ইতালির প্রতি বিশ্বকাপজয়ী তারকার খোলা চিঠি

Looks like you've blocked notifications!

করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে সারা বিশ্ব। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দিন দিন প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। করোনার এই ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লেগেছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যায় সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে তারা।  

এই কঠিন সময়ে নিজ দেশ ইতালির মানুষের প্রতি খোলা চিঠি লিখেছেন দেশটির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও ক্যানাভারো। ২০০৬ সালে তাঁর অধীনে বিশ্বকাপ জেতে ইতালি।

গত মঙ্গলবার ফাবিও ক্যানাভারোর চিঠিটি প্রকাশ করেছে প্লেয়ার্স ট্রিবিউন ওয়েবসাইট। খোলা চিঠিতে লেখা বিশ্বকাপজয়ী তারকার বক্তব্য তুলে ধরা হলো, ‘আমার দেশ ইতালিতে এ মুহূর্তে যা হচ্ছে, সেটি খুব উদ্বেগ আর ব্যথাময়; হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি। আমি আপনাদের বোঝাতে পারব না, নিজের দেশকে এ অবস্থায় দেখাটা কতটা কষ্টকর। প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। যাঁরা করোনাভাইরাসের আক্রমণের শিকার হয়েছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কথা ভেবে আমি মর্মাহত। বিশেষ করে যাঁরা করোনায় তাঁদের নিকটজনকে হারিয়েছেন, তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই।’

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে ফাবিও লিখেছেন, ‘আমি অভিবাদন জানাই সেইসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে, যাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখেও অন্যের জীবন বাঁচানোর কাজে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন। আমাদের দেশের সত্যিকারের বীর আপনারাই। আপনাদের মতো বীর সন্তানদেরই এ মুহূর্তে খুব প্রয়োজন আমাদের এই আক্রান্ত, অসহায় দেশের।’

ফাবিও আরো লিখেছেন, ‘আমরা কেউই সুপারম্যান নই। আমরা কেউই এই করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত নই। চীনে যখন এই মহামারি ছড়িয়ে পড়ে, তখন আমি ভেবেছিলাম এটি হয়তো আমাদের দেশকে স্পর্শ করতে পারবে না। আমরা অবশ্যই এ ভয়ংকর ভাইরাসটিকে পাত্তা দিইনি। ছোট করে দেখেছিলাম। চীনে আমি গুয়াংজু এভারগ্রান্দের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি কয়েক সপ্তাহ আগে কোয়ারেন্টিনে কাটিয়েছি। চীনের জনগণ এরই মধ্যে সার্স ভাইরাসের শিকার হয়েছিল। সুতরাং তারা জানে, মহামারির সময় কী করতে হয়। কিন্তু ইতালির জন্য এটি পুরোপুরি নতুন একটা বিষয়। এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে আমরা ইতালীয়রা কখনোই পড়িনি। তবে এখন, এ মুহূর্তে আমরা লড়াইয়ের মাঝামাঝি আছি। এটা একটা যুদ্ধ। এ লড়াইয়ে আমাদের অবশ্যই জিততে হবে। নিজেদের সেরাটা দিলেই এ যুদ্ধে আমরা জিততে পারব।’

দেশের মানুষের প্রতি সাবেক জুভান্টাস তারকা লিখেছেন, ‘একদিন এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বিপদ কেটে যাবে। কিন্তু তখন ইতালির চেহারা হবে পুরোপুরি ভিন্ন। অনেকে নিজেদের ব্যবসা হারিয়ে ফেলবেন। অনেকে চাকরি হারাবেন। তখন আকাশসম পরিশ্রমের প্রয়োজন হবে সবকিছু আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসতে। আশা করি, খুব শিগগির করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে পাওয়া যাবে। একমাত্র সেই টিকার মাধ্যমেই আমরা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে পুরোপুরি জিততে পারব। আপাতত আমরা ঘরে থেকে যুদ্ধটা লড়ি। পরিবার-পরিজনকে সময় দিই।’

ইতালিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া সারা বিশ্বের বিভিন্ন  দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা নয় লাখেরও বেশি বলে জানিয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজ। করোনায় মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৪৭ হাজার ২৪৫ জনে।

বাংলাদেশও পেয়েছে করোনার দুঃসংবাদ। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশের করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ জন ও মোট মৃতের সংখ্যা ছয়জন।