কুর্দিস্তানের কথা
রোশানা, এক নারীর মর্মস্পর্শী মৃত্যু আখ্যান
আমি আমার আগের একটি লেখায় কুর্দিস্তানের ইয়াজিদি সম্প্রদায় সম্পর্কে লিখেছিলাম। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সাল মিলে প্রায় ১৩ মাস আমরা কুর্দিস্তানে জাতিসংঘ মিশনে মোতায়েন ছিলাম। যদিও আমাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল ‘তেলের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির আওতায় আগত খাদ্যদ্রব্য ইরাকের বিভিন্ন স্থানে এসকর্ট করে পৌঁছে দেওয়া, আমাদের আর একটি দায়িত্ব ছিল এলাকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বাগদাদে অবস্থিত সদর দপ্তরে লিখিত প্রতিবেদন প্রদান করা। আমরা এটাকে সংক্ষেপে বলতাম ‘এফএসএ’ বা ফিল্ড সার্ভে অ্যাসেসমেন্ট।
আমরা তখন উত্তর ইরাকের একেবারে উত্তরের শহর জাকোতে মোতায়েন ছিলাম। একদিন মর্নিং ব্রিফে আমাদের মিশনের জাকো প্রধান মিস্টার স্টিগ বললেন, কানিমাছিতে এফএসএর উদ্দেশ্যে যেতে হবে। নামটা আমাদের নিকট অনেক পরিচিত মনে হলো। কেননা আমরা কানামাছি খেলার সময় একটি ছড়া বলে থাকি। একজনকে চোখ বেঁধে দেওয়া হয়, সে অন্য বন্ধুদের ধরার চেষ্টা করে। অন্যরা মাছির মতো তার গায়ে টোকা দেয়, আর সমস্বরে বলতে থাকে ‘কানামাছি ভোঁ-ভোঁ, যারে পারি তাকে ছো।’
জাকো থেকে ঠিক পূর্ব দিকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে কুর্দিস্তানের আমাদিয়া জেলায় কানামাছি গ্রামটি অবস্থিত। পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা, আঁকাবাঁকা ও বন্ধুর। শীতকালে সমস্ত এলাকাই বরফে ঢেকে যায়। তখন আর এসব অঞ্চলে যাওয়া যায় না। উক্ত সময়ে কানিমাছি অঞ্চলটি পরিণত হয় পিকেকে গেরিলাদের স্বর্গরাজ্যে।
যাত্রার দুই ঘণ্টার মধ্যেই আমরা কানিমাছি গ্রামে চলে গেলাম, রাস্তার দুধারে আপেলের বাগান। পাহাড়গুলো গাছপালাশূন্য। একটি ভয়ংকর নীরবতা চারপাশে। তারপর হঠাৎ করেই আবির্ভূত হলো একটি ছোট গ্রাম। আধাপাকা বাড়ি। চারপাশে কুর্দিস্তানের ট্র্যাডিশনাল পোশাক পরে স্থানীয়রা কাজ করছে। আর অদূরে? কী যেন একটি একতলা বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে। পাশেই টাঙানো একটি সাইনবোর্ড-রোশানা হাসপাতাল। এমন নির্জন স্থানে এমন একটি হাসপাতাল। জনসংখ্যা একেবারেই কম। তা হলে কী উদ্দেশ্য এই হাসপাতাল নির্মিত হলো? কানিমাছি গ্রামটি তুরস্কের সীমান্তরেখা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
কী ঘটেছিল এখানে? লন্ডন শহরের স্মিথফিল্ডে বার্থোলোমিও নামে একটি স্পেশালাইজড হাসপাতাল রয়েছে। ১১২৩ সালে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মেরিগোল্ড কার্লিং ছিলেন ওই হাসপাতালের একজন কনসালট্যান্ট প্যাথলজিস্ট। ড. মেরিগোল্ড কার্লিংয়ের মেয়ে ছিলেন রোশানা। ১৯৯১ সালে রোশানার বিয়ে হয় নিক ডেলা কাসা নামক একজন সাংবাদিকের সঙ্গে। মিস্টার নিক ছিলেন সাহসী সাংবাদিক। এরই মধ্যে নিক ১৮ মাস ধরে মোজাম্বিকের রেনামো বিদ্রোহীদের হাতে বন্দি ছিলেন। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানিয়েছিলেন, যা পরে পুরস্কার লাভ করেছিল। রোশানা তাঁর স্বামী নিকের সঙ্গে তিব্বত ও আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন। নিকের এই সাহসী পদক্ষেপ তাঁকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং তিনি বিবিসির জন্য ইরাকি কুর্দিদের ওপর একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানানোর মনস্থির করলেন।
