রাজনীতি
বলপ্রয়োগ এবং নিপীড়ন স্থায়ী হয় না
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা মহলে আলোচনার শেষ নেই। আছে আগাম অনেক কথাবার্তা, যদিও এসবের তেমন ভিত্তি আছে বলে অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। এর কিছু কারণও রয়েছে। যাঁরা এসব কথামালা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন, তাঁরা এগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন; অন্যদিকে তাঁরা হয়তো ঘরের কিংবা বাইরের দুশমন বলেই একটা পরিচিতি নিজেদের শরীরের সঙ্গে লেপ্টে নিয়েছেন।
প্রকৃত কথা হলো, এখন এমন একসময় পার করছি যখন মানুষের জীবন-সম্পদের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই, সম্ভ্রমের নিশ্চয়তা নেই ঘরে ও বাইরে। সব জায়গায় হাহাকার এবং ব্যর্থতায় মানুষ একদিকে যেমন দিশেহারা, অন্যদিকে সমাজও এসে দাঁড়িয়েছে ভাঙনের কূলে।
একটু খেয়াল করলে দেখব, কয়েক দিন আগেও তরুণদের মধ্যে পুলিশের চাকরিতে অনীহা প্রবলভাবে লক্ষণীয় ছিল, কেউ কেউ তো আবার এটিকে ঘৃণার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। অথচ এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন, তরুণ সমাজ, এমনকি দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া তরুণরাও দারুণ আগ্রহ নিয়ে ঝুঁকছে পুলিশের চাকরির দিকে। মানুষের মধ্যে এখন বৈধ-অবৈধ কিংবা যেনতেন উপায়ে ক্ষমতাচর্চা এবং বলপ্রয়োগের প্রবণতা বাড়ছে। সাম্প্রতিক নানা ঘটনা এর প্রমাণ বহন করছে। এর জন্য দায়ী সমাজের এবং রাষ্ট্রকাঠামোর অভ্যন্তরে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি, অন্যায়, বিচারহীনতা, প্রহসন এবং ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা।
সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো এখন ভেঙে পড়ছে, সামাজিক ন্যায়বিচারের বদলে নিষ্ঠুরতা, সাম্যের বদলে অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের স্থলে অসহিষ্ণুতা স্থান করে নিচ্ছে অনায়াসে। আমরা জানি, নিপীড়ন এবং বলপ্রয়োগ কোনোকালেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং হবেও না।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।