ব্যাটিং দুর্দশায় অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের বড় হার
নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ধস! ৪৫ রানেই নেই ছয় টপ অর্ডার ব্যাটার। দ্বিতীয় ইনিংসেও একইভাবে ব্যর্থ টপ অর্ডার। তাতে নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে লড়াই করেও দলকে উদ্ধার করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। হতাশার ব্যাটিংয়ে অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বড় ব্যবধানে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে।
অ্যান্টিগায় দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনই ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট মাঠে গড়াবে আগামী ২৪ জুন। দুটি ম্যাচই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অধীনে।
সাদা পোশাকে বাংলাদেশের ব্যর্থতার মূল কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। গেল কয়েক মাস ধরেই এই ব্যাটিং ব্যর্থতা ডোবাচ্ছিল বাংলাদেশকে। এইতো কদিন আগে ঘরের মাঠেও দেখল একই হতাশা। এর জন্য বদল করা হলো অধিনায়ক। কিন্তু তাতেও মিলল না স্বস্তি। তৃতীয় মেয়াদে নেতৃত্বে ফেরা সাকিব আল হাসানের শুরুটা হলো হারের তিক্ততা নিয়ে।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে পরাজয় থেকে মাত্র ৩৫ রান দূরে থেকে আজ রোববার দিন শুরু করে বাংলাদেশ। এই রান তাড়া করতে স্রেফ ২৮ মিনিট সময় নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের দিন উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া ক্যাম্ববেল ও বনার মিলে দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই বাংলাদেশকে হারিয়ে দেন। ক্যাম্ববেল করেন ৫৮ রান আর ব্ল্যাকউড করেন ২৬ রান।
গতকাল শনিবার ১১২ রান দূরে থেকে টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনেই মোট চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা দুই বাঁহাতি ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হককে সাজঘরে পাঠান কাইল মায়ার্স। এরপর কেমার রোচ ফেরান লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়।
দিনের শুরুতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ১৭ রানে বিদায় নেন শান্ত। মায়ার্সের সুইংয়ে ভুগতে দেখা যায় মুমিনুলকেও। তিনিও মায়ার্সের বলেই এলবির শিকার হন।
বছর জুড়ে ছন্দে থাকা লিটন দাস ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে পারলেন না হতাশার মুখ। রোচের করা স্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে আলগা শটে স্লিপে ক্যাচ দেন লিটন। ১৫ বলে ১৭ রানে শেষ হয় তাঁর ইনিংস।
এর একটু পরেই বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। গতকাল ব্যাটিংয়ে নেমে থিতু হয়ে যাওয়া জয় হুট করেই যেন মনোযোগ হারান। তিনিও উইকেটের পেছনে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। ১৫৩ বলে তিন বাউন্ডারিতে ৪২ রান করে ফেরেন জয়।
প্রথম সেশনে ২৯ ওভার খেলে ৬৫ রান তোলে বাংলাদেশ। এই সেশনেই মূলত ৪ উইকেট হারিয়ে বড় বিপদে পড়ে যায় সাকিবের দল। শেষ পর্যন্ত সোহানকে নিয়ে সাকিব নিজেই আবারও হাল ধরেন। সপ্তম উইকেটে উপহার দেন ১২৩ রানের জুটি। দুজনেই তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। এই জুটিতে ভর করেই দলীয় রান প্রায় আড়াইশ’র কাছাকাছি যায় বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম ইনিংসে লিড থাকায় ক্যারিবীয়দের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৮৪ রানের।
ব্যাট হাতে ৬৩ রানের ইনিংস উপহার দেন সাকিব। ৯৯ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ছয়টি বাউন্ডারি। তাঁর সঙ্গে উইকেটে থেকে ৬৪ রান করেন সোহান। ১৪৭ বলে তিনি হাঁকান ১১টি বাউন্ডারি।
৮৪ রানের এই ছোট লক্ষ্য তাড়ায় গতকাল তিন উইকেট হারালেও জয় পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। সাত উইকেট হাতে রেখেই জয়ের দেখা পেয়ে যায় ক্যারিবীয়রা।
এর আগে প্রথম ইনিংসেও হতাশা দেখে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো ব্যর্থ হন ব্যাটাররা। এক সাকিব ছাড়া ব্যাট হাতে সবাই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ।
বিপরীতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশনে স্কোরবোর্ডে ২৬৫ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে মেহেদী হাসান মিরাজের কল্যানে ক্যারিবীয়দের তিনশর নিচে থামাতে পারে সাকিব আল হাসানের দল। দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের বোলাররা ভালো করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১০৩ ও ২৪৫ (জয় ৪২, শান্ত ১৭, মুমিনুল ৪, লিটন ১৭, সাকিব ৬৩, সোহান ৬৪, ইবাদত ১, মুস্তাফিজ ৭, খালেদ ০*; রোচ ২৪.৫-১০-৫৩-৫, সিলস ১৪-১-৪৫-০, জোসেফ ১৯-৬-৫৫-৩, মেয়ার্স ১৩-৩-৩০-২, মোটি ১৫-২-৪২-০, রিফার ৫-১-১৭-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৬৫ ও ৮৮/৩ ( ক্রেইগ ১, জন ৫৮, বনার ০, রেইফার ২, ব্ল্যাকউড ২৬, সাকিব ২-০-৩-০, খালেদ ৮-০-২৭-৩ , মিরাজ ২-১-১০-০ , মুস্তাফিজ ৪-১-৭-০, ইবাদত ৪-০-৩০-০ )।
ফল : ৭ উইকেটে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।