এশিয়া কাপের সেই ইশারাটা মনে আছে?
ওপেনিং করছেন নিয়মিত। দারুণ কিছু শট খেলেন। দুই একটা অর্ধশতকও করেছেন। কিছুতেই ইনিংস বড় হচ্ছিল না। এমনিতেই মুখটা গোমড়া থাকে লিটন দাসের। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে উদ্বোধন করার সময়ও লিটন মাঠে নেমেছিলেন গম্ভীর মুখ নিয়ে।
ভুবনেশ্বর কুমার, বুমরা, চাহালদের উড়িয়ে দিয়ে লিটন করে ফেলেন অর্ধশতক। অধিনায়ক মাশরাফি এতেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। ড্রেসিংরুম থেকে দুই হাত ছড়িয়ে ইশারা দেন ইনিংস আরও বড় করার। এরপর ডান হাত দিয়ে নিজের বুকের কাছে বাঘের ছবি থাকা বিসিবির লোগোতে কয়েকবার চাপড় দেন, যেন বললেন, ‘বুকে সাহস রাখো আর এগিয়ে যাও।’ ওই দৃশ্য এখন ইতিহাস।
সেদিন অধিনায়ককে হতাশ করেননি লিটন। শতক করেই ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ভারতীয় বোলারদের রীতিমত শাসন করে ১১৭ বলে ১২১ রান করেন তিনি। এটাই তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি। বিশ্বমঞ্চে নিজেকে চেনালেন লিটন।
এরপর লিটনের রানের চাকা ঘুরেছে। তবে শতক হচ্ছিল না। টি টোয়েন্টিতেও সেই রকম সাফল্য আসছিল না। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে আবারও জ্বলে উঠেছেন লিটন। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য খুঁজছিলেন কাউকে। লিটন সঙ্গটা দিলেন। কটরেল, হোল্ডার, রাসেলদের বলে লিটন খেলেন ৯৪ রানের একটি চোখ ধাঁধানো ইনিংস। মাত্র ৬৯ বলে খেলা ওই ইনিংসে ছিল আটটি চারের মার ও চারটি ছয়ের মার। ওই ম্যাচেও ড্রেসিংরুমে ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। বিশ্বকাপের পর মাঠে ফিরেছেন, সামনে আর কতদিন থাকবেন এসব বিষয়ই ছিল আলোচনায়।
মাশরাফি আলোচনায় ছিলেন, ছিলেন ড্রেসিংরুমে। তাতেই যেন পাল্টে গেল লিটনের ব্যাটিং। ইনিংস বড় করার তাড়নাই যেন কাজ করলো তাঁর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে করলেন নিজের দ্বিতীয় শতক। ১০৫ বলে ১২৬ রানের ইনিংসে অবশ্য তিনি আউট হননি। আহত হয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অবশ্য তেমন কিছু করতে পারেননি। মাত্র ৯ রানেই রা আউট হয়েছেন। ওই ম্যাচে ১১ বছর পর নিজের রেকর্ড ভাঙেন তামিম ইকবাল। ওয়ানডেতে দেশের সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডটা আবার করেন ১৫৮ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে।
তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের আগের দিন আবারও আলোচনায় অধিনায়ক মাশরাফি। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিলেন অধিনায়ক হিসেবে এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ। আর ওই ম্যাচেই লিটন খেললেন মহাকাব্যিক ইনিংস।
দুইদিনও টিকতে দিলেন না তামিমের রেকর্ডটি। জিম্বাবুয়েকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে খেললেন ১৭৬ রানের ইনিংস। ওয়ানডেতে এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। লিটন ১৭৬ রান করেছেন ১৪৩ বলে। যেখানে ছিল ১৬টি চারের মার ও আটটি ছয়ের মার। বৃষ্টির আগে ১০৬ বলে অপরাজিত ছিলেন ১০২ রানে। বৃষ্টি পর ২৮ বলে করেছেন ৭৪ রান! এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং যেন বহুদিন চোখে পড়েনি।
রেকর্ড ভেঙেছে তো কী হয়েছে। অপর প্রান্তে থাকা তামিমই প্রথম লিটনকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান। ড্রেসিংরুমে আরেকজন হাততালি দিচ্ছিলেন। তিনি মাশরাফি। প্রিয় অধিনায়কের বিদায় দিনে এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হতে পারে? গতকালই যে নিজের সঙ্গে মাশরাফির একটি ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন লিটন, ‘ওহ ক্যাপ্টেন, মাই ক্যাপ্টেন!’