সাক্ষাৎকার

ভিডিও গেম ও পুরোনো খেলা দেখে সময় কাটছে সাইফউদ্দিনের

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাসের কারণে থমকে গেছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। সারা বিশ্বের খেলোয়াড়রা এখন ঘরে বসেই বেকার সময় কাটাচ্ছেন। এ সময়ে অবশ্য অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা দিচ্ছেন। অনেকে আবার গৃহবন্দি হয়ে নানা কাজ করছেন, সেটা শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

বাংলাদেশ দলের পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও ব্যতিক্রম নন। সম্প্রতি নিজের বেতনের অর্ধেক টাকা দান করেছেন দুস্থদের তহবিলে। সাধ্যমতো দান করছেন নিজ এলাকার ফাউন্ডেশনগুলোতেও। এ ছাড়া এই অবসর সময়ে ফিটনেস নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি পুরোনো খেলা দেখা আর অনলাইনের বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও গেম খেলেই সময় কাটছে দেশের অন্যতম এই বোলারের।

আজ বুধবার এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সবাইকে দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন সাইফউদ্দিন। সেইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্যের দাম না বাড়ানোর জন্য অনুরোধও করেছেন এই অলরাউন্ডার।

এনটিভি অনলাইন : কোথায় আছেন?

সাইফউদ্দিন : ছুটি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজ এলাকা ফেনীতে এসেছি, পরিবারের সঙ্গে আছি।

এনটিভি অনলাইন : এই সময়টা কীভাবে কাটছে?

সাইফউদ্দিন : সময়টা এখন পরিবারের সঙ্গেই কাটছে। এর মধ্যে চেষ্টা করি দিনের কিছুটা সময় ফিটনেস নিয়ে কাজ করার। বাসার মধ্যে যতটুকু করা যায় আর কী। বাসার ছাদেও করি। এ ছাড়া টিভি দেখি, মায়ের সঙ্গে গল্প করি, নিউজ দেখি, মোবাইলে গেমস খেলি—এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে।

এনটিভি অনলাইন : বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় কীভাবে?

সাইফউদ্দিন : বন্ধুদের সঙ্গে এখন আর দেখা হয় না। ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় অনলাইনে। বিশেষ করে অনলাইনে যে লুডু খেলা যায়, সেটা খেলি সবাই মিলে। এভাবেই দিন পার করা হয়। তবে আগে মাঝেমধ্যে ছবি দেখতাম। এখন আর সেটাও হয় না। আসলে দেশের এ পরিস্থিতিতে মানসিকতা ভালো নেই।

তবুও ইউটিউবে ক্রিকেটের ম্যাচগুলো দেখি। নিজের বোলিং দেখি, কোথায় কী ঘাটতি ছিল সেসব খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। নিজে নিজে ভাবি যে এটা না করে, কীভাবে করলে আরো ভালো হয়। সেটাই আবার ছাদে বা বাসায় নিজে নিজে চেষ্টা করি। এ ছাড়া অন্য দেশের খেলাগুলোও দেখি। কে কীভাবে বল করছে, ব্যাট করছে এসব দেখি।

এনটিভি অনলাইন : লম্বা সময় ঘরবন্দি থাকায় ফিটনেস ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে কি না?

সাইফউদ্দিন : ফিটনেস ধরে রাখতে বাসায় নিজে নিজে কাজ করাটা একটু কঠিন সবার জন্য। তবে আমার জন্য এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। গত কয়েক মাস যখন ইনজুরিতে ছিলাম, তখন কিন্তু নিজেই সব করতে হয়েছে। তখন থেকেই আমি নিজেকে প্রেরণা দিতাম। যার কারণে এটা আমার জন্য বিরক্তিকর বা পরিশ্রমের মনে হয় না; বরং যেখানেই ট্রেনিং বা জিম করতে হোক না কেন, আমি আনন্দ নিয়েই করি।

এনটিভি অনলাইন : একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব। সব খেলা বন্ধ। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে নিজের কাছে কেমন হতাশা কাজ করছে?

