‘মৌলিক অধিকার হননকারীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী’
যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আর সেই অধিকার কেউ যদি হনন করে, তবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। আজ রোববার কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকরা।
সমাবেশের আগে নিরপরাধ ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে এক পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।
শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাবির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিরাজ ও সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ভিজিটিং প্রফেসর আজফার হোসেন।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো যৌক্তিক আন্দোলনে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বাধীনতার পর দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা আমার জানা নেই। পাকিস্তান ও ব্রিটিশ শাসনামলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’
কোটা সংস্কারের বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশের ছাত্রসমাজ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। সরকার এ দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এ দাবি বাস্তবায়নে কোনো কমিটি গঠন করেনি। শিক্ষার্থীরা যখন আবারও আন্দোলন করেছে, তখন সরকার কমিটি গঠন করেছে। এর পরও এখন পর্যন্ত তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। বক্তব্যে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে গ্রেপ্তারের দাবি জানান জ্যেষ্ঠ এই শিক্ষাবিদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তাঁর বক্তৃতায় বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা চারটি অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের হাতুড়িসহ বিভিন্ন অমানবিক কায়দায় পেটানো, আহতদের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা, তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম দলীয় অপবাদ দেওয়া হয়েছে। এগুলোকে চরম অন্যায় বলে অভিহিত করেন আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুল আরো বলেন, ‘সংবিধানে আছে, যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আর সেই অধিকার কেউ যদি হনন করে, তবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের সহোযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, সবচেয়ে ভালো ছাত্ররাই ঢাবির শিক্ষক হন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিপদে সকলে এগিয়ে আসতে পারেন না। যারা ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক, তাঁরা সব সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাঁড়ানো সব শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষক অস্তিত্বহীন।
ঢাবি প্রশাসনের সমালোচনা করে তানজিম উদ্দিন খান আরো বলেন, ‘মস্তিষ্কবিহীন প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ আমাদের পরিচালনা করছে, যার ফলে বারবার এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।’
সমাবেশে ইউল্যাবের ভিজিটিং প্রফেসর আজফার হোসেন বলেন, কিছু কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারেন না, কারণ তারা সরকারের চামচা। আরেক দল আছেন, যারা আসতে চান, কিন্তু ভয় পান। সব মিলিয়ে দেশকে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে মন্তব্য করেন ইউল্যাবের এই অধ্যাপক।
এ ছাড়া সমাবেশে বিশেষ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন। দাবিগুলো হলো : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার, আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হামলায় আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান, নারী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নকারীদের বিচার ও দ্রুত কোটা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।