এক বছর পর সাদা পোশাকে ফিরছে বাংলাদেশ
ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে তামিম ইকবালের দল। রঙিন পোশাকে দারুণ একটি সিরিজের পর এবার টেস্টে ফিরতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে দীর্ঘ এক বছর পর ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণে ফিরছে বাংলাদেশ।
আগামীকাল বুধবার সিরিজের প্রথম টেস্টে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচটি মাঠে গড়াবে সকালে সাড়ে ৯টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন, টি স্পোর্টস ও নাগরিক টিভি।
ঘরের মাঠে সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচটিই ছিল শেষ আন্তর্জাতিক টেস্ট। ওই ম্যাচে সফরকারীদের ইনিংস ও ১০৬ রানে হারায় স্বাগতিকরা। অবশ্য এর কয়েকদিন আগে পাকিস্তান থেকে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরে মুমিনুল হকের দল। এরপর করোনার কারণে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ছিল বাংলাদেশ। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলে, গত মাসে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেই ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন তামিম-সাকিবরা।
অবশ্য ফেরার সিরিজ মন্দ কাটেনি বাংলাদেশের। কিন্তু ওয়ানডের মতো যে টেস্ট সিরিজ সহজ হচ্ছে না সেটার আভাস আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে সফরকারীরা। ওয়ানডে সিরিজে সময় যখন ক্যারিবীয়রা মাঠে লড়ছিল তখন টেস্টের জন্য তাদের আরেকটি গ্রুপ মিরপুরের একাডেমিতে অনুশীলন করছিল। লম্বা সময় অনুশীলনের পর প্রস্তুতি ম্যাচেও সাফল্য পেয়েছেন রাকিম কর্নওয়ালরা। বিসিবি একাদশের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে সিরিজ ড্র করেছে অতিথিরা। তা ছাড়া এত দিন পর দীর্ঘ সংস্করণে খেলা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।
তবুও ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে জয়ের জন্য মাঠে নামার কথাই শোনালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক, ‘অবশ্যই মাঠে নামার সময় আমরা প্রতিপক্ষকে নিয়ে চিন্তা করি না। নিজেরা নিজেদের ভালোটা বের করার চেষ্টা করি। সেশন বাই সেশন সফল হওয়ার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রেও তাই হবে। আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব। এক বছর পর ক্রিকেটে ফেরা এটা সত্যি চ্যালেঞ্জিং। এক বছর পর যেহেতু ফিরছি, নতুন করে আরেকটা সুযোগ এসেছে টেস্ট ক্রিকেট নতুনভাবে শুরু করার। এটাকে সুযোগ হিসেবেই দেখছি।’
এত দিন পর দীর্ঘ ফরম্যাটে খেলতে সমস্যা হবে না বলেও জানিয়ে রাখলেন মুমিনুল, ‘এক বছর পর আমরা মাঠে ফিরছি, এটা ঠিক। আমরা টেস্ট খেলিনি। তবে বোর্ড কিন্তু ভালো সুযোগ করে দিয়েছে। যেমন—বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। দুটি টুর্নামেন্টই খেলোয়াড়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছি চার-পাঁচ মাস হয়ে গেছে। এত দিনের প্রস্তুতিতে আশা করি ওভারকাম হয়েছে। আমার টিমের প্রতিটি খেলোয়াড়েরই এখন ফিটনেস লেভেল ভালো।’
অন্যদিকে ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দীর্ঘদিন পর মাঠে নামায় কিছুটা অস্বস্তিতে থাকতে পারে বাংলাদেশ। ওই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চায় অতিথিরা। এ ব্যাপারে দলটির কোচ সিমন্স বলেন, ‘আমার মনে হয়, টেস্টের শুরুতে ওরা একটু নড়বড়ে হতে পারে। প্রায় এক বছর ধরে ওরা এই সংস্করণে খেলে না। টেস্টে ফেরার সময়ে শুরুতে একটু ভুগতেই পারে। আমি নিশ্চিত, ওরা দ্রুতই এটা সামলে নেবে। তামিম, সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আছে তাদের। হয়তো বেশি সময় ধরে নড়বড়ে থাকবে না। কিন্তু যদি থাকে, সেই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’
চট্টগ্রামের উইকেট বেশির ভাগ ব্যাটিং সহায়ক হয়। বোলিংয়ে স্পিনাররা বেশি সুযোগ পেয়ে থাকেন। সেই অনুযায়ী, একাদশে স্পিনাররা বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। অধিনায়ক জানিয়ে রাখলেন, ম্যাচের দিন সকালে উইকেট দেখে একাদশ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
টেস্টে দুই দলের সাম্প্রতিক ফল প্রায় একই। শেষ পাঁচ টেস্টের একটিতে জিতেছে বাংলাদেশ, হেরেছে চারটিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজও একই। পাঁচ ম্যাচে জয় পেয়েছে একটিতে। সব মিলিয়ে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সিরিজই হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের মাটিতে।
বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াড : মুমিনুল হক (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন, মোহাম্মদ মিঠুন, ইয়াসির আলী, সাইফ হাসান, আবু জায়েদ, হাসান মাহমুদ, নাঈম হাসান ও ইবাদত হোসেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দল : ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), জার্মেইন ব্ল্যাকউড, এনক্রুমা বোনের, জন ক্যাম্পবেল, রাকিম কর্নওয়াল, জশুয়া ডি সিলভা, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ক্যাভেম হজ, আলজারি জোসেফ, কাইল মায়ার্স, শেন মোজলি, ভিরাসামি পেরমল, কেমার রোচ, রেমন রিফার, জোমেল ওয়ারিক্যান।