স্ল্যাভয় জিজেক
অ্যাসাঞ্জকে আমাদের রক্ষা করা দরকার
অনুবাদ: সেলিম রেজা নিউটন
সংবাদ-প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। গত ২৭শে মার্চ ২০১৮ তারিখ থেকে বাইরের পৃথিবী থেকে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে তাঁর আশ্রয়দাতা লন্ডনের ইকুয়েডর-দূতাবাস। জুলিয়ানের ইন্টারনেট ও ফোন সংযোগ সম্পূর্ণভাবে কেটে দেওয়া হয়েছে। অতিথিদের কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। দেখা করার অনুমতি আছে শুধু তাঁর আইনজীবীদের।
এ রচনার লেখক স্ল্যাভয় জিজেক বহুবিদ্যা-বিশ্লেষক এক দার্শনিক। তিনি লিউব্লিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ সোশিওলজি অ্যান্ড ফিলসফির জ্যেষ্ঠ গবেষক, নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডিসটিংগুইশড প্রফেসর অফ জার্মান, এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কব্যাক ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যানিটিজের আন্তর্জাতিক পরিচালক। গত ২রা এপ্রিল ২০১৮ তারিখে তাঁর এই লেখাটা ছাপা হয়েছিল আরটি টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টালের সম্পাদকীয় নিবন্ধ হিসেবে।
পৃথিবীর সাথে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাঁর সুরক্ষার দাবিতে আন্তর্জাতিক পিটিশনে পাঠকরা সাক্ষর করতে পারবেন এই লিঙ্কে। জিজেকের লেখাটি অনুবাদ করেছেন সেলিম রেজা নিউটন।
আবার চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে। আর এ কাজে বেছে নেওয়া সময়টা কিন্তু খুবই সন্দেহজনক। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার গল্প যখন খবরের ওপর রাজত্ব করছে, উইকিলিকসের সাহসী প্রধানকে নিশ্চুপ রাখাটাই বোধ হয় তখন গুটিকয় ক্ষমতাওয়ালাদের জন্য দরকারি হয়ে ওঠে।
ইকুয়েডর ছোট একটা দেশ। জনপরিসর থেকে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিচ্ছিন্নতা আরো বাড়ানোর জন্য পশ্চিমা শক্তিগুলো পর্দার আড়াল থেকে যেরকম পাশবিক চাপ প্রয়োগ করেছে এই দেশটার ওপর, সেটা শুধু অনুমানই করা চলে। এখন তাঁর ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর অতিথিদের অনেককেই তাঁর সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে এক মন্থর মৃত্যু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁর ওপর যিনি প্রায় ছয় বছর পার করেছেন লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসের একটা অ্যাপার্টমেন্টের ভেতর অবরুদ্ধ অবস্থায়।
আগেও এটা ঘটেছে — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সময় — তবে অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু তখন সেটা ছিল উইকিলিকস কর্তৃক ট্রাম্প/ক্লিনটন প্রতিযোগিতার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারার মতো কিছু নথিপত্র প্রকাশের একটা প্রতিক্রিয়া। অথচ এখন তেমন কোনো অজুহাতও নেই। কেননা, এবার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-ক্ষেত্রে তাঁর “অনধিকার চর্চা”র ব্যাপারটা ছিল ইন্টারনেটে স্রেফ তাঁর মত প্রকাশ নিয়ে— ক্যাটালোনিয়া-সংকট প্রসঙ্গে এবং স্ক্রিপাল বিষপ্রয়োগ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে। কেন তাহলে এবার এই পাশবিক পদক্ষেপ? আর কেনই বা তা নিয়ে জনমতে এত কম শোরগোল?
