সংকট নিরসনে জনগণকে সরকারের পাশে থাকতে হবে
এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করাই দেশের জনগণের দায়িত্ব। তাছাড়া তো তাদের কাছে বিকল্প কিছু নেই। প্রেসিডেন্ট বা কোনও একক ব্যক্তি তো আসলেই সংকট নিরসন করতে পারবে না। এতে সব শ্রেণির মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ে গেছে। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ নিয়ে যদি সবাই ব্যস্ত থাকে, তাহলে তো আসলেই সংকট কখনও নিরসন হবে না বা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।
আমি যেটা মনে করি, নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা শ্রীলঙ্কানদের জন্য ইতিবাচক দিক। পার্লামেন্ট সদস্যরা সবাই মিলেই তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছে। নতুন প্রেসিডেন্ট হয়তো অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাঁর দল শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রায় ৩৪ বছর শাসন করেছে এবং তিনি ছয় বার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ হিসাবে তাঁর অনেক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে।
কিন্তু আমরা জানি যে শ্রীলঙ্কায় অভ্যন্তরীণভাবে এবং এর বাইরের কিছু শক্তি সহিংসতা ও অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছে, সেটি সত্য। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে বা জনগণের কোনও একটি নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিটাকে মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু যে কোনও দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন সবারই তো ধৈর্য ধারণ করা উচিত।
আমি মনে করি, শ্রীলঙ্কা যেভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে, এটার আসলে কোনও বিকল্প ছিল না। পার্লামেন্টের যাঁরা বিরোধী দলে আছেন এবং যাঁরা সরকার দলে আছেন, তাঁরা সম্মিলিতভাবেই তাঁদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন। এটি গ্রহণ করে শ্রীলঙ্কার জনগণের উচিত তাঁদের দেশের যে গভীর অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
রনিল বিক্রমাসিংহে একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। পার্লামেন্টের অধিকাংশ সদস্যদের সমর্থনেই যেহেতু তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, সেহেতু আমি মনে করি, শ্রীলঙ্কাতে এখন বর্তমানে ও রকম রাজনৈতিক সংকট বা গ্যাপ নেই। এই মুহূর্তে বিশ্বের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং শ্রীলঙ্কার জনগণের উচিত সরকারকে সহযোগিতা করা।
অবশ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও আগেই শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। শ্রীলঙ্কা এমন একটি দেশ, যেটি আন্তর্জাতিকভাবে অনেক সমাদৃত। শ্রীলঙ্কার জনগণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি সাধন করেছিল। এ দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই গৃহযুদ্ধ মোকাবিলা করছে। একটা দেশ যখন এ রকম সমস্যায় জর্জরিত হয় বা এ রকম সংকটে পড়ে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো নিজেদের মধ্যকার সব রকমের স্বার্থের দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে বৈশ্বিক শান্তি বা স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে শ্রীলংকার পাশে আরও আগেই দাঁড়ানো উচিত ছিল। এখন আরও বেশি করে তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত। এক সময় তাঁদের বক্তব্য ছিল যে শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক শূন্যতা বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজমান। কিন্তু নতুন সরকার হওয়ার পর সেই পরিবেশ এখন নেই। এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে দ্রুত শ্রীলঙ্কার পাশে এসে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে শ্রীলঙ্কার এই সংকট নিরসনে কাজ করা।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য