সাইফউদ্দিন : আমার এই বয়সে এমন পরিস্থিতি দেখিনি। আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, তাঁরাও এমন পরিস্থিতি দেখেননি। হয়তো ঘূর্ণিঝড়-বন্যা দেখেছেন; কিন্তু সারা বিশ্বে এমন দুর্যোগ কেউই দেখেনি। এটা আসলে সবার মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার মতো। ব্যক্তিগতভাবে খারাপ লাগছে। সবার জন্য কষ্ট হচ্ছে। তবে এটা তো আর আমাদের হাতে নেই। এখন ঘরে থাকা ছাড়া উপায় নেই। শুধু ক্রীড়াঙ্গন না, সব ক্ষেত্রেই ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও এখন তো আমাদের হাতে কিছুই নেই। প্রকৃতি যেন এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়—এখন সেটাই প্রত্যাশা।

এনটিভি অনলাইন : কিছুদিন আগে বেতনের অর্ধেকটা দুস্থদের তহবিলে দিলেন, এ ছাড়া নিজ নিজ এলাকায় কিছু করছেন কি না?

সাইফউদ্দিন : আসলে অর্থ-সম্পদ আর কদিনেরই, মারা গেলে তো কিছুই নিয়ে যাব না। তাই নিজের অর্থ যদি ভালো কাজে বা কারো উপকারে লাগাতে পারি, এটা নিজের কাছেই স্বস্তিদায়ক। শুধু তহবিলে নয়, চেষ্টা করছি নিজের এলাকাতেও সাহায্য করার। যেখানে যে যে ফাউন্ডেশন দেখছি, সেখানেই কিছু না কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছি। নিজের আত্মীয়স্বজনেরও পাশে থাকার চেষ্টা করছি। নিজের জায়গা থেকে যতটুকু করা যায়, চেষ্টা করছি। সরকার আমাদের যেসব পরামর্শ দিয়েছে, সেসব কথা আত্মীয়স্বজনকেও বলি। এখন বলে তো আর কিছু করতে পারব না। সবাই যদি সচেতন না হয়। এখন নিজেদের ঘরে থাকাটাই মুখ্য।

এনটিভি অনলাইন : দুস্থদের পাশে আপনাদের এই এগিয়ে আসা বাকিদের কতটা প্রেরণা জোগাবে বলে মনে করেন?

সাইফউদ্দিন : আমি আশা করি, আমাদের দেখে সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসবে। আমার এলাকাতেই অনেক উঁচু পরিবার বা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা দুস্থদের সাহায্য করছেন। অনেকেই যে যেভাবে পারছেন, সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন। অনেকেই সাহায্য করার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন। এটা আমার নিজের কাছেই খুব ভালো লাগছে। সবার উদ্দেশে বলব, আপনারা সবাই এ দুর্যোগে অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। শুধু করোনাভাইরাস নয়, সবাই একসঙ্গে কাজ করলে যেকোনো দুর্যোগের বিরুদ্ধেই লড়াই করা সম্ভব।

এনটিভি অনলাইন : লম্বা ইনজুরির পর দারুণভাবে ফিরলেন, কিন্তু এখন আবার খেলা না থাকায় ঘরবন্দি নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করছে কি না?

সাইফউদ্দিন : হতাশার কিছু নেই। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই হাসি-কান্না থাকবে। এটাও জীবনের একটা অংশ। আগে তো আসলে জীবন। বেঁচে থাকলে তো খেলতে পারব। আর কয় বছরই বা খেলব, বেঁচে থাকলে হয়তো ৮-১০ বছর খেলব। তাই জীবনটাই আগে। জীবন যদি ঠিক থাকে, তাহলে খেলা আসবে। এখন মূল গুরুত্ব হলো নিজের দিকে খেয়াল রাখা, সুস্থ থাকা।

এনটিভি অনলাইন : সবার উদ্দেশে কিছু বলুন?

সাইফউদ্দিন : আমি সবার উদ্দেশে বলব, সবাই দয়া করে অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। বিশেষ করে ব্যবসায়ী যাঁরা আছেন, আপনারা জিনিসপত্রের দাম বাড়াবেন না। সময়টা আমাদের খুব খারাপ যাচ্ছে। আপনারা সবাই নিজে সচেতন থাকুন, অন্যকে সচেতন রাখতে পরামর্শ দিন।