দ্বিতীয় প্রশ্নটার ব্যাপারে এটুকু দাবি করাই কিন্তু যথেষ্ট নয় যে, অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে মানুষ ক্লান্ত হয়ে গেছে। বরং তাঁর চরিত্রহননের উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন যাবত, সুসংগঠিতভাবে, এবং ধীর গতিতে পরিচালিত প্রচারণা-অভিযানই এ ক্ষেত্রে পালন করেছে আসল ভূমিকাটা। কল্পনা যতটা নিচে নামতে পারে ততটাই নিচু স্তরে নেমে এসেছিল এই অভিযান মাস দুয়েক আগে। যাচাই না করেই ছড়ানো হচ্ছিল এমন ধরনের গুজব যে, তাঁর গায়ের দুর্গন্ধ ও নোংরা জামাকাপড়ের জন্যই আসলে ইকুয়েডরের লোকজন তাঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি চায়। [গুজবের নমুনার জন্য এই বাক্যে সংযুক্ত লিংক এবং Polipace Staff, 2018; Rojas, 2018; Schladebeck, 2018 দ্রষ্টব্য— অনুবাদক] অ্যাসাঞ্জের ওপর এসব আক্রমণের প্রথম ধাপে তাঁর প্রাক্তন বন্ধু ও সহযোগীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াতে শুরু করল যে, উইকিলিকসের শুরুটা ছিল ভালই কিন্তু পরে তা আটকে গেছে অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক পক্ষপাতের পাঁকে (তাঁর হিলারি-বিরোধিতার ঘোর, রাশিয়ার সাথে তাঁর সন্দেহজনক গাঁটছড়া ইত্যাদি)। এর পেছন পেছন এলো সরাসরি ব্যক্তিগত মানহানি। যেমন, তিনি ভ্রম-বাতুলতাগ্রস্ত ও উদ্ধত, এবং তিনি ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ-চিন্তায় আচ্ছন্ন এক মানুষ। কিন্তু এখন আমরা এসে পৌঁছেছি একেবারে প্রত্যক্ষ শরীরী স্তরের দুর্গন্ধে ও ময়লা দাগে।
কার্যসিদ্ধির অভিসন্ধিসমূহ
কী বলছে তারা? অ্যাসাঞ্জ প্যারানয়েড? ভ্রম-বাতুলতার লক্ষ্মণাক্রান্ত রোগী? স্থায়ীভাবে যাঁকে একটা ফ্ল্যাটের মধ্যে বসবাস করতে হয়, যে-ফ্ল্যাটের আবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাইক্রোফোনের ‘বাগ’ বসানো, এবং যতসব গোয়েন্দা সংস্থার সার্বক্ষণিক নজরদারির শিকার হয়ে থাকতে হয় যাঁকে— তাঁর আর উপায় কী? আত্মাভিমানী লোক সে? সিআইএ-র প্রধান (এখন প্রাক্তন) যখন বলেন তোমাকে গ্রেপ্তার করাটা তাঁর অগ্রাধিকার-তালিকায়, তা থেকে কি অন্তত এটুকু বোঝা যায় না যে, তুমি কারো কারো জন্য “বিরাট” এক হুমকি? আর, অ্যাসাঞ্জের আচার-ব্যবহার একটা গোয়েন্দা-সংগঠনের প্রধানের মতো— এই বক্রোক্তি? কিন্তু উইকিলিকস তো একটা গোয়েন্দা-সংগঠনই বটে। অবশ্য এ এমন এক গোয়েন্দা-সংগঠন যা সেবা করে জনগণের। পর্দার আড়ালের ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত রাখে তাদেরকে।
তারপরও তারা বলে, বিচারের হাত থেকে পালিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ। বিচারের হাত থেকে বাঁচার জন্যই তিনি নাকি ইকুয়েডরের দূতাবাসে লুকিয়ে আছেন। কিন্তু এটা কোন ধরনের বিচার যে মোকদ্দমা চুকেবুকে যাওয়ার পরেও তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হতে থাকে?
তার চে বরং প্রধান প্রশ্নটাতে আসা যাক: কেন এখন? আমার মনে হয় একটা নাম উচ্চারণ করলেই সব বোঝা যাবে। নামটা হলো ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’। যা কিছু নিয়ে অ্যাসাঞ্জের কাজ, যা কিছুর বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই, তার সবই আছে এই নামটার ভেতরে। মস্ত মস্ত প্রাইভেট কর্পোরেশন আর সরকারি এজেন্সিগুলোর ভেতরকার সংযোগ-সূত্র উন্মোচন করে দিয়েছে এই নাম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সময় রুশ ঘাঁটাঘাঁটি কি বিরাট এক টপিকে পরিণত হয়েছিল, মনে আছে? কি এক ঘোর আচ্ছন্নতা! এখন আমরা জানি যে, মানুষজনকে যারা ট্রাম্পের দিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তারা আসলে রুশ হ্যাকার (সাথে অ্যাসাঞ্জ) নয়, তারা ছিল আসলে পশ্চিমের নিজেরই সব ডেটা-প্রসেসিং এজেন্সি, আর তারা যোগ দিয়েছিল রাজনৈতিক শক্তিসমূহের সাথে। তার মানে এই নয় যে, রাশিয়া আর তার মিত্ররা সব নাদান, নির্দোষ। খুব সম্ভবত তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র করে থাকে অন্যসব দেশে (তখন অবশ্য তার নাম দেওয়া হয় “গণতন্ত্রে উত্তরণ”)। কিন্তু তার মানে বদের ধাড়ি যে-নেকড়েটা আমাদের গণতন্ত্রকে পণ্ড করতে এসেছিল ওটা ক্রেমলিনে থাকে না। ওটা আসলে খোদ পশ্চিমের ভেতরেই ঘোরাঘুরি করে বেড়াচ্ছে— আর এটাই হলো সেই কথা যা অ্যাসাঞ্জ আগাগোড়া বলে আসছেন।
