বিজয়ের এইদিনে
মুক্তির পথ প্রশস্ত হচ্ছিল
একাত্তরের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ কৌশল পরিবর্তন করে অগ্রগমন নীতি অবলম্বন করেন। তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশের পাশাপাশি ঢাকাকে শত্রুমুক্ত করা। তাঁরা গেরিলা আক্রমণের পরিবর্তে সম্মুখ আক্রমণ করতে থাকেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের এই অগ্রগমন নীতির ফলে হানাদার বাহিনী ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পিছু হটতে থাকে। ভেস্তে যেতে থাকে পাকিস্তানিদের হিংস্র সব পরিকল্পনা। তবে এ সময়ও শেষ মরণ কামড় দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীর হিংস্রতা থেমে থাকেনি।
এই দিনটিতে মুক্তিযোদ্ধারা আকস্মিক হামলা চালায় দিনাজপুরে। এ আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না হানাদাররা। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী জোট বেঁধে পঞ্চগড়কে মুক্ত করে ঠাকুগাঁওয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে। অবশ্য হানাদার বাহিনী পঞ্চগড়ে রিংয়ের আকারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডিফেন্স লাইন তৈরি করেছিল। কিন্তু গভীর রাতে মুক্তিবাহিনীর এ আক্রমণ তারা মোটেও আঁচ করতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এ সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন বীরত্বের কথা ফলাও করে প্রচার হতে থাকে।
একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী।
ঢাকাকে দখলমুক্ত করতে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের পথে শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।
চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনী উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার বেশির ভাগ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনী ঘোড়াশালে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ হানাদারকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। এখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী।
অন্যদিকে আখাউড়া, ভুরুঙ্গামারী, কমলাপুর, বনতারা, শমশেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষে হানাদার বাহিনী পিছু হটে যায়।
এতে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন লে. মাসুদ, সুবেদার খালেক, লে. মতিন, মেজর সদরুদ্দিন ও ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার।
এদিকে মুক্তিবাহিনীর বোমা বিস্ফোরণে ঢাকার রামপুরা ও মালিবাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও দুটি পেট্রলপাম্প বিধ্বস্ত হয়।
আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও হানাদার বাহিনী ঘুড়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করে এবং মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। তবে মুক্তিবাহিনী পুনরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে তিন দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছেমতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। ভারত আর নেটিভ রাজ্য নয়। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব, ওই সব বৃহৎ দেশের ইচ্ছানুযায়ী নয়। এ সময়ও তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।