জয় দেখছে বাংলাদেশ
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় দিনের শুরুটা সেঞ্চুরিতে রাঙান মুমিনুল হক। তুলে নেন অধিনায়ক হিসেবে প্রথম এবং ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। মুমিনুল ফিরলে ডাবল সেঞ্চুরির উল্লাস করেন মুশফিকুর রহিম। দুই সেঞ্চুরিয়ানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর দিনের শেষভাগে চমক বল হাতে চমক দেখান নাঈম হাসান। ফলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানের বিশাল লিড নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
আট উইকেট হাতে নিয়ে আজ সোমবার তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। মুমিনুল হক ও মুশফিকের ব্যাটে ৬ উইকেটে ৫৬০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। এরপর দিনের শেষের দিকে ব্যাট করতে নেমে দুই উইকেট হারিয়ে ৯ রানে দিন শেষ করে জিম্বাবুয়ে। ২৮৬ রানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার চতুর্থ দিন শুরু করবে সফরকারীরা।
আজ ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশনেই সেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল। ডোনাল্ড ট্রিপিয়ানোকে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান তিনি। টেস্টে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের এটি নবম সেঞ্চুরি। ২০৮ মিনিটে ১৫৬ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন মুমিনুল, যাতে ছিল ১২টি বাউন্ডারি।
১৪ ইনিংস খেলার পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুমিনুল। শেষ সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর লাঞ্চ থেকে ফিরেই সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। অ্যানস্লের বলে বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্কের ঘরে যান এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি এটি। শতকের ঘরে যেতে মুশফিক খেলেন ১৬০ বল। ২১৩ মিনিটের ইনিংসে ছিল ১৮টি বাউন্ডারি। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরেই শেষ ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। ২০১৮ সালে সে ইনিংসে মুশফিক ২১৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। দীর্ঘ ১০ ইনিংস পর আবারো সেঞ্চুরির দেখা পেলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
মুমিনুলের শতরানের ইনিংস থামে লাঞ্চের পর। লাঞ্চ থেকে ফিরে ১৩২ রান করে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক। ৩২৮ মিনিট ব্যাট করে মুমিনুল খেলেছেন ২৩৪ বল। যাতে ১৪টি বাউন্ডারি। মুমিনুলের পর ব্যাট করতে নামা মিঠুন অবশ্য টিকতে পারেননি। ২৩ বল মোকাবিলা করে তিনি ফিরে যান ১৭ রানে।
এরপর লিটনের সঙ্গে জুটি বাধেন মুশফিক । শেষ সেশনে ২৫৪ বলে ১৫০ রান করেন মুশফিক। এরপর ৩১৫ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির পরপরই ইনিংস ৫৬০ রানে ইনিংস ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। ২০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন মুশফিক।
দিনের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। এরপর দুই উইকেটে ৯ রান নিয়ে দিন শেষ করে অতিথিরা।
এরআগে একমাত্র টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৬৫ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় দিন ব্যাট প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৪০ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। গতকাল প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে হারায় ওপেনার সাইফ হাসানের উইকেট। অফস্টাম্পের বাইরের বলে সাইফের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় চাকাভার গ্লাভসে। সাইফ ফেরেন ৮ রানে।
সাইফকে হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে প্রতিরোধ গড়েন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এই জুটিতে দ্বিতীয় সেশনের অনেকটা সময় পার করে স্বাগতিকরা। কিন্তু আশা দেখিয়েও দলকে বেশি দূর নিতে পারেননি তামিম ইকবাল, ফিরে যান ৪১ রানে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত ২৭ রানের মাথায় অনন্য রেকর্ড গড়েন তামিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রবেশ করেন ১৩ হাজার রানের ঘরে। তবে ইতিহাস গড়ার দিন বেশি দূর যেতে পারলেন না বাঁহাতি ওপেনার।
তামিম ফিরলেও উইকেটে থিতু হয়ে ছিলেন শান্ত। ১০৮ বলে তুলে নেন নিজের ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। আস্থার সঙ্গে খেলতে থাকা শান্তর প্রতিরোধ ভাঙেন চার্লটন। ৪৯.৪তম ওভারে উইকেটকিপার চাকাভার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে যান শান্ত। ফেরার আগে ১৩৯ বলে সাত বাউন্ডারিতে ৭১ রান করেন তিনি।
শান্ত-তামিমকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন মুমিনুল হক ও মুশফিক। এই জুটিতে দিনের শেষ সেশন পার করে দেয় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ২৬৫/১০ (কেভিন ২, মাসাভরে ৬৪, আরভিন ১০৭, সিকান্দার ১৮, টেইলর ১০, মারুমা ৭, চাকাভা ৩০, ট্রিপিয়ানো ৮, চার্লটন ০, ভিক্টর ৬; এবাদত ১৭-৮-২৬-০, রাহি ২৪-৬-৭১-৪, নাঈম ৩৮-৯-৭০-৪, ২৭.৩-১-৯০-২)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৫৬০/৬ (তামিম ৪১, সাইফ ৮, শান্ত ৭১, মুমিনুল ১৩২, মুশফিক ২০৩, মিঠুন ১৭, লিটন ৫৩, তাইজুল ১৪* ; সিকান্দার ৩০-২-১১১-১ , ট্রিপিয়ানো ৩০-৬-৯৬-১, নাইছু ২৭-৩-৮৭-১, তসুমা ২৫-২-৮৫-১ , আন্ডিলুগু ৪২-৪-১৭০-২ )।
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস : (কেভিন ৮, মাসাভরে ০, ট্রিপিয়ানো ০, টেইলর ১*; নাঈম ২-১-৪-২, তাইজুল ২-০-৫-০)।