উন্মাদীয়
থার্টিফার্স্ট
— আমি যাব পাঁচতলার ফ্ল্যাটে, ওরা ব্লাডি মেরির বোতল এনেছে।
— আমি পাশের বিল্ডিংয়ের ছয়তলায়, ওরা শ্যাম্পেন এনেছে।
— আমি তিনতলায়। ওরা ভদকাই খায় প্রতি থার্টিফার্স্টে!
কথা হচ্ছিল তিন ড্রাকুলার মধ্যে, তারা কে কোথায় যাবে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে। তার মানে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে তারা ওই সব বাসায় গিয়ে গ্লাসে করে ব্লাডি মেরি, শ্যাম্পেন বা ভদকা খাবে। তারা আসলে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে আসা মাতালদের ঘাড়ে কামড়ে রক্ত খেতেই যাবে। কারণ, রক্তে যে তখন থাকবে ওই সব বিখ্যাত মদের ফ্লেভার।
এ তো গেল ড্রাকুলাদের থার্টিফার্স্ট উদযাপন, এবার মানুষে আসি। মানে বাঙালিদের থার্টিফার্স্টে। সব ধূমপায়ী পুরুষ বাঙালিই থার্টিফার্স্ট নাইটেই প্রতিজ্ঞা করে, বাই হুক অর ক্রুক, আগামীকাল থেকে সিগারেট বাদ। কিন্তু তার পরও তাঁদের ধূমপান করতে দেখা যায়। যদি জিজ্ঞেস করা হয় :
— কী ব্যাপার, আপনি না সিগারেট ছেড়ে দিলেন?
— ছেড়েই তো দিয়েছি।
— এই যে খাচ্ছেন?
— ওহ, তাও বুঝলেন না, আমি ধূমপান ত্যাগের ফার্স্ট ফেজে আছি।
— মানে?
— মানে সিগারেট কিনি না, কিনে খাই না।
এই বাক্যালাপের একটা সেকেন্ড ফেজও আছে, যেমন :
— কী ব্যাপার, আপনি না সিগারেট ছেড়ে দিলেন?
— ছেড়েই তো দিয়েছি।
— এই যে খাচ্ছেন?
— আরে এটা তো গত বছরের কেনা।
স্বামীরা যেমন সিগারেট ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করেন, স্ত্রীরাও তেমনি প্রতিজ্ঞা করেন আর ঝগড়া করবেন না বলে। তবে বছরের প্রথম দিনেই সেটা আবার শুরু হয়ে যায়। আর কে না জানে, বছরের শুরুতে যা ঘটবে, বাকি সময়ও তা ঘটতেই থাকবে নিরন্তর।
এক বাঙালি তরুণ হঠাৎ খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েছে, তাকে আর কোনো পার্টিতে যেতে দেখা যায় না। কয়েক বছর ধরেই এই কাহিনী। পরে জানা গেল, সে যে পার্টিতেই যায়, সেখানেই গলা পর্যন্ত পান করে। তারপর হরহর করে বমি করে পার্টি ভাসিয়ে বাড়ি ফিরে। এ কারণে তাকে আর কেউ এখন কোনো পার্টিতে ডাকে না। (তবে শোনা যায় কোনো পার্টি ভণ্ডুল করতে তাকে ডাকা হয়, মানে হায়ার করা হয়।)
তরুণ থেকে এবার কিশোরে আসা যাক। এক কিশোর, তার শখ একটা সাইকেলের। বাবা-মা কথা দিয়েছিলেন, নতুন বছরে সাইকেল কিনে দেবেন; কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। শেষমেশ কিশোর ঈশ্বরের দ্বরস্থ হলো, ‘হে ঈশ্বর, এবারের নতুন বছরে যেন একটা সাইকেল পাই!’
— তা নতুন বছরে সাইকেল কি পেলি? বন্ধুরা জানতে চায়।
— পেয়েছি।
— ওহ পেয়েছিস তাহলে, বাবা কিনে দিল শেষ পর্যন্ত?
— আরে না, ঈশ্বরই ম্যানেজ করে দিলেন।
— মানে?
— মানে... (এবার গলা নামিয়ে ফেলল নতুন বছরের সাইকেলের মালিক) আসলে বুঝিস তো, ঈশ্বর তো ব্যস্তই থাকেন, আমার কথা শোনার সময় কই? তাই একটা সাইকেল চুরি করে ঈশ্বরের কাছে চিকনে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি...।’
ঈশ্বর সাইকেলচোরকে নতুন বছরে ক্ষমা করবেন কি না জানি না। তবে সময় কিন্তু আমাদের কাউকে ক্ষমা করে না। পুরোনো বছরটি সরে গিয়ে নতুন বছর এসে যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়... সময় এতই মূল্যবান যে বাজে সময় বলে আসলে পৃথিবীতে কিছু নেই... !
লেখক : রম্যলেখক ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক।