অসময়ের বৃষ্টি বোরোধানের জন্য শুধু অভিশাপ নয়, আশীর্বাদও
বাংলাদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ায় বৃষ্টিপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৃষ্টিপাতের ওপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন ফসলের সেচকার্য নির্ভর করে। তারমধ্যে বোরো ফসল অন্যতম। কারণ বোরো এমন একটি ফসল যার পুরোটাই সেচকার্যের ওপর নির্ভরশীল। আর বোরো ফসল অবাদের পুরো মৌসুমটিই শুষ্ক থাকে। সেজন্য সেচকার্য করার জন্য প্রচুর কৃত্রিম সেচ পদ্ধতির ব্যবহার করতে হয় যার বেশিরভাগই আবার ভূগর্ভস্থ পানির উৎস থেকে করতে হয়। এতে অর্থ, শ্রম, সময় সর্বোপরি প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়।
কিন্তু বাংলাদেশে বোরো মৌসুম অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়। সেই ক্ষেত্রে মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে কিছুটা বৃষ্টিপাত শুরু হলেও এপ্রিল থেকে আরম্ভ হয়। আর এসময় বৃষ্টিপাতের সাথে ঝড়ও হতে দেখা যায়। তবে যাই হোক না কেন এসময়ের এ অল্পবিস্তর বৃষ্টিপাতই বোরো আবাদের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখে থাকে। কারণ যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারের মাধ্যমে যে অর্থ, শ্রম, সময় এবং পরিবেশসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেখানে সামান্য বৃষ্টির ফোঁটা কৃষকের মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস সৃষ্টি হয়।
অনেক সময় দেখা যায় দেশের ভাটি কিংবা হাওরসহ অন্যান্য নিম্নাঞ্চলে আগাম স্বল্প বৃষ্টিতেই এবং পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আগাম বন্যা সৃষ্টির মাধ্যমে বোরো ফসল বিনষ্ট হয়ে যায়। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো গতবছরের (২০১৭) হাওরাঞ্চলে আগাম ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ফসল হানি করেছিল। কিন্তু সেটি ফিবছর ঘটে না এবং সেটি কেবলই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব দুর্যোগ-দুর্বিপাক নিত্যনৈমিত্তিক নয়।
কিন্তু যখন তেল-বিদ্যুৎ খরচ করে দিনের পর সেচ দিয়ে কৃষক হয়রান হয়ে যাচ্ছে তখন সামান্য বৃষ্টিও আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়। কৃষক প্রতীক্ষায় থাকে এ রকম একটি দুটি বৃষ্টির জন্য। বোরো মৌসুমের জন্য ধানের জাতভেদে সময়কাল হলো চার থেকে পাঁচ মাস। এর মধ্যে যদি দু-চারবার এমন স্বস্তির বৃষ্টির প্রাকৃতিক পানি পাওয়া যায় তবে সেটি অবশ্যই বোরো ধান চাষের জন্য আশীর্বাদ। কাজেই এ সময়ের বৃষ্টিপাত যে শুধু কৃষকের জন্য ঝড় বা বন্যার অভিশাপ নিয়ে আসে তা নয়, বেশিরভাগ সময়েই নিয়ে আসে আশীর্বাদ। আর আমরা পরিবেশ রক্ষা করে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে সেরকম আশীর্বাদপুষ্ট বৃষ্টিপাতই কামনা করি। বিধাতা তার আশীর্বাদ মানবকুলের জন্য সর্বদাই যেন দিয়ে যান।
লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়