বঙ্গবন্ধু এক অনুপ্রেরণার নাম
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ—শব্দ তিনটি একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধু না থাকলে হয়তো আমরা স্বাধীন দেশ কখনোই পেতাম না। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস কল্পনা করা যায় না। জনগণের অন্তর্নিহিত শক্তির ওপর অপার আস্থা-বিশ্বাস, মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা, মমত্ববোধ, সহমর্মিতার বিরল দৃষ্টান্ত সমৃদ্ধ মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কীর্তি সম্ভবত সবচেয়ে ভালোভাবে লিখে গেছেন কিংবদন্তি বাঙালি কবি অন্নদাশঙ্কর রায়। তিনি লিখেছেন—
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’...
তরুণ এবং যুবসমাজের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনুপ্রেরণার নাম। জীবন-সংগ্রামের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ও আদর্শের প্রতীক; অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কারিগর, উদার ব্যক্তিত্ব, সফল রাজনীতিবিদ। আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, বাগ্মিতা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সাহসিকতা, মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা ও ত্যাগ মুগ্ধ করেছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে। তবে বেশি মুগ্ধ করেছে তরুণ ও যুবসমাজকে। ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও জাতির স্বার্থে সংগ্রাম করতে গিয়ে বার বার কারাভোগ করেছেন। তার পরেও দমে যাননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের জন্য লড়াই করেছেন। যে কারণে জাতির পিতার আদর্শকে বুকে নিয়ে তরুণ আর যুবসমাজই পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে লালন করে একটি সোনার বাংলাদেশ গড়তে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আজও তরুণ-যুবসমাজকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তাঁর সেই ভাষণ সাড়ে ৭ কোটি মানুষের প্রেরণা জাগানিয়া বজ্রকণ্ঠবাণী। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতর থেকে ২৩ বছরের সুদীর্ঘ শোষণ-উৎপীড়নের ইতিহাসের ক্যানভাস তিনি মেলে ধরেছিলেন মাত্র ১৯ মিনিটের ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদী অথচ অসাধারণ রাজনীতির ভাষা-কৌশলে। এমন মুগ্ধতায় বাঙালিকে এর আগে বা পরে কখনো আচ্ছন্ন হতে দেখেনি কেউ। কাজেই এ ভাষণই স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের আরেক নাম। এটাই ধ্রুব সত্য।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন বাংলার মানুষকে মুক্তি দিতে। বাংলার মানুষের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার জন্য ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। তাঁর এই সংগ্রামী জীবন তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়। এ আদর্শ নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। আমি ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে রাজনীতি করতে গিয়ে অসংখ্য মামলা-হামলা এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। ছাত্রজীবনে জেলও খেটেছি বহু বার। জেলখানার দিনগুলোতেও আমি বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করেছি। প্রতিটি মুহূর্তেই জাতির পিতাকে রেখেছি হৃদয়ের মণিকোঠায়।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তাঁর আদর্শ শুধু যে বুকে ধারণ করেই নয়, তা বাস্তবায়নেও নিরন্তর ছুটে চলতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধু বলতেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। তাঁর আদর্শ বুকে নিয়ে অতীতের মতো করোনার এই সংকটময় দুর্যোগেও সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, করোনাকালে একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না। তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা সবাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায়-মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়াব। এই কর্মসূচি সর্বদা চলমান রাখতে হবে।
শোষিত-বঞ্চিত বাঙালিকে একটি সার্বভৌম ভূখণ্ড উপহার দিয়ে ইতিহাসের মহানায়ক হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কিন্তু দুর্ভাগ্য। স্বপ্ন দিয়ে গড়া দেশে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে খুন হন আমাদের জাতির পিতা। স্বাধীনতা এনে দেওয়ার মাত্র আড়াই বছরের মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। এর ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জাতি হারিয়েছে তার হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে। এখন সেই শোকের মাস। আগস্ট এলেই মনে পড়ে যায় ভয়াবহ সেই স্মৃতি, যা আমাদের বেদনার্ত করে তোলে। শোকের মাসে চিরঞ্জীবী এই মহান নেতাকে স্মরণ করি শ্রদ্ধাভরে।
লেখক : সভাপতি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