স্বাধীন ভাবনা
‘বাংলাদেশ হবে জঙ্গিবাদমুক্ত’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। বাঙালি জাতি ও জনগণের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ অর্জন এই স্বাধীনতা। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অর্জিত হয় এই বিজয়। স্বাধীনতার এই ৪৫ বছরে কী ভাবছে আজকের তরুণ সমাজ? তাঁদের প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা কী, তা নিয়েই এনটিভির বিশেষ আয়োজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তাঁদের মতামত। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন মাজেদুল হক তানভীর।
দিলসাদ কবির মেরিন
শিক্ষার্থী, চতুর্থ সেমিস্টার, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। বড়দের মুখে শুনেছি, বই-পুস্তকে পড়ে জেনেছি। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার এই ৪৫ বছরে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এ ছাড়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন আমাদের অনন্য এক অর্জন। বাংলাদেশকে আজ আর দাতাগোষ্ঠীর অনুদানের মুখাপেক্ষী থাকতে হয় না। আমরা আজ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। এ ছাড়া পোশাকশিল্পে ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করছে, তা দেশের জন্য গৌরবময়। আজ ক্রিকেটে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনবদ্য সাফল্যের জয়কার পৃথিবীজুড়ে। নারী ক্রিকেট দলও পিছিয়ে নেই এই গৌরব অর্জনে। এমন অনেক অর্জন রয়েছে, যা স্বল্প পরিসরে বলে শেষ করা যাবে না।
বাংলাদেশ নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়ার। স্বপ্ন দেখি জঙ্গিবাদমুক্ত দেশের, যেখানে ধর্ম-বর্ণ ভুলে সবাই মিলে বসবাস করবে। থাকবে না কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। থাকবে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সঠিক পরিচর্চা। এমন বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন।
মো. কামরুল হাসান
শিক্ষার্থী, একাদশ সেমিস্টার, বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ
১৯৭১ সালে প্রায় ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমার এই সোনার বাংলাদেশ। আমি একাত্তর দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তবে দাদুর মুখে শোনা গল্প শুনে বিভীষিকাময় সেই দিনগুলোর কথা উপলব্ধি করতে পারি।
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের বিজয়ের আজ ৪৫ বছর। সময়টি খুব বেশি না হলেও আমাদের অর্জন নেহাত কম নয়। বাংলাদেশ আজ তথ্যপ্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে। গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে নিম্নশ্রেণির মানুষ পর্যন্ত আজ প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছে। আর্থিকভাবে অনেকটা স্বাবলম্বী এখন এই দেশ। অনুদানের অপেক্ষায় চেয়ে থাকতে হয় না আমাদের।
সোনার বাংলার কাছে আমার প্রত্যাশা, একদিন আমার এই দেশ উন্নত দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াবে। পোশাকশিল্পের মতো সব খাত এগিয়ে যাবে সমানতালে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করবে। এ দেশের শিক্ষার মান অন্য বড় দেশের চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না। আমি স্বপ্ন দেখি বৃদ্ধাশ্রমহীন একটি সোনার বাংলার।
নাদিয়া পারভীন যূথী
শিক্ষার্থী, ১৪ সেমিস্টার, আর্কিটেকচার বিভাগ
কয়েক দিন আগে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। কারওয়ান বাজার সিগন্যালে দাঁড়াতেই একটা বাচ্চা মেয়ে বেলুন হাতে ছুটে এসে হাসিমুখে সাইকেলের সঙ্গে বেঁধে দিল কয়েকটা বেলুন। সেই বেলুন লাগানো অবস্থায় সাইকেল চালিয়েই আমাকে ফিরতে হলো। মনে মনে ভাবছিলাম, এই আমার বাংলাদেশ। যে দেশের মানুষের পেটে ক্ষুধা থাকলেও হাসতে জানে, যারা এখনো অতিথিকে খালি মুখে বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না, যারা এখনো বাকের ভাইয়ের ফাঁসি নিয়ে মিছিল করে। এমন বাংলাদেশই তো আমি চাই। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে তাই আমার প্রত্যাশা, শুধু এই সম্প্রতি যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।
নজরুল ইসলাম
নবম সেমিস্টার, আইন বিভাগ
একাত্তর সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙালিরা যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই লক্ষ্য কি আমাদের আজও পূরণ হয়েছে?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘এ দেশের মানুষ অর্থনীতি, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।’ কিন্তু আদৌ কি আমাদের সেই মুক্তি মিলেছে? তাহলে আজও কেন আমার দেশের মানুষকে ভিক্ষাবৃত্তি করে, অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হয়?
স্বাধীন দেশেও সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষণ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হচ্ছে হাজারো মানুষ। আমার দেশের সংস্কৃতিকে অসম্মান জানিয়ে মেতে আছি ভিনদেশি অপসংস্কৃতিতে।
তাই আমার প্রত্যাশা, স্বাধীনতার যে গৌরবময় অর্জন তা ধর্ম-বর্ণ, দল-মত ভুলে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অমলিন রাখব। আমার দেশ হবে বিশ্বের সুখী ও সুন্দর দেশের তালিকায়, যেখানে থাকবে না জঙ্গিবাদ, ক্ষুধার জ্বালা, দুর্নীতি ও অপসংস্কৃতি।
ঝুমানা সরকার
সপ্তম সেমিস্টার, ফার্মাসি বিভাগ
স্বাধীনতার ৪৫ বছরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক। পৃথিবীজুড়ে লাল-সবুজের জয়গান। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে খেলা, শিক্ষাক্ষেত্রে সব জায়গায় বিশাল সব অর্জন। আজ আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। অনেক অর্জনের মধ্যেও কিছু হতাশা কাজ করে মনে।
ধর্মনিরপেক্ষ দেশে যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি প্রত্যাশা করি, সামনের দিনে বাংলাদেশ হবে জঙ্গিবাদমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। দেশে সাম্প্রাদায়িকতা বিরাজ করবে—এ আমার প্রত্যাশা।