সম্মেলন
বাংলাদেশে গৌরবময় ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলন
এখন থেকে ১২৮ বছর আগে ব্রিটিশ নাগরিক উইলিয়াম র্যান্ডাল ক্রেমার ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সংস্থাটির বর্তমান সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে। বর্তমানে সংস্থাটির সদস্য সংখ্যা ১৭০টি। বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘের পর এত বেশি সংখ্যক দেশের এমন আরেকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের নজির খুবই কম।
এখানে এ বিষয়ে আমাদের জন্য এই মুহূর্তে কমপক্ষে তিনটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। তারমধ্যে প্রথমটি হলো বাংলাদেশ এ সংগঠনটির একটি অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ সদস্য, দ্বিতীয়ত সংস্থাটির বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন বর্তমান বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদের একজন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সাবের হোসেন চৌধুরী। তৃতীয়টি হলো সংস্থাটির ১৩৬ তম সম্মেলনটি বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এটি যে হঠাৎ করে হচ্ছে এমনটি নয়। বাংলাদেশে যে এ সম্মেলনটি হবে তা আরো দুই বছর আগেই জানা গিয়েছিল। যেমনটি ১৩৭তম সম্মেলনটি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ায় এবং ১৩৮তম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়, যা ২০১৭ সালেই অর্থাৎ দুবছর আগেই জানা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের এবারের ১৩৬তম গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। সম্মেলনে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের ৬৫০ জন পার্লামেন্ট মেম্বার, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ প্রায় দেড় হাজারের অধিক অংশগ্রহণকারী এতে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিবেন। ১-৫ এপ্রিল পাঁচদিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে । বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে দক্ষিণ প্লাজায় আজ এ সন্মেলনের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শিশুদের নিয়ে কাজ করা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।
একটি দেশের নির্ধারিত সীমার মধ্যেই তাদের দেশের পার্লামেন্টের বিভিন্ন সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাথমিকভাবে এ সংগঠনটির যাত্রা শুরু হলেও এখন এটি একদিকে যেমন সারাবিশ্বের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, অপরদিকে বর্তমানে তা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে সংস্থাটি কাজ করে থাকে।
এ বছর বাংলাদেশে যে সময়ে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেসময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দেশে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বড় একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যেহেতু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টেই হলো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস, কাজেই সন্ত্রাস দমনেও সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করে। আর সেটি যে সম্ভব হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারই ভিতর দিয়ে বাংলাদেশে এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীগণের অবদানও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ তাঁরা ইচ্ছে করলে বাংলাদেশে নিরাপত্তার অজুহাতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠান আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করতে পারতেন।
এ বিষয়টির সঙ্গেও সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক একটি সমর্থন লক্ষণীয়। কারণ জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসবাদ এখন আর একক কোনো দেশের সমস্যা নয়, এ সমস্যা এখন বিশ্বময়। কাজেই বিশ্বনেতৃত্বও তাই একে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন এদের সমূলে উৎপাটন করতে একমত হবেন। সম্মেলনের কোনো না কোনো অংশে অবশ্যই বর্তমান বিশ্বের জন্য একটি আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত বিষয়টিকে নিয়ে নির্ধারিত কিংবা অনির্ধারিত যেকোনো ভাবেই হোক আলোচনা ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে ।
অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে একদিকে যেমন বিশ্বে বর্তমানে বাংলাদেশের মান-মর্যাদা ধরে রাখা সম্ভব হবে অপরদিকে এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও একটি বড় সাফল্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। তারই ধারাবাকিতায় বর্তমানে বাংলাদেশ কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েমনের (সিপিএ) এরও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালের সরকারের আমলেও এর প্রতিফলন লক্ষ্ করা যায়। তখন বাংলাদেশে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনের সব প্রস্ততি সম্পন্ন করলেও পরবর্তী সময়ে সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকায় আর সেটি করা সম্ভব হয়নি। কাজেই ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩৬তম আইপিইউ সম্মেলনের সাফল্য কামনা করি।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়