সাক্ষাৎকার
‘মানুষ এখন ফুটবলকেও ভালোবাসে’
ফুটবল দিয়ে পুরো বাংলাদেশকে একসূত্রে গেঁথেছে নারী ফুটবল দল। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়া মেয়েদের অর্জনে আনন্দে ভেসেছে দেশের মানুষ। চারদিকে এত খুশির বন্যা দেখে সানজিদা-সাবিনারাও আপ্লুত। সবার ভালোবাসা দেখে সানজিদাদের বিশ্বাস জন্মেছে যে, বাংলাদেশের মানুষ শুধু ক্রিকেট নয় ফুটবলকেও ভালোবাসে।
কদিন আগে হিমালয়ের দেশ থেকে সাফ জিতে ফিরেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ঢাকায় পা রাখা মেয়েদের রাজ্যের ব্যস্ততা চলছে। তার মাঝেই এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে সাফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব নিয়ে কথা বললেন সানজিদা খাতুন।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে অভিনন্দন সানজিদা। প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন—এটা যখন নিশ্চিত হয়ে যান সেই মুহূর্তের অনুভূতি কেমন ছিল?
সানজিদা আক্তার : ধন্যবাদ আপনাকে। ফাইনালের দিন যখন চ্যাম্পিয়ন হলাম তখন আসলে আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না যে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি। নিজের মনেই তখন প্রশ্ন জাগছিল, সত্যিই কি আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি!
এনটিভি অনলাইন : চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরলেন, রাজকীয়ভাবে বরণ করা হলো, প্রথমবার ছাদখোলা বাসে করে ট্রফি নিয়ে ফিরলেন—এই সবগুলো চিত্র স্বপ্নের মতো কি না?
সানজিদা আক্তার : ওইদিনের মুহূর্তটা আসলেই স্বপ্নের মতো। আমার একটা স্ট্যাটাস যে এভাবে ছড়িয়ে পড়বে কিংবা এত গুরুত্ব পাবে আমি কল্পনাও করিনি। আমাদের চাওয়া মতোই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী (যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল) স্যার এত বড় একটা সুন্দর উপহার দিলেন। আসলে এটাও কল্পনা করতে পারিনি। সেদিন সবকিছু অবিশ্বাস্য ছিল। আমার খুব ভালো লাগছে যে ছাদখোলা বাস পেয়েছি। ইউরোপিয়ান লিগগুলোতে যেভাবে ওরা ট্রফি নিয়া আসে, আমরাও ঠিক সেভাবে ট্রফি নিয়ে আসছি। প্রথম একটা ইতিহাস হয়েছে বাংলাদেশে। সেটা আমাদের হাত ধরে। এটা সত্যিই অসাধারণ দিন ছিল।
প্রশ্ন : যখন জানলেন, আপনাদের প্রত্যাশা মতো এমন একটা দিন আসতে