স্বাধীন ভাবনা
‘এসডিজি অর্জনে বদ্ধপরিকর থাকতে হবে’
মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি রক্তাক্ত অধ্যায়, যে রক্তের প্রতিটি বিন্দু দিয়ে আঁকা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিটি আত্মত্যাগের পেছনে কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে এ দেশের মানুষের স্বপ্ন, টিকে থাকার আশা। আজ স্বাধীনতার ৪৫ বছরে কতটুকু পূরণ হয়েছে সে স্বপ্নের? প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিই বা কতটুকু, তা তুলে ধরছেনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তরুণ শিক্ষকবৃন্দ।
কুন্তলা চৌধুরী
প্রভাষক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ
স্বাধীনতার এই ৪৫ বছরে নারীদের লক্ষণীয় অগ্রগতি চোখে পড়ে। শিক্ষা, রাজনীতি, খেলাধুলা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। তবে কতগুলো প্রশ্ন, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ঠিক কোন পাল্লাটি বেশি ভারী—সেটি বুঝতে আমাদের সহায়তা করবে। শুধু নারীর অংশগ্রহণই ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারছে নাকি অংশগ্রহণ করেও নারী সেখানে নির্বাক ভূমিকা পালন করছে? নারীদের সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন কতটুকু হচ্ছে? আজ কি নারীরা নিরাপত্তার সঙ্গে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারছে? তনু আর খাদিজার মতো কেন আমাদের নির্যাতিত হতে হচ্ছে এই স্বাধীন বাংলাদেশে? প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বেড়াই। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে নারী উন্নয়নে আমাদের অর্জন অনেক। তাই বিচারহীনতার সংস্কৃতি যাতে সেই অর্জনকে ম্লান করে না দেয়, সরকারের কাছে সে প্রত্যাশা জানাই।
মো. বেলাল উদ্দিন
প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ এক বিস্ময়, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য। আজ এই ৪৫ বছর বয়সী বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭ দশমিক ১ মাত্রার প্রবৃদ্ধি, গার্মেন্ট খাতে বিশ্বখ্যাতি, এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয়, সরকারি-বেসরকারি, আন্তর্জাতিকসহ ৫৬টি ব্যাংক রয়েছে এবং নতুন উদ্যোক্তার প্রসার ঘটেছে। এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ আজ অনেকটাই সফল। কিন্তু ২০২১ সালে যে ভিশন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে দুর্নীতিকে নির্মূল করতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি, ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি, বৈদেশিক বিনিয়োগের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গড়ার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এসডিজি অর্জনে বদ্ধপরিকর থাকতে হবে, যাতে আমরা আমাদের সোনার বাংলা, জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়তে পারি।
আরিফা সুলতানা
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
স্বাধীনতার ৪৫ বছরে বাঙালির স্বপ্ন অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাবনার মুখ দেখলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কতটুকু এগিয়েছে, এ বিষয়টি নতুন করে ভাবনার দাবি রাখে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান রচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলেও সামরিক সরকারের বাধায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র। নব্বইয়ে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা ফিরে এলেও বাস্তবিক অর্থে তা কতটুকু গণতান্ত্রিক, তা প্রশ্নবিদ্ধ। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল সব সময়ই মনে করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়াই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব; আবার এই দলই যখন বিরোধী দল তখন তাদের মতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন অলীক কল্পনামাত্র। এই প্রবণতার পেছনে মূল কারণ হয়তো সবারই জানা। পরস্পর অবিশ্বাস ও দোষারোপের মানসিকতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিরোধী দলের উপস্থিতিতে কাঠামোগত সমালোচনার মধ্য দিয়ে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে গণতন্ত্র তত্ত্বীয়ই থেকে যাবে; বাস্তবায়ন হবে না। সরকারও যদি বিরোধী দলের মতামতের মূল্যায়ন করে, তবেই স্বপ্নের সোনার বাংলা সম্ভব।
মো. আবুল কালাম আজাদ
প্রভাষক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষা, গবেষণা ও শিল্পে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ খুলে দিয়েছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লবের পর বর্তমান পৃথিবী নতুনতর এক বিপ্লবের মুখোমুখি হতে চলেছে, যার নাম তথ্য বিপ্লব। বর্তমান সরকার রূপকল্প ২০২১ গ্রহণ করেছে, যেখানে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে পরিচিতি লাভ করবে। তথ্য ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে এ যুগে বাংলাদেশ সরকারের এ ধরনের যুগোপযোগী পলিসি ও কর্মপরিকল্পনা দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে শিক্ষা ও গবেষণার জায়গাগুলোতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো না গেলে মেধা পাচার রোধ করা কঠিন হবে। কারণ, বিশ্বের বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি বাংলাদেশের দক্ষ প্রযুক্তিবিদদের আকর্ষণীয় সুযোগ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যারা এ শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশে কাজ করতে পারত। এ জন্য সরকার এ দেশের কর্মদক্ষ প্রযুক্তিবিদদের আকৃষ্ট করে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজে লাগাতে পারে। তা না হলে দেশে দক্ষ প্রযুক্তিবিদদের সংকট প্রকটতর হবে এবং তা রূপকল্প ২০২১-এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করবে।