আপনার জিজ্ঞাসা
সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি না করলে কী হবে?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম মুফতি মুহাম্মদ জাকারিয়া।
আপনার জিজ্ঞাসার ৫৯৮তম পর্বে সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি না করলে গুনাহ হবে কি না, সে বিষয়ে বরিশাল থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন শারমিন। অনুলিখন করেছেন জান্নাত আরা পাপিয়া।
প্রশ্ন : যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য আছে, কিন্তু কোরবানি দিচ্ছে না, তাহলে কি তারা গুনাগার হবেন?
উত্তর : সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ কোরবানি না দেন, এদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যাঁকে সামর্থ্য দান করলেন এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যিনি কোরবানি করলেন না, তিনি যেন ঈদগাহে না আসে।’ এর মানে হলো, আল্লাহ আপনাকে সচ্ছলতা দিয়েছেন, এটা আপনার আমার কোনো ক্রেডিট না, আপনার আমার মতো শিক্ষিত ও শক্তিশালী অনেক মানুষ আছে, যারা কোনো অর্থ আয় করতে পারে না। ধরুন আমি শিক্ষায় কম, তারপরও আল্লাহ আমাকে অর্থ-সম্পদের মালিক বানিয়েছেন, এটা একান্তই আল্লাহপাকের নিয়ামত। তিনি দয়া করেছেন আমার ওপর। এই দয়া তিনি আমাকে না করে অন্য কাউকে করতে পারতেন। এই কোরবানি করাটা হলো তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা।
দ্বিতীয়ত হলো, কোরআনুল কারিমের আয়াত দ্বারাও কোরবানি করার কথা বলা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর অসংখ্য হাদিস দ্বারা কোরবানি করার কথা বলা হয়েছে। কোরবানি করার ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরবানি করো এবং এই প্রাণীর যে রক্ত প্রবাহিত হবে, এর বিনিময়ে তোমার গুনাহ মাফ হবে।’
এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বুঝি যে, কোরবানি করার সামর্থ্য যাদের আছে, তারা যদি কোরবানি না করেন, তাহলে তাদের দুটি অপরাধ হবে। প্রথমটি হলো, তিনি একটি বিধানকে স্বেচ্ছায় লঙ্ঘন করলেন। আর দ্বিতয়টি হলো, এটি সওয়াব অর্জন করার একটি মাধ্যম ছিল, যা ইচ্ছা করে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হলেন। হতে পারে হাশরের ময়দানে সামান্য একটু সওয়াবের জন্য আমি নাজাত পেতে পারতাম। তখন হয়তো এই সওয়াবটুকু আমার কাজে লাগত।
নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা শুধু আলহামদুলিল্লাহ বলা নয়। শুকরিয়া আদায় করতে হবে আমলের মাধ্যমে, কোরবানি করার মাধ্যমে। এমনও তো হতে পারে যে আজ আপনার সামর্থ্য আছে, কিন্তু কোরবানি দিলেন না। আল্লাহ না করুন, আগামী বছর জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকলেন। তখন হয়তো দশটা কোরবানি করার টাকা হাসপাতালে দেওয়া লাগতে পারে, তখন আপনার কিছু করার থাকবে না। আল্লাহ এসব থেকে আমাদের হেফাজত করুন।