খেলা শেষে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করলেন জাপানিরা

Looks like you've blocked notifications!
জাপান-জার্মানি ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের ময়লা সংগ্রহ করছেন জাপানের দর্শকরা। ছবি : সংগৃহীত

পড়ালেখা করে যে, গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে। জাপানি শিশুদের এমন ‘গাড়ি-ঘোড়ার’ লোভ দেখানো হয় না। বরং, তাদের শেখানো হয় ক্লাসরুম-ক্যাফেটেরিয়া ইত্যাদি পরিষ্কার করা, কোনো কাজকেই ছোট করে না দেখা। আর এভাবেই গড়ে ওঠে জাপানের প্রায় প্রতিটি শিশু।

স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক নিজেরাই মিলেমিশে একসঙ্গে করেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। ফলে শুরু থেকে জাপানিরা যে শিক্ষা পায়, তাতে পুরো জীবনটাই কাটে কাজের প্রতি বিপুল উদ্দীপনায়; পরিবার, সমাজ ও দেশের কল্যাণে। এরই নজির তাঁরা রেখেছেন কাতার বিশ্বকাপে খেলা শেষে স্টেডিয়াম পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় খলিফা স্টেডিয়ামে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও চারবারের রানার্সআপ দল জার্মানিকে ২-১ গোলে হারায় জাপান। বিশ্ব মঞ্চে এসে এ রকম ফেবারিট এক দলকে হারানোয় জাপানি দর্শকদের বাঁধভাঙা উল্লাস নিয়ে স্টেডিয়াম ত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা যে জাতিতে জাপানি! অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খলা যে তাঁদের রক্তে নেই, নেই শিক্ষাতে। তাই ব্যতিক্রম তাঁরা।

এমন বড় জয়ের উন্মাদনা নিয়ে স্টেডিয়াম ছাড়েননি। যাওয়ার সময়ে পরিষ্কার করে গেছেন স্টেডিয়ামটি। দর্শকদের ময়লা কুড়িয়েছেন, নিয়ে গেছেন ব্যাগ ভর্তি করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে জাপানিদের এমন কাজের প্রশংসা মিলেছে। এ কারণেই হয়তো জাপানের রাস্তায় কোনো ডাস্টবিন থাকে না! এমনকি, দেশটির কোথাও অন্যান্য দেশের মতো বর্জ্যের ভাগাড় পর্যন্ত নেই। কারণ, জাপানিরা সব রকম বর্জ্য রিসাইকেল করে ফেলেন। সেখানকার ধূমপায়ীরা ব্যাগে করে ছাইদানি নিয়ে ঘোরেন। তাঁদের এমন শৃঙ্খলা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

শুধু তাই নয়, দোকান ও রেস্তোরাঁর কর্মীরা ক্রেতাকে নত হয়ে আন্তরিক অভিবাদন জানান। দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দোকানি দরজায় দাঁড়িয়ে বিনয়ের সঙ্গে বিদায় জানায় ক্রেতাকে। রাস্তায় শিশুদের পারাপারের সময়ে থেমে যায় যানবাহন। আর এ সকল শিক্ষা প্রত্যেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা নিজ পরিবার থেকে গ্রহণ করেন।

জাপানিদের পাশাপাশি কাতার বিশ্বকাপে সৌদি আরব ও মরক্কোও স্টেডিয়ামের ময়লা এবং প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করে প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁদের এমন মহান কাজকে মানুষের মাঝে তুলে ধরে অন্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নেটিজেনরা।

গতকাল খেলা শেষে স্টেডিয়াম পরিষ্কাররত ড্যানো নামের এক ফ্যান আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আপনি যা বিশেষ বলে মনে করেন তা আসলে আমাদের জন্য স্বাভাবিক। আমরা এভাবেই ছোটবেলা থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে অভ্যস্ত।’