গোপন নিয়ম
কিন্তু ঐ বুড়ো বদ নেকড়েটা ঠিক কোথায়? নিয়ন্ত্রণ ও কার্যসিদ্ধির পুরো এই পাল্লাটা বুঝতে গেলে আপনার উচিত হবে প্রাইভেট কর্পোরেশন এবং রাজনৈতিক দলের ভেতরকার সংযোগ-সূত্রটুকুকেও ছাড়িয়ে যাওয়া (কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ঘটনা কিন্তু এটাই)। সেটা ছাড়িয়ে গিয়ে আপনাকে দেখতে পারতে হবে কীভাবে গুগল বা ফেসবুকের মতো তথ্য প্রক্রিয়াজাত করার কোম্পানিগুলো আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো একটা আরেকটার ভেতরে ঢুকে আন্তঃব্যাপ্ত হয়ে আছে।
চীনকে দেখে আমাদের ধাক্কা খাওয়াটা ঠিক হবে না। আমাদের বরঞ্চ নিজেদের দিকে তাকিয়েই ধাক্কা লাগা উচিত। আমরা কিন্তু চীনের মতো একই ধরনের বিধিবিধান মেনে নিই, অথচ বিশ্বাস করে বসে থাকি যে, আমরা আমাদের আমাদের স্বাধীনতা পুরোপুরি বজায় রাখছি এবং মিডিয়া স্রেফ আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করছে। আর চীনে যেটা হয় সেটা হলো, মানুষের এই হুঁশ সেখানে পুরোপুরি পরিষ্কার যে, তাঁরা নিয়ন্ত্রিত। এ থেকে সামগ্রিক যে ছবিটা ফুটে ওঠে তার সাথে আমরা বায়োজেনেটিক্সের সর্বশেষ অগ্রগতিগুলোও (যেমন মানবমস্তিষ্কে তার সংযুক্তকরণ ইত্যাদি) যদি মেলাই তাহলে একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি পাই এবং সেটা আতঙ্কজনক একটা ছবি। ছবিটা সমাজ-নিয়ন্ত্রণের নতুন নতুন সব রূপকাঠামোর ছবি। এর তুলনায় সহি পুরাতন সেই “সর্বাত্মক-স্বৈরতন্ত্র”কে বরং দমনপীড়নের আদিম ও জবরজং একটা যন্ত্র বলে মনে হতে থাকে। নতুন এই জ্ঞানতাত্ত্বিক-সামরিক কমপ্লেক্সের সবচে বড় অর্জন হলো: প্রত্যক্ষ ও স্বতঃস্পষ্ট নিপীড়নের আর প্রয়োজন নাই। মানুষ যখন অনুভব করতে থাকে যে, তারা নিজেরাই তাদের নিজেদের জীবনের স্বাধীন ও স্বশাসিত কারক বা এজেন্ট, তখনই বরং তাদেরকে আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, আকাঙ্ক্ষিত অভিমুখে “সরিয়ে নেওয়া যায়”। এবং এটাই হলো উইকিলিকসের আরেকটা বুনিয়াদি শিক্ষা: আমাদের স্বাধীনতার অভাবটা সবচে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে যখন নাকি সেটাকেই আমরা আমাদের খোদ স্বাধীনতার প্রকাশ বলে অনুভব করতে থাকি।
কেননা নিরবচ্ছিন্ন যে-যোগাযোগপ্রবাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নিজের মতামত জনপ্রিয় করে তোলার সুযোগ দেয়, আর ব্যবহারকারীর সাধ অনুযায়ী তাকে ভার্চুয়াল কমিউনিটি গড়ে তুলতে দেয়, তার চে বেশি স্বাধীন আর কী আছে? এ থেকেই বোঝা যায় ডিজিটাল নেটওয়ার্কগুলোকে ব্যক্তিপুঁজি ও রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখাটা এত বেশি জরুরি কেন, অর্থাৎ জনবিতর্কের ক্ষেত্র হিসেবে সেগুলোকে গড়ে তোলাটা দরকার কেন। আজকের দিনে আমাদের জীবন কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, আর কীভাবে সেই নিয়ন্ত্রণকেই স্বাধীনতা বলে মনে হচ্ছে সে ব্যাপারে নিজের উপলব্ধির ক্ষেত্রে একদমই সঠিক ছিলেন অ্যাসাঞ্জ— যেমনটা দেখা গেছে গুগল বিষয়ে তাঁর আশ্চর্যজনকভাবে উপেক্ষিত বুনিয়াদি বইটাতে (হোয়েন গুগল মেট উইকিলিকস, ২০১৪)। মানে হলো, আমাদের পুরো সমাজের সাধারণ সহায়সম্পদ নিয়ন্ত্রণকারী প্রাইভেট কর্পোরেশন ও গোপন রাষ্ট্রীয় এজেন্সিগুলোর ভেতরকার আবছায়া সম্পর্কটার প্রতি আমাদেরকে মনোযোগ দিতে হবে।
জনসাধারণের ক্ষমতা
এখন তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মূলধারা-মিডিয়ার সর্বত্র যখন ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র বিষয়টা ঘুরছে ঠিক তখনই কেন অ্যাসাঞ্জকে চুপ করিয়ে দেওয়াটা দরকার ছিল। ক্ষমতাওয়ালাদের সমস্ত প্রচেষ্টা যখন এটাকে কতিপয় প্রাইভেট কর্পোরেশন ও রাজনৈতিক দলের বিশেষ একটা “অপব্যবহার” হিসেবে খাটো করে দেখাতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়টাতে খোদ রাষ্ট্র মহাশয় কোথায়? আর সেই তথাকথিত “ডিপ স্টেট”-এর আধা-অদৃশ্য অঙ্গকাঠামোই বা কোথায়?
