সৌদি আরবপ্রবাসী জোছনা হকের আরেকটি কবিতা

কেউ রাখেনি সখিনা বেগমের খবর
রৌদ্রদগ্ধ কৃষ্ণচূড়ার লালে,
সখিনা বেগম বসে আছে দুহাত গালে।
সবেমাত্র রহিম উল্লাহর সাথে বিয়ের পিঁড়িতে নববধূ হয়ে আসলো ঘরে।
সেদিন পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী করেছিল আইন জারি,
উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা, বাংলা দাও ছাড়ি।
সোচ্চার জনতা স্লোগানে মুখরিত,
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাংলা চাই,
পুলিশ টহল উত্তপ্ত বাংলার বুকে,
রহিম উল্লাহ চলে গেল ঘরে নববধূ রেখে।
মিছিলের অগ্রভাগে দেখেনি সেদিন কেহ।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বাংলা চাই,
বর্বর বাহিনীর বুলেটের আঘাতে মিছিলের সারিতে লুটিয়ে পড়ল একটি নিথর দেহ।
বায়ান্নের সেই নিকষ কালো রাতে,
রহিম উল্লাহ চলে গেল চিরনিদ্রায়,
নববধূ সখিনা বেগমের মেহেদী তখনও হাতে।
বীর বাঙালি তুমি এনেছো ভাষার স্বাধীনতা,
সমঝোতা করোনি জীবনের সাথে,
সখিনা বেগন চিৎকার দিয়ে কাঁদে প্রতি রাতে।
স্বামীহারা সখিনা বেগম সুখে কাতর,
দিন, মাস, বছর কাঁটে বুকে রেখে পাথর।
চলে গেল বাপের বাড়ি,
বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে বিবাহের বেনারসি শাড়ি।
কেউ রাখেনি সখিনা বেগমের খবর,
অবহেলায়, লাঞ্চনা, বঞ্চনায় কখনও বা দিঘীর পাড়ে ঘুমিয়ে কাঁটায় অর্ধপ্রহর,
জাগো বাঙালি জাগো বাঙালি, জাগাও তোমাদের এই ঘুমন্ত শহর।