ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি
একজন গোপাল ভাঁড়ের আত্মকাহিনী
সালাম। আমার নাম গোপাল ভাঁড়। এই নামে আপনারা অনেকেই একজন মানুষকে চেনেন। তার কথা শুনলেই আপনাদের হাসি পায়। গোপাল ভাঁড় রাজার চাকরি করত। বিভিন্ন কথা, আচরণ ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মানুষকে হাসাত। এ জন্য সবাই তাকে মনে রেখেছে। কারণ, সবাই হাসাতে পারে না। আমি পারি। তাই আমি ভাঁড়। যাই হোক, আমি এখন জেলে আছি। যাতে নিরাপদে ভাঁড়ামি করতে পারি।
২. আমার বয়স বেশ ভালো হয়েছে। সারাটা জীবন আমি স্কুলের শিক্ষকতাই করেছি। আপনারা আশ্চর্য হবেন শুনে, আমার মতো হাজার হাজার মানুষ স্কুলের শিক্ষকতা করে। যদিও আজকাল স্কুলের শিক্ষকের যা মান, তাতে বোঝার উপায় নেই, এই শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকের প্রয়োজন হয় কি না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথেষ্ট!
আমি নিজেই ৩০-৪০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। সুযোগ পেলে আগামীতেও করব। তবে এই ভাঁড়ামি যেভাবে আমাকে জনপ্রিয় করেছে, তাতে ফুল টাইম এই পেশায় চলে যেতে হয় কি না বলা যাচ্ছে না। জেলের ভেতরেও একধরনের ভাঁড়ামির স্কুল চলে। আমিও এখন তার সঙ্গেই যুক্ত।
৩. তবে শিক্ষকতা ছাড়াটা সহজ না। যেমন ছাড়াটা সহজ নয় দেশ। আমার নাম দেখে বুঝতে পারছেন, আমি একজন হিন্দু।
আমার বিরুদ্ধে নালিশ হচ্ছে, আল্লাহ-খোদার নামে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছি। সে জন্য আমাকে শাস্তি হিসেবে অনেকের সামনে ভাঁড়ামি করতে হয়েছে। গোপাল ভাঁড় হিসেবে আমি ওটাকে আপনাদের আনন্দদানের একটা সুযোগ মনে করেছি। আমি একটা বৃদ্ধ মানুষ। কান ধরে ওঠবস করছি, সব ক্ষমতাসীন মানুষের সামনে, এটি একটি বেশ নয়নাভিরাম দৃশ্য। এতে নিশ্চয় আপনাদের অনেকের আনন্দ লাভ হয়েছে। আপনারা আশা করি হেসেছেন! এর জন্য যারপরনাই আমি কৃতজ্ঞ। কারণ, ভাঁড়ের কাজ তো মনোরঞ্জন করা, আমি সেটা করার চেষ্টা করেছি।
৪. আমার এই কান ধরে ওঠবস করার দৃশ্য এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে, আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে আদালতে চালান করে দেওয়া হয়। যাঁরা আমাকে এই কাজটা করার সুযোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কারণ, কজনের কপালে এত বড় সুযোগ আসে! খেয়াল করে দেখুন, সাকিব আল হাসানকে যতজন চেনে, আমাকেও দেশের ততজন চেনে। যে এত জনপ্রিয়, তাকে কি আমরা সফল একজন ভাঁড় বলতে পারি না? এই জন্য যাঁরা আমার জন্য মিছিল করেছেন, মিটিং করেছেন ও বলেছেন, আমাকে আরো ভাঁড়ামি করতে হবে। তাঁদের আমি ধন্যবাদ জানাই।
৫. কিছু মানুষ এতই ভাঁড়ামি পছন্দ করেছে যে আমাকে ঢাকায় ডেকে পাঠিয়েছে। তাদের বক্তব্য আমি দীর্ঘদিন ধরে ভাঁড়ামি করছি, কিন্তু জানাইনি তাদের। এতে তারা ক্ষুব্ধ। মনে রাখবেন, দেশে আমি একমাত্র ভাঁড় নই। আমার মতো হাবাগোবা গোবেচারা ভাঁড়ের দিকে এত কেন নজর সেটা বোঝা গেল না। খেয়াল করে দেখুন, দেশের যে ‘ভাঁড় উন্নয়ন কমিশন’ আছে, বেশির ভাগ ভাঁড়ের খবর তারা রাখে না। কিন্তু আমার প্রতি তাদের এতই ভালোবাসা, আমাকে আটকে রেখে সব ভাঁড়ামি দেখতেছেন অন্য সব ভাঁড়কে ভুলে।
৬. আমি এখন কই? আমি এখন জেলে। পুলিশ দিয়ে ধরে এনে মহাসম্মানের সঙ্গে রেখেছে আমাকে। সরকারের ওপর মহল আমার ব্যাপারে অত্যন্ত উৎসাহী ও আগ্রহী। তাদের দাবি, আমি ভাঁড় হিসেবে বাকি জীবন যেন জেলের মধ্যে কাটাই। যাতে যখনই কারো রস গ্রহণের প্রয়োজন হবে আমাকে মঞ্চস্থ করা যাবে। আমি কান ধরে ওঠবস করব, চারিদিকে আনন্দ প্রবাহিত হবে। এ রকম কপাল নিয়ে আর কজন জন্মায় বলেন!
দেশ ও জাতি চায়, আমি ভাঁড় হিসেবে বাকিটা জীবন অতিবাহিত করি। এই জন্য যারা আমাকে জেলে ঢুকিয়েছেন তাঁদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা। ভাঁড়ামি করে এত সম্মান কম মানুষই পেয়েছেন আমাদের ইতিহাসে। আমি নিয়মিত ভাঁড়ামির প্র্যাকটিস করছি। সকাল-বিকেল কান ধরে ওঠবস করি। এই যে দেখেন, কান ধর, ওঠবস; কান ধর, ওঠবস; কান ধর, ওঠবস।
লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক