স্বাধীন ভাবনা
‘মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, দেখেছি মুক্তিযোদ্ধা’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫তম বছর চলছে। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ আবর্তিত হয়েছে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে, পার হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি প্রজন্ম। এ সময়ে যাঁরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, তাঁরা হয়তো মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করেন হৃদয়ে। তাঁদেরও রয়েছে কিছু প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত তেমনি কিছু তরুণের চিন্তাভাবনাকে সংকলিত করেছেন মহসিন হোসেইন।
রাজিউর রহমান
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ
আমরা একত্তর দেখিনি, দেখিনি একত্তরের বিজয় উল্লাস। আমরা শুধু স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করি আমাদের হৃদয়ে। আমরা স্বাধীনতার ৪৬ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক রদবদল দেখেছি। অনেক রাজনীতিক দল দেশ পরিচালনায় এসেছে। কিন্তু সেখানে প্রাপ্তির পরিমাণ অনেক কম। আমরা যদি বর্তমান সময়ের দিকে তাকাই, তাহলে আমরা অর্থনৈতিক বিপ্লব দেখতে পাব। আমরা এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রতিবছর বেড়েই চলেছে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা এসেছে। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির বিমান, অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংযোজন ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তিতে সফলতার সঙ্গে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। জয় হোক সব শহীদ সূর্যসন্তানের।
আরফিনা রহমান
শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, দেখেছি মুক্তিযোদ্ধা। দেখেছি তার চোখে দেশ আর তার মানুষগুলো নিয়ে ভেঙে যাওয়ার হাজারো স্বপ্ন। আমরা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি, তার পূরণের দায়িত্ব বোধ হয় কোথাও না কোথাও আমাদেরই ছিল। আজও যখন দেখি আমার সামনে একটি শিশু তার পড়াশোনা আর খেলার বয়সটিতে মানুষের কাছে ক্ষুধার জ্বালায় অর্থের ভিক্ষা করে, ঠিক তখনই মনে হয় কোথায় স্বাধীনতা? আমিও আমার দেশকে ভালোবাসি অন্য সবার মতই; কিন্তু আমিও হতাশ। আমি, আমরা সবাই চাই, দেশকে তাঁর উপযুক্ত অবস্থানটিতে পৌঁছে দিতে। তাই আজ আমাদের সবার একত্র কাজ করে যেতে হবে দেশের কল্যাণে। যে লাল-সবুজের পতাকা আমরা পেয়েছি লাখো মানুষের জীবনের বিনিময়ে, হাজারো স্বার্থ ত্যাগের বিনিময়ে, সেই লাল সূর্য দেখে দেশের প্রতিটি শিশু যেন উজ্জ্বল হাসিটি হাসতে পারে, এটাই আমাদের আশা। আমাদের দেশ ভরে উঠুক সবুজে সবুজে। আসুন, আমরা এগিয়ে নিয়ে যাই দেশকে ।
মুফতি মাহমুদ আলরাজি
শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ
নিজেকে সব সময় গর্বিত নাগরিক মনে হয় এই ভেবে যে, আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আর যে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে রক্তক্ষয়ী ইতিহাস আছে, সে দেশের নাগরিক হওয়াটা পরম সৌভাগ্যের। যাদের এমন গৌরবময় ইতিহাস আছে, তাদের তো সব সময়ই স্বাধীনতার ইতিহাসকে বুকে লালন করে দেশের প্রতি আত্মনিবেদন করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আমি শুধু নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি আরো অন্তত ১০ জনকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। আর তারা এই দেশকে নিয়ে নিজে এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। পরিশেষে, দুর্নীতিকে কঠোরভাবে সমস্বরে ‘না’ বলতে চাই।
মহসিন হোসেইন
শিক্ষার্থী, ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ
শেষ হতে চলেছে স্বাধীনতার ৪৫ বছর। কিন্তু মুছতে কি পেরেছি কলঙ্কের দাগগুলো? হয়তো পেরেছি, সময়ের ব্যবধানটা বেশি হলেও শেষ হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। কিন্তু আজও যেসব মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার আশায় পথ থেকে পথে অবিরাম ছুটে চলেছে, যারা একটি শীতবস্ত্রের অভাবে খোলা শরীরে রাত কাটাচ্ছে এই হাড়কাঁপুনি শীতে, যাদের একটি বাসস্থানের অভাবে জীবন কাটাতে হয় খোলা আকাশের নিচে—আমরা কি পেরেছি তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে? এখানে আমাদের অপ্রাপ্তি থেকে যায়। আমার কষ্ট হয়, ১৯৭১ সালে অধিকার আদায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, আমরা তাদের স্বাধীনতার চেতনাকে সম্পূর্ণরূপে আজও ধারণ করতে পারিনি। আমি চাই, সকলে একসঙ্গে কাজ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।
সায়েদা তামান্না
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে যাচ্ছি। তার ইতিহাস যেন সবার হৃদয়ে সদা জাগ্রত। আমি মুক্তিযুদ্ধ না দেখলেও মায়ের মুখে সেই দিনগুলোর কথা শুনলে সবকিছু আমার চোখের সামনে আয়নার মতো ভেসে ওঠে। স্বাধীনতার এত বছর পর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা বলতে গেলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। তবে স্বাধীনতার এত বছর পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া সত্যিই বড় অর্জনের বিষয়। কিন্তু কষ্ট হয় যে যখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। আমরা শুধু ডিসেম্বর মাস এলেই স্বাধীনতা নিয়ে মাতামাতি করি। ১৯৭১ সালের মতো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করব—এ প্রত্যাশা করি।