স্মরণ
বাবার জায়গাটা শূন্যই রয়ে গেছে
১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। আমার তখন দুই বছর বয়স ছিল। শহীদ ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী, আমার বাবা, তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। আমার বড় বোনের তিন বছর বয়স ছিল তারও বাবার কোনো স্মৃতি মনে নেই। বাবাকে চিনেছি মার কাছে শুনে, চাচার কাছে শুনে, দাদি, নানি, মামাদের কাছে শুনে। বইয়ে পড়েছি, বাবার ওপর লেখা । বাবার বন্ধুদের কাছে, সহযোদ্ধাদের কাছে আমি এখনো বাবার কথা শুনি। কিন্তু যেটা সত্যি কথা যেটা হচ্ছে শোনা কথায় আর ছবি দেখে কিন্তু মানুষটার অবয়ব ঠিক করা যায় না।
আমার জীবনের একটা পরম ইচ্ছে বাবার একটা চলমান ছবি দেখার, মানে একটু হাঁটছে, একটু কথা বলছে, যদি সে রকম কিছু দেখতে পেতাম তাহলে অন্তত মানুষটাকে চিনতে পারতাম। আসলে সেই জায়গাটা শূন্যই রয়ে গেছে। মানে ওই জায়গাটা সব সময়ই শূন্য। কিন্তু বাবা আসলে আমার কাছে দেশ, দেশ মানে বাবা। কারণ বাবারা তো মারা গেছেন দেশের জন্য। দেশের স্বাধীনতার জন্য। সুতরাং এই যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সংগ্রামের, এই যে দেশের জন্য কাজ, দেশের ভালো-মন্দ, আর বাবা আমার কাছে একাকার হয়ে গেছে।
বর্তমান বাংলাদেশকে আমি দেখতে চাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ ছিল সেই আদর্শে। যেটা স্পষ্ট ভাবে আমাদের চার মূলনীতিতে লেখা হয়েছে। সেই চার মূলনীতির ওপর বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই একটি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাংলাদেশ। যেখানে ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী কোনো কারণে কোনো মানুষ, কোনো বিভেদের শিকার হবে না। এখানে সবার সমান অধিকার সুনিশ্চিত হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি কিন্তু আমরা এখনো সেই জায়গায় যেতে পারেনি। মানুষের সবার দোড়-গোড়ায় দ্রুত বিচার যেটা সেটা এখনো কিন্তু পৌঁছে দিতে পারছি না। সুতরাং আমি চাই যে সাম্যবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত মানবিক প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
শ্রুতিলিখন : তানভীন ফাহাদ