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা “কেলেঙ্কারি” নিয়ে ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করতে থাকা ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা সম্প্রতি আত্মদর্প-বাতিকগ্রস্ত ও বিচার-পালানো মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে অ্যাসাঞ্জের ওপর যে ন্যক্কারজনক আক্রমণ চালিয়েছে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। এখন, যেভাবে যতটা তারা বিচলিত তাতে মনে হচ্ছে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা আর স্টিভ ব্যানন নিয়ে যে যত পারো লিখতে থাকো কিন্তু — খবরদার — অ্যাসাঞ্জ যে-জিনিসটার দিকে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছিলেন তা নিয়ে টুঁ টাঁ করা চলবে না। জিনিসটা হলো: রাষ্ট্রের যে অঙ্গকাঠামোগুলো এ “কেলেঙ্কারি” নিয়ে তদন্ত করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তারা নিজেরাই এই সমস্যার অংশ।
নিজেকে অ্যাসাঞ্জ চিহ্নিত করেছিলেন জনগণের গোয়েন্দা হিসেবে, জনগণের পক্ষের গোয়েন্দা হিসেবে। ক্ষমতাওয়ালাদের স্বার্থে তিনি জনগণের ওপর গোয়েন্দাগিরি করছেন না। বরং যারা ক্ষমতায় আছে তাদেরই ওপর গোয়েন্দাগিরি করছেন তিনি জনগণের পক্ষ হয়ে। এ জন্যই, এখন তাঁকে একমাত্র যারা সাহায্য করতে পারে তারা হলাম আমরা, জনগণ। শুধুমাত্র আমাদের চাপ ও সংহতিই তাঁর দুর্ভাগ্যজনক অবস্থার উপশম ঘটাতে পারে। এ কথা মানুষ প্রায়ই পড়ে থাকে যে, এমনকি দশকের পর দশক লেগে গেলেও বিশ্বাসঘাতকদের কীভাবে শাস্তি দিত সেকালের সোভিয়েত গুপ্ত-পুলিশ, কিন্তু শুধু তা-ই নয়, শত্রুর হাতে বন্দি হলে তাদেরকে মুক্ত করে আনার জন্য নাছোড়বান্দার মতো লড়াইও করত তারা। অ্যাসাঞ্জের পেছনে কোনো রাষ্ট্র নাই। আছি শুধু আমরা— জনসাধারণ। চলুন তাহলে আমরা সোভিয়েত গুপ্তপুলিশ যা করত সেটুকু অন্তত করি, চলুন তাঁর জন্য লড়াই করি যত দিন লাগে লাগুক!
অনুবাদক প্রদত্ত বইপত্রের হদিস
Polipace, Staff (2018), “Assange’s Smell is One Reason They Want Him Removed from Embassy”, Polipace, January 12, https://archive.is/cdc7J.
Rojas, Nicole (2018), “Stinkyleaks: Ecuadorian embassy staff complains about Julian Assange's poor hygiene / The WikiLeaks founder is apparently notorious for not showering or changing his clothes”, International Business Times, January 12, https://archive.is/pyaTw.
Schladebeck, Jessica (2018), “WikiLeaks founder Julian Assange’s poor hygiene sparks complaints at Ecuador Embassy: report”, New York Daily News, January 12, https://archive.is/0W8db.
অনুবাদক: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।