ব্যাটিং বিপর্যয়ে হারল বাংলাদেশ

Looks like you've blocked notifications!
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের লড়াই। ছবি : সংগৃহীত

লক্ষ্য বড় নয়। জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২৯ রান। স্পোর্টিং উইকেটে এই রানও তুলতে পারল না বাংলাদেশ। টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার পর দায়িত্ব নিতে পারলেন না মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও। ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

আজ রোববার সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৭৬ রানে থামে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বনিন্ম দলীয় স্কোর। 

এই জয়ের সুবাদে সিরিজে টিকে থাকল নিউজিল্যান্ড। অবশ্য সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচ আগামী বুধবার।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তাড়ায় শুরুতে কিছুটা ভালো করে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে জোড়া বাউন্ডারিতে শুরু হয় স্বাগতিকদের ইনিংস। কিন্তু দুই ওপেনার বেশিক্ষণ থিতু হতে পারলেন না। তৃতীয় ওভারেই হতাশ করলেন লিটন। ম্যাননকির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেছেন ওপেনার লিটন দাস। ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ, লিটন ফেরেন ১৫ রানে।

লিটন ফেরার পর চতুর্থ ওভারে হতাশা বাড়ান সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান। দুজনকেই শিকার বানান অ্যাজাজ প্যাটেল। স্কোরবোর্ডে ২৫ রান তুলতে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

চতুর্থ ওভারে প্যাটেলের বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মেহেদী। ৪ বলে তিনি করেন ১ রান। একই ওভারে ঝুঁকি নিয়ে ছক্কার চেষ্টা করেন সাকিব। কিন্তু টাইমিং ঠিক হয়নি। লং অন থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান কোল ম্যাকনকি। রানের খাতাও খুলতে পারেননি চারে নামা সাকিব।

উইকেট থিতু হওয়া নাঈম ঠিকঠাক ছন্দ পাচ্ছিলেন না। রান রেটের চাপ বাড়ছে দেখে শট খেলার চেষ্টায় ছিলেন। সেটাই বিপদ হয়ে গেল। বাঁহাতি স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রর অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বল লেগে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন নাঈম। ঠিক মতো পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্প হন তিনি। ১৯ বলে দুই চারে ১৩ রান করেন নাঈম।

মেহেদী-সাকিবের পর অ্যাজাজ টিকতে দিলেন না মাহমুদউল্লাহ-আফিফকেও। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে এসেই তুলে নেন দুই উইকেট। দশম ওভারে পরপর দুই বলে ফেরান মাহমুদউল্লাহ-আফিফকে।

ছয় উইকেট হারানোর পর নুরুলকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু ওই লড়াইয়ে বেশিদূর যেতে পারল না বাংলাদেশ। ৭৬ রানেই থেমে গেল মাহমুদউল্লাহর দল। ২০ রান করেন মুশফিক। 

টস জিতে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের প্রথম ওভারটাও ছিল তেমনি উড়ন্ত। দুই বাউন্ডারি আর সিঙ্গেলে প্রথম ওভারে ১১ রান করে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ওভারেও বাউন্ডারি হাঁকান অ্যালেন। তবে অ্যালেনকে আর এগিয়ে যেতে দিলেন না মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় ওভারেই  তাঁকে শিকার বানান কাটার-মাস্টার। ১০ বলে ১৫ রান করে ফেরেন করোনা কাটিয়ে দলে ফেরা অ্যালেন।

দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লেতে রানের চাকা সচল ছিল নিউজিল্যান্ডের। পাওয়ার প্লেতে এক উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৪০ রান তোলে অতিথিরা।

উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে কিউইরা যখন রান তুলছে তখনই এলোমেলো করে দেন সাইফউদ্দিন। নিজের প্রথম স্পেলে এসেই তুলে নেন জোড়া উইকেট। উইল ইয়ং ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে এলবিডব্লিউ করেন তিনি।

সাইফের প্রথম ৩ বলে ছয় রান নেন ইয়ং। চতুর্থ বলটি ফ্লিক করার চেষ্টায় ব্যাটে খেলতে পারেননি। আম্পায়ার জোরাল আবেদনে সাড়া দিলে রিভিউ ইয়ং। তাতে লাভ হয়নি। রিভিউ নষ্ট করে ২০ রানে ফেরেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ২৭ বলে ভাঙে ৩০ রানের জুটি।

ইয়ংয়ে এক বল পর এলবিডব্লিউ হয়ে যান ডি গ্র্যান্ডহোম। তিনিও রিভিউ নেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ওই রিভিউটিও নষ্ট হয়। শূন্য রানেই ফেরেন তিনি।

দশম ওভারে বল হাতে সাফল্য পেয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। রাচিন রবীন্দ্রকে বোল্ড করে নিজের প্রথম শিকার নেন শততম ম্যাচ খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথামকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ফেরান মেহেদী হাসান। আগের ম্যাচে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলা ল্যাথাম এবার করেন মাত্র ৫ রান।

দারুণ শুরুর আভাস দিয়ে দ্রুত উইকেট হারিয়ে কিছুটা ছন্দ হারায় নিউজিল্যান্ড। ধীরে ধীরে কমতে থাকে রানের গতিও। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। ওপেনিংয়ে সাফল্য না পাওয়ায় সাত নম্বরে নামেন ব্লান্ডেল। এই পজিশনে হেনরির সঙ্গে দলের হাল ধরেন তিনি। এই জুটিতে ভর করেই ১২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। ইনিংস শেষে ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন নিকোলস। তাঁর সঙ্গে ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন ব্লান্ডেল।

বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। একটি করে নেন মেহেদী হাসান, মাহমুদউল্লাহ ও মুস্তাফিজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১২৮/৫ (অ্যালেন ১৫, রবীন্দ্র ২০, ইয়ং ২০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, ল্যাথাম ৫, নিকোলস ৩৬, ব্লান্ডেল ৩০; সাকিব ৪-০-২৪-০, মুস্তাফিজ ৪-০-২৯-১, মেহেদী ৪-০-২৭-১, সাইফউদ্দিন ৪-০-২৮-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১০-০, নাসুম ২-০-১০-০)।

বাংলাদেশ : ১৯.৪ ওভারে ৭৬/১০ (লিটন ১৩, নাঈম ১৫, মেহেদী ১, সাকিব ০, মুশফিক ২০, মাহমুদউল্লাহ ৩, আফিফ ০, নুরুল ৮, সাইফউদ্দিন ৮, নাসুম ১ ও মুস্তাফিজ ৪; অ্যাজাজ ৪-০-১৬-৪, রবীন্দ্র ৪-০-১৩-১, জ্যাকব ৩-০-১৩-০, ম্যাকনকি ৪-০-১৫-৩, স্কট ৩-০-১৪-১)।

ফল : ৫২ রানে জয়ী নিউজিল্যান্ড।

সিরিজ : ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।