স্বাধীন ভাবনা
শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে, এটা সরকার বলতে পারবে। যেমন ধরেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করা, কনটেন্ট তৈরি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি এগুলো সরকারি কর্মকাণ্ড। সরকার এগুলো করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আমি কতগুলো বিষয় বলি, একটা হচ্ছে শিক্ষার ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট, শিক্ষকের হাজিরা, ছাত্রছাত্রীর হাজিরা বা অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা—এসব হচ্ছে ম্যানেজমেন্টের ইস্যু। ম্যানেজমেন্টের ইস্যুর ক্ষেত্রে যতটুকু ডিজিটালাইজ করা দরকার, সেটা করা হচ্ছে। এটার মোটামুটি অবস্থান ভালো। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার রেজাল্ট দেখা এগুলো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট, কখনো শিক্ষা ম্যানেজমেন্ট—এসব জায়গায় তেমন পরিবর্তন চোখে পড়ে না আমার। অর্থাৎ দৃশ্যমান না, মানে যেটা আমরা নজরে ফেলতে পারি সে রকম না।
আর একটি বিষয় হচ্ছে, শিক্ষার বিষয়বস্তু, অর্থাৎ কী বিষয়ে পড়াচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা বিষয়বস্তুর কোনো পরিবর্তনই হয়নি। যে সময়ের জন্য যে শিক্ষা দেওয়া দরকার, সেই সময়ের জন্য সেই শিক্ষা পাঠ্যক্রম আপডেট করা হয়নি। একেবারে স্পর্শই করা হয়নি। এটা এখন পর্যন্ত ১৭৬০ সালের শিক্ষাব্যবস্থা। অতএব, এই শিক্ষাব্যবস্থায় বিষয়বস্তুগত পরিবর্তন একেবারে শূন্যের কোঠায় আছে।
শিক্ষা দেওয়ার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। আপনি যেভাবে চক, ডাস্টার, টেবিল, খাতা, কলম, বই দিয়ে পড়াচ্ছিলেন, সেটার ক্ষেত্রেও তেমন কোনো পরিবর্তন নেই।
অতি সামান্য কিছু উদ্যোগ আছে সরকারের। কিছু পুরোনো ধাঁচের প্রশিক্ষণ আছে। পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে কীভাবে কনটেন্ট বানাতে হয়, সেসব আছে। যেসব কনটেন্ট বানানো হয়েছে, সেগুলো পুরোনো ধাঁচের, নতুন প্রকৃতির না। যে ধরনের অগ্রগতি আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, সে ধরনের অগ্রগতি তো এখনো তেমনভাবে হয়নি।
অবস্থা পরিবর্তনে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুই জায়গাতেই তেমন কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। মানে অন্যান্য ক্ষেত্রে যে রকম রূপান্তর হচ্ছে, সে রকম উদ্যোগ তো আমি চোখে দেখছি না। হ্যাঁ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি সময় উপযোগী উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমাদের যে প্রত্যাশা আছে, সেটা পূরণ করা সম্ভব। সেটা করতে গেলে আমাদের আদিকালের পাঠদান পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠদান করতে হবে। শিক্ষকদের নতুন ধাঁচের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে নতুন ধাঁচের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।
লেখক : প্রযুক্তিবিদ ও সভাপতি, বেসিস