত্র ‘এল পিয়ার ক্যালি’র তথ্য মতে, গত ১১ সেপ্টেম্বর গ্লাডেস তেইগো ওবেন্দো নামে ৩৫ বছর বয়সী এক নারী প্লাস্টিক সার্জারি করতে গিয়ে মারা যান। তাঁর ঠিক এক সপ্তাহ আগে ক্যালি শহরের আরেক হাসপাতালে একই রকম সমস্যাজনিত কারণে মারা যান দুই নারী। কলম্বিয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করে এ বছর এখন পর্যন্ত নয়জন নারী মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ ছিলেন তেইগো ওবেন্দো।
ভ্যালে ডেল কাকার গভর্নরের এক মুখপাত্র বলেন, ‘তেইগো ওবেন্দো যে মেডিপ্লাস্টিক ক্লিনিকে প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল। ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, সেখানে স্বাস্থ্য সেবা, অপারেশন, চিকিৎসা দেওয়ার মতো ভালো ব্যবস্থা ছিল না।’
যথাযথ নিয়ম মেনে এবং ভালো চিকিৎসকের কাছে অপারেশন না করায় অনেক নারীই মারা যাচ্ছেন। অপারেশনের পর নানা শারীরিক সমস্যায়ও ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। দেশটিতে প্লাস্টিক সার্জারি জনপ্রিয় হয়ে উঠায় গড়ে উঠেছে নামে-বেনামে অনেক হাসপাতালও। এ রকম পরিস্থিতিতে শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে প্লাস্টিক সার্জারির বিষয়টি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কলম্বিয়ায়।
গভর্নর দিলিয়ান ফ্রান্সিসকা টোরো বলেন, ‘মানুষকে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে আমরা সজাগ আছি। তাই যেসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, সেই রকম সব হাসপাতালই আমরা বন্ধ করে দেব। তারপরও আমি বলব, যারা প্লাস্টিক সার্জারি করাতে চান, তাঁরা অত্যন্তপক্ষে ভালো কোনো হাসপাতালে যান।’
প্লাস্টিক সার্জারি করে জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রচারও শুরু করেছেন ফ্রান্সিসকা টোরো। তাঁর সেই প্রচারের স্লোগান হলো ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরী হওয়ার প্রর্থনা বন্ধ করুন।’
কলম্বিয়ায় শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এখন বহু নারী প্লাস্টিক সার্জারি করাচ্ছেন। শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয়, প্লাস্টিক সার্জারির বিষয়টি অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখা হয় দেশটিতে।
কলম্বিয়ার বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন জুলিয়েথ গাঙ্গোরা। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক সার্জারি করে ভক্তকূল পছন্দ করে এমন শরীর তৈরির চেষ্টা করেন তারকারা। তবে প্লাস্টিক সার্জারির বিষয়টি শুধু শারীরিক সৌন্দর্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আপনি অনেক সম্পদশালী সেটারও পরিচায়ক। আর তাই আপনি যখন ফুটবল খেলতে যান, তখনো প্লাস্টিক সার্জারির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি তখন মানুষকে দেখাবেন যে, আপনি প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন।’
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব অ্যাস্থেটিক প্লাস্টিক সার্জারির (আইএসএপিএস) মতে, শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে যেসব দেশের মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি করায় তাদের মধ্যে ১১তম অবস্থান কলম্বিয়ার। ২০১৬ সালে দেশটির প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছে।