বাংলাদেশকে পাত্তাই দিল না নিউজিল্যান্ড
ইউনিভার্সিটি ওভালের ছোট মাঠ। সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ কোচও জানিয়েছেন, এই মাঠে প্রচুর রান করা সম্ভব। কিন্তু, বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে কে বলবে—এই মাঠেই এমন হতশ্রী ব্যাটিং করেছেন তামিম-মুশফিকরা? দ্রুতগতির পেস দিয়ে বাংলাদেশকে উইকেটে টিকতেই দেয়নি নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিংয়েও স্বাগতিকেরা ধরে রাখল সেই ধারাবাহিকতা। দুই বিভাগের নৈপুণ্যে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ।
আজ শনিবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে আট উইকেটে উড়িয়ে দিল নিউজিল্যান্ড। এই জয়ের মাধ্যমে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টম ল্যাথামের দল। ম্যাচটি ছিল ল্যাথামের শততম ওয়ানডে। নিজের শততম ম্যাচ জয়ে রাঙালেন ল্যাথাম।
নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল সেখানকার কন্ডিশন। বাতাসের মধ্যে অতিরিক্ত সুইং কাল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। মূল ম্যাচে তাই হয়েছে। শুরুতে ব্যাটিংটা একটু কঠিনই ছিল। খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডানেডিনের আকাশ মেঘলা ছিল। ওই কন্ডিশনের সুবিধাটাই কাজে লাগিয়েছেন কিউই বোলারেরা। ট্রেন্টের দারুণ সব সুইং, দীর্ঘদেহী কাইল জেমিসনের বাউন্সের সঙ্গে জিমি নিশামের বোলিং—সব মিলিয়ে কিউইদের সামনে রীতিমতো ভড়কে যায় বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারেই বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিমকে ১৩ রানে সাজঘরে পাঠান বোল্ট। কিউই তারকার করা বল সরাসরি লাগে তামিমের প্যাডে। একই ওভারের চতুর্থ বলে রানের খাতা খোলার আগে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। নিউজিল্যান্ডের অভিষিক্তি ডেভন কনওয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
এরপর একে একে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। উইকেটে থিতু হয়ে ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। কিছুটা লড়াই করে লিটনের মতোই পথ হারান মুশফিকুর রহিম। নিশামের বলে মুশফিকের কাট শট বাড়তি বাউন্সের কারণে পয়েন্টে না গিয়ে গালিতে যায়। সেখানে থাকা ফিল্ডার মার্টিন গাপটিল সুযোগ হাতছাড়া না করে লুফে নেন।
এরপর শুধু হতাশাই দেখেছে বাংলাদেশে। মিডল অর্ডারে টিকতেই পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন, মেহেদী হাসান মিরাজ, অভিষিক্ত শেখ মেহেদি। মাঝে তাসকিন আহমেদকে নিয়ে কিছুটা লড়াই করেন মাহমুদউল্লাহ। ২৭ রানের মাথায় মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধও ভেঙে দেন ম্যাট হেনরি। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় সর্বোচ্চ রানও আসে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকেও। বাকিদের মধ্যে মুশফিক ছাড়া কেউ ২০-এর ঘর পার করতে পারেননি।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে ২৭ রান দিয়ে চারটি উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট। দুটি করে নেন নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। একটি নেন কাইল জেমিসন।
১৩২ রানের ছোট লক্ষ্য। জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভার থেকেই আগ্রাসী ছিল নিউজিল্যান্ড। ওভারের চতুর্থ বলে মুস্তাফিজকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেন মার্টিন গাপটিল। পরের বলে হাঁকান ছক্কা। এরপর হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজকে তুলোধুনো করে মাত্র ১৯ বলে তোলেন ৩৮ রান। আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যানকে শেষ পর্যন্ত থামান তাসকিন আহমেদ।
গাপটিল ফিরলে কিছুটা রানের গতি কমেছে নিউজিল্যান্ডের। তবে তাতে সমস্যা হয়নি। জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে মাত্র ২১.২ ওভার সময় নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দলের পক্ষে সর্বাধিক ৪৯ রান করেন নিকোলস। ৫৩ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ছয়টি বাউন্ডারি।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ২৩ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। ৪৯ রানের খরচায় সমান একটি নেন হাসান মাহমুদ।
ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের পরের ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। দিবা-রাত্রির ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল ৭ টায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪১.৫ ওভারে ১৩১ (তামিম ১৩, লিটন ১৯, সৌম্য ০, মুশফিক ২৩, মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মিরাজ ১, মেহেদি ১৪, তাসকিন ১০, হাসান ১, মুস্তাফিজ ১*; বোল্ট ৮.৫-০-২৭-৪, হেনরি ৯-১-২৬-১, জেমিসন ৮-১-২৫-০, নিশাম ৮-১-২৭-২, স্যান্টনার ৮-০-২৩-২)।
নিউজিল্যান্ড: ২১. ২ ওভারে ১৩২/২ (গাপটিল ৩৮, নিকোলস ৪৯*, কনওয়ে ২৭, ইয়াং ১১*; মুস্তাফিজ ৪-০-২৬-০, হাসান ৪.২-০-৪৯-১, তাসকিন ৪-০-২৩-১, মেহেদি ৬-০-১৭-০, মিরাজ ২-০-৯-০, সৌম্য ১-০-৫-০)।
ফল: ৮ উইকেটে জয়ী নিউজিল্যান্ড।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ট্রেন্ট বোল্ট।