মানুষ এনটিভিকে বিশ্বাস করে
‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ স্লোগান নিয়ে এনটিভির জন্ম। আর এই আগামীর পথে চলতে চলতে সাফল্যের সঙ্গে ১৭ বছর পার করেছে বেসরকারি এই স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল। প্রতিষ্ঠানটি এখন আরো ঋদ্ধ, আরো প্রাণচঞ্চল ও আরো গণমুখী। ৩ জুলাই ১৮ বছরে পা রাখছে এনটিভি।
২০০৪ সালে এনটিভিতে প্রযোজক হিসেবে যুক্ত হই। বর্তমানে এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগে সহকারী অনুষ্ঠান মহাব্যবস্থাপক পদে আছি। অনুষ্ঠান বিভাগের কাজ হচ্ছে ফিকশন ও নন-ফিকশন কাজগুলো পরিচালনা করা। যেমন—বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণ হচ্ছে নন-ফিকশন আর ফিকশন হচ্ছে, যেমন নাটক। একটি অনুষ্ঠান কেমন হবে, অনুষ্ঠানের নাম কী হবে, দর্শক কেন এটি দেখবে, এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সামাজিক দায় কতটা পালন করা হবে—এমন হাজারও বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করে একটি অনুষ্ঠান শুরু করি। স্টুডিওতে বসে যেমন অনুষ্ঠান হয়, আবার আউটডোরেও হতে পারে, সেটি অনুষ্ঠানের ধরনের ওপর নির্ভর করে।
আর নাটকের বেলায় আমরা বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখি। প্রথমত, নাটকের গল্প যেন সুন্দর পরিচ্ছন্ন হয়, যেখান থেকে মানুষ কিছু শিখতে পারবে। শিশুরা যেন নাটকটি দেখতে পারে, রক্ত বা অশ্লীল শব্দ যেন না থাকে। নাটকটিতে দর্শক যেন পূর্ণ বিনোদন পান, পাশাপাশি সামাজিক মেসেজ যেন তাতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, নাটকের সংলাপ, চিত্রনাট্য ও গল্পের চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচনসহ নাটকের পুরো বিষয়টি আমরা খেয়াল রাখি।
অসংখ্য সফলতা রয়েছে আমাদের। এর মধ্যে আমি বলব, অনেক শিল্পী, নির্মাতা, উপস্থাপক, সংগীতশিল্পী উপহার দিয়েছে এনটিভি। এনটিভিতে নাটক প্রচার হলে একজন শিল্পী বা নির্মাতার জন্য অনেক ভালো হয়, তাঁদের কাজ অন্য টিভিতে প্রচার করতে সহজ হয়। আমাদের নাটক সব সময় দর্শক পছন্দ করেন। আমাদের নাটকের মধ্য দিয়ে সামাজিক সম্পর্ক আরো মজবুত হয়। বাড়তি কোনো ভাঁড়ামি নেই, নোংরামি নেই। যে কারণে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে তা দেখতে পারেন।
রিয়েলিটি শোতে অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে এনটিভির। এমনকি বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো করার পর অন্যান্য টিভি চ্যানেলও তা করেছে। অনেকগুলো অনুষ্ঠান এখনো মানুষের মুখে মুখে আছে। স্বাস্থ্য, বিনোদন, ক্রীড়া, সংগীত, ধর্ম ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে সব শ্রেণির দর্শককে তুষ্ট করেছে এনটিভি। মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানের কারণে সব শ্রেণির মানুষের কাছে রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা।
অনেকেই বলেন, আমাদের চ্যানেল দেখলে চোখে শান্তি পায়। এই চোখে শান্তি পাওয়ার জন্য টিভি স্ক্রিনটা পরিষ্কার দেখাতে হয়। সে জন্য আমাদের দক্ষ কলাকুশলী রয়েছেন। পাশাপাশি রয়েছে টিমের মধ্যে সমন্বয়। কারণ, পর্দায় যখন পরিচ্ছন্ন দেখা যাবে, সেখানে লাইটম্যানকে যেমন পরিকল্পিত লাইট করতে হবে, তেমনি ক্যামেরাম্যানকে সঠিক এক্সপোজার দিয়ে তা ক্যামেরায় ধারণ করতে হবে। আবার শিল্পীর মেকআপটাও সঠিক হওয়া চাই। গ্রাফিক্স টিমের মানানসই গ্রাফিক্স চাই। সব মিলিয়ে পুরো টিমের সমন্বয়টা অনেক বেশি প্রয়োজন, যেটা আমাদের আছে। অনুষ্ঠান ও নাটকের মতো আমাদের নিউজও জনপ্রিয়। নির্মোহ, সত্য খবর পরিবেশনের জন্য দেশের মানুষ এনটিভিকে বিশ্বাস করেন।
আমাদের বড় সফলতা হচ্ছে, স্বাধীনভাবে মেধাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাই এখানে। ভালো কোনো পরিকল্পনা নিয়ে কেউ এলে তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়। আমাদের কর্তৃপক্ষ সেই স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে। তাঁদের আস্থাভাজন আমরা, আমাদের ওপর কোনো ধরনের খবরদারি নেই। যে কারণে বিশ্বাসের সঙ্গে আমরা পরিকল্পনা করতে পারি।
তবে এই সফলতা একদিনে আসেনি। তার জন্য রয়েছে অনেক পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয়। আপনারা জানেন, আমাদের অফিসে দুবার আগুন লেগেছিল। অনেক কিছু তখন নষ্ট হয়ে যায়। তখনো আমরা সব কাজ চালিয়েছি, যেন টিভির পর্দায় কোনো প্রভাব না পড়ে। এনটিভি যখন যাত্রা শুরু করে, তখন থেকেই আমাদের প্রযুক্তি খুব উন্নত ছিল, আমরাও চেষ্টা করেছি বিশ্বমানের কাজ করতে। যে কারণে শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরে আমাদের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। টিভি চ্যানেলের কাজগুলো হচ্ছে টিমওয়ার্ক। আমরা সবাই সম্মানের সঙ্গে কাজ করছি।
‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ স্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ফিকশন, নন-ফিকশন, নিউজ, স্ক্রিন সবখানে আমরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে চাই। মানসম্পন্ন কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে থাকতে চাই। বিনোদনের পাশাপাশি সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই।
লেখক : সহকারী অনুষ্ঠান মহাব্যবস্থাপক, এনটিভি