কুড়িগ্রামে গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলা অনুষ্ঠিত
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্বধনীরাম ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী এলাকার শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর দক্ষিণ তীরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, দেড়শ বছর আগে মেলার নামে মৃত শরৎ চন্দ্র রায় এক একর জমি দান করেন। শুরুতে নিজস্ব জমিতে পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হতো। পরে ধরলা নদীর ভাঙন ও গতিপথ বার বার পরিবর্তন হওয়ায় উপজেলার দুই স্থানে প্রতি বছরই গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
দশহরা মেলায় ধরলা নদীতে স্নানের আয়োজন করা হয়। হরেক রকমের জিনিস পাওয়া যায় মেলায়। দা, বটি, কাঠারি ও সব ধরনের হাতিয়ারসহ গৃহকর্মে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, উড়ুন, গাইন, লাঙ্গল, জোয়াল, ঝাঁপি, ডালি, কুলা, ডুলি, ঝাড়ু, হাতপাখা, সস্তায় কৃষি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও মৃৎপাত্রের বিভিন্ন বাহারি তৈজষপত্র, বর্ষার বিভিন্ন ফল, শুঁটকিসহ বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, বাতাসা, মুড়ি, মিষ্টি-জিলাপি, বেলুনসহ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সামগ্রী পাওয়া গেছে মেলায়।
নাগেশ্বরী উপজেলার বদিজামারপুর থেকে আসা পূণ্যার্থী মালতী রানী রায় বলেন, ‘স্নান করে পাপ মুক্ত হয়ে আমাদের ভালো লাগছে।’
মেলায় আগত পুরোহিত বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতি বছর মহা দশমীতে এখানে গঙ্গা স্নান সেরে পূণ্যার্থীরা পাপ মুক্ত হন।’
দশহরা মেলার স্নান ও পূজা কমিটির সভাপতি হরিকান্ত চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলাটি প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি। আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখলেও বর্তমানে বিভিন্ন কারণে গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলাটির জৌলুস হারাতে বসেছে।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভপতি সুনীল চন্দ্র রায় বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে দেড়শ বছরের পুরোনো গঙ্গাপূজা ও দশহরা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত পূণ্যার্থী এসে গঙ্গা স্নানে অংশ নিয়ে পাপ মোচনের জন্য প্রার্থনা করেন। প্রার্থনা শেষে পূজা কমিটির লোকজন দূর-দূরান্তের পূণ্যার্থীদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করেন।’
সূর্য বংশীয় রাজা দশরত দশমীতে পাপ মোচনের জন্য গঙ্গা নদীতে স্নান সেরে পূজা দিয়ে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। এরই অনুকরণে বাংলা ১২৫০ সাল থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দশমী তিথিতে গঙ্গার শাখা নদী ধরলায় পাপ মোচনের জন্য গঙ্গাপূজার পর স্নান করে বাড়ি ফেরেন। স্নান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সেখানে এ দিন গীতাপাঠ, ভগবত আলোচনা, উপবাস এবং সবশেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।