যে কথা সেই কাজ। ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে রোশানা ও তাঁর স্বামী নিক উত্তর ইরাক তথা কুর্দিস্তানের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন। এবার তাদের সঙ্গে আরো একজন যোগ দিলেন। তিনি ছিলেন চার্লি ম্যাক্সওয়েল, নিকের ভগ্নিপতি। চার্লি ছিলেন স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা। তিনি একজন সেনা কর্মকর্তা এবং ১২ বছর চাকরি করেছেন রয়েল রেজিমেন্ট অব স্কটল্যান্ডের তৃতীয় ব্যাটালিয়নে। পদাতিক এই ব্যাটালিয়নকে ব্ল্যাক ওয়াচ বলা হতো। কুর্দিস্তান যাওয়ার সময় চার্লি একজন প্রযোজকের ভূমিকায় ছিলেন। তিনি ভাবলেন, ইরাকি কুর্দিদের ওপর ছবি বানিয়েই তিনি অন্য দুজনের সঙ্গে ইংল্যান্ড ফিরে যাবেন।
২১ মার্চ ১৯৯১ সালে রোশানা অন্য দুজনের সঙ্গে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত হাক্কারী প্রদেশের ইউকসেকোভা শহরে উপস্থিত হন। ইউকসেকোভা শহরটি উত্তর-পশ্চিম ইরান ও তুস্কের পূর্বাঞ্চলের সীমান্তরেখা বরাবর অবস্থিত। দক্ষিণেই অবস্থিত কুর্দিস্তানের আমাদিয়া জেলার কানামাছি গ্রাম। তাদের কুর্দিস্তানে প্রবেশের কোনো অনুমতি ছিল না। ফলে দালাল কিংবা চোরচালানিদের সহায়তায় তারা তুরস্ক-কুর্দিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিল। পেয়েও গেলেন একজনকে। তিনি হলেন হাশেম জিবজি।
হাশেম জিবজি একজন মৃদুভাষী লোক। দেখলেই মনে হবে একজন সাক্ষাৎ ভদ্রলোক। কিন্তু ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে রয়েছে এক ভয়ংকরতা, যা তাদের তিনজনের কেউই আঁচ করতে পারেননি। জিবজি তুরস্কের কুর্দি। তিনি বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য সীমান্ত এলাকার দুপাশে পালিয়ে বেড়ান। তিনি একজন দুর্ধর্ষ চোরাকারবারি। সব সময় এসএমজি নিয়ে থাকেন, যা ওই অঞ্চলে একটি সাধারণ ব্যাপার। তিনি ইরান থেকে হেরোইন পাচার করে তুরস্কে নিয়ে যান, আর তুরস্ক থেকে পর্নো ছবি পাচার করে ইরানে নিয়ে যান। অস্ত্র, পশু, তামাক ইত্যাদি সবকিছু তিনি পাচার করেন।
২৩ মার্চ ১৯৯১ সালে জিবজি বাকি তিনজনকে নিয়ে ইউকসেকোভা থেকে সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। উদ্দেশ্য ইউকসেকোভা থেকে হারকি এবং তারপর কানিমাছি গমন। প্রধান রাস্তাকে অবশ্যই এড়াতে হবে। কেননা, তুরস্কের সেনাবাহিনী রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়েছে। ২৩ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত তারা বরফজলের ওপর দিয়ে হেঁটে বেরিয়েছেন, অসমতল শিকড়ের ওপর ঘুমিয়েছেন এবং সামান্যই খেতে পেরেছেন। এটা তাঁদের শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। তুরস্ক ও কুর্দিস্তানের উক্ত সীমান্ত একটি নদী দ্বারা চিহ্নিত। তখন প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। আর ওই অঞ্চলে শীতকালেই প্রচুর বৃষ্টি হয়,আর নদীর পানি প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে যায়। নদীর ওপর অনেকগুলো ব্রিজ ছিল, যা তুরস্কের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ধ্বংস করে দিয়েছে।
২৭ মার্চ ১৯৯১ সালে কোন উপায়ন্তর না দেখে জিবজি তাদের নিয়ে হারকি গ্রামে তার এক বন্ধুর বাড়িতে যায়। বন্ধুটির নাম ছিল ওবায়দুল্লাহ। তিনি জিবজিকে এমন অবস্থায় তাদের নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে নিষেধ করেন। উত্তরে ধূর্ত জিবজি বল্লেন ‘মাইন্ড ইউর অউন বিজনেস’।
২৮ মার্চ ১৯৯১ সালে জিবজি তাদেরকে নিয়ে সামনে এগুতে থাকে। সামনে আসতেই তারা নদীর তীরে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়। নদীর পাড় থেমে সামনে এগুতে থাকে। নদীর বাঁক দিয়ে উত্তরে হাঁটতে হাঁটতে পুনরায় তুরস্কে প্রবেশ করে। বিধিবাম।
২৯ মার্চ ১৯৯১ সালে, শুক্রবার, জিবজি তাদের স্টুনি নামক একটি জায়গায় নিয়ে আসে। ইতিমধ্যে তাঁরা ২৪ ঘণ্টায় ১০ মাইল হেঁটেছে। এ মুহূর্তে জিবজি তাদের ছেড়ে চলে যেতে চায়। সে তার পাওনা দাবি করে। শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। এক পর্যায়ে জিবজি তার এসএমজি তাক করে। নিক এসএমজির ব্যারেলটি ধরে ফেলেন। শুরু হয় ধ্বস্তাধ্বস্তি। হঠাৎ করেই গুলির শব্দ। ঢলে পড়ে নিক। জিবজি এবার তার গান তাক করে চার্লির দিকে। ফায়ারও করে এক রাউন্ড। কিন্তু হতভম্ভ চার্লি দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর দ্বিতীয় রাউন্ড ফায়ার। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চার্লি। আর রোশানা? দৌড় পাহাড়ের পাশে আড়াল নেয় রোশানা। গুলি করে জিবজি। কিন্তু মিস হয় গুলিটি। আর একবার গুলি করার চেষ্টা করে জিবজি। কিন্তু তার এসএমজি জ্যাম হয়ে যায়। পালাতে সক্ষম হয় রোশানা। পরের দিন জিবজি পুনরায় স্পটে আসে। কিন্তু রোশানাকে আর খুঁজে পায় না।
ওই দিকে লন্ডনে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মিসেস কার্লিং। দুই মাস তাঁর মেয়ে রোশানা ও অন্য দুজনের কোনো খবর তিনি পাচ্ছেন না। এক অজানা আশঙ্কায় তিনি শঙ্কিত ছিলেন। তারপর মে, ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি কোনো একসময় একজন পি কে কে গেরিলা, যে কি না তার দল থেকে পালিয়ে এসেছে, চার্লির বর্ডিং কার্ড এবং তাঁর পাসপোর্টের একটি পাতা নিয়ে কানিমাছি অঞ্চলে আসে। তুরস্কের হারকি গ্রামে নদীর পাড়ে দুটো লাশ পড়ে আছে, তাও সে রিপোর্ট করে।
মিসেস কার্লিং এ খবর জানতে পারেন। তৎক্ষনাৎ তিনি সরকারের নিকট প্রার্থনা করেন। রয়েল মেরিন সদস্যরা দুটো লাশ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে মিসেস কার্লিংকে জানানো হয় এই বলে যে দুটো লাশের মধ্যে একটি নারীর লাশ। তিনি নিশ্চিত হতে চেষ্টা করলেন এটা তাঁর মেয়ে রোশানার লাশ। পরে দেখা গেল দুটো লাশই পুরুষের, একটি নিকের আর অন্যটি চার্লির।
তবে রোশনা কোথায়, সে কি বেঁচে আছে? এক ভয়াবহ মানসিক বিপর্যয়ে মাঝে কাটাতে লাগলেন মিসেস কার্লিং। এক সময় চলে এলেন কুর্দিস্তান। তিনি কুর্দিস্তানের তৎকালীন নেতা মাসুদ বারজানির সঙ্গে দেখা করেন। মাসুদ বারজানি এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার জন্য তার দল কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন নেতা শিয়ামান্দ বান্নাকে আদেশ করেন।
বান্না খোঁজখবর নিয়ে জিবজির বন্ধু ওবায়দুল্লার বাসায় হানা দেন। রোশানার টেপ রেকর্ডার ও নিকের সিগারেট লাইটার ওবায়দুল্লার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। জানা যায় যে জিবজি ইরান পালিয়ে গেছে। ইরানের সীমান্ত এলাকা থেকে ১৫ মাইল ভিতরে অবস্থিত একটি রিফিউজি ক্যাম্প থেকে জিবজিকে ধরে নিয়ে আসে কুর্দিস্তানের পেশমারগা সৈন্যরা। তাকে অনেক শাস্তি প্রদান করা হয়, ২৪ ঘন্টা উপোস রাখা হয়। কুর্দিদের নেতা মাসুদ বারজানি নিজেও জিবজির সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু সে একই কথা, ‘আমি পুরুষ দুটোকে গুলি করে মেরে ফেললেও মেয়েটিকে আমি মারিনি।’
তাহলে কি ঘটেছিল রোশানার ভাগ্যে? নভেম্বর ১৯৯১ পর্যন্ত রোশানার ভাগ্যে ছিল রহস্যাবৃত। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। আসলে রোশানার মৃতদেহ কয়েক মাস আগেই কুর্দিস্তানের পেশমারগা সৈন্যরা নদীর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখেছিল। শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল এবং গায়ে রক্তের দাগ ছিল। তারা মনে করেছিল, এটা হতে পারে পিকেকে মহিলা গেরিলার লাশ। তারা দেহটিকে নদীর কিনার থেকে গড়িয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। ১৯৯১এর নভেম্বরে এসে মাসুদ বারজানির নির্দেশ শুনে সৈন্যরা ওই কথা মনে করল। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
সব শুনে রোশানার মা মিসেস কার্লিং মেনে নিলেন যে ঐটাই ছিল তাঁর মেয়ে রোশানা। কিন্তু তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না যে জিবজি তার মেয়েকে হত্যা করেছে। তাঁর মতে জিবজি নয়, অন্য কেউ তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছে।
কি হতে পারে রোশানার ভাগ্যে? কারা তাকে হত্যা করতে পারে? ডিটেকটিভ, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর, সবই কাজে লাগিয়েছেন মিসেস কার্লিং। স্টুনি থেকে ৪ মাইল উত্তরে কেমন করে রোশানার লাশ পাওয়া গিয়েছিল,তাও ছিল রহস্যাবৃত। ডিটেকটিভরা ভাবল ৩টি সম্ভাবনার কথা: (১) জিবজির গুলিতে শেষমেশ মারা গিয়েছিল রোশানা। গুলিতে তিনি আহত হয়েছিলেন, দৌড়ে ৪ মাইল উত্তরে চলে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন রোশানা। তারপর একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। (২) পিকেকে গেরিলারা হত্যা করেছে রোশানাকে। এলোমেলো ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে তুরস্কের ইনফরমার ভেবে তারা তাকে হত্যা করে। (৩) আর সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য সম্ভাবনাটি হলো তুরস্কের সৈন্যরাই রোশনাকে হত্যা করেছে। মিসেস কার্লিং তা-ই বিশ্বাস করেন। ২৯ মার্চ ১৯৯১ সালে তুরস্কের সৈন্যরা পিকেকে গেরিলাদের ধাওয়া করে কুর্দিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকেছিল। তাদের দেখে রোশানা সাহায্যের জন্য চিৎকার করে এবং সৈন্যদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তুরস্কের সৈন্যরা রোশানাকে মনে করে পিকেকে মহিলা ফাইটার। তারা গুলি করে বসে। লুটিয়ে পড়েন রোশানা। তারপর সব শেষ। সৈন্যরা লাশটিকে এভাবে ফেলে চলে যায়।
কুর্দিস্তানের জাকো আদালতে এ ব্যাপারে মামলা হয়। মামলার আসামি ছিল দুজন, জিবজি ও তাঁর বন্ধু ওবায়দুল্লাহ। আদালত ইংল্যান্ডের নাগরিক রোশানা, তাঁর স্বামী নিক ডেলা কাসা এবং তার ভগ্নিপতি চার্লি ম্যক্সওয়েল, এই তিনজনকে খুন করার অপরাধে হাশেম জিবজিকে ২৬ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। আর ওবায়দুল্লাহকে বেকসুর খালাস দেয় বিজ্ঞ আদালত।
রোশানার মা মিসেস কার্লিং সর্বমোট সাত বার কুর্দিস্তান গিয়েছেন। মেয়ের বিচারের দাবিতে অনেক স্থানে ঘুরেছেন, অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, এমন কি খুনি জিবজির সঙ্গেও কথা বলেছেন।
মেয়ের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য কুর্দি সরকারের অনুমতি নিয়ে ১৯৯৫ সালে মিসেস কার্লিং কুর্দিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল আমাদিয়া প্রদেশের কানামাছি গ্রামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ডহুক অঞ্চলে ৯টি হাসপাতালের মধ্যে রোশানা হাসপাতালের স্থান তৃতীয়, বর্তমানে হাসপাতালে ৬টি বিভাগ রয়েছে। মিসেস কার্লিংয়ের চোখের জলে নির্মিত এই হাসপাতালটি এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের কানামাছি গ্রামের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র। ১৯৯৭ সালের কোনো এক সময় আমরা কানামাছি এফএসএ-এ গিয়ে হাসপাতালটি দেখতে পাই। আমি যখন এর সাইন পোস্টটির ছবি তুলি, তখন মনে হয়েছিল ‘তুলে রাখি একদিন কাজে লাগতে পারে’। সাইন পোস্টটিতে লেখা ছিল ‘রোশানা হসপিটাল : ইন কোমেরেশন অব রোশানা ডেলা কাসা’।
লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্তা, বর্তমানে এআইবিএ, সিলেট কর্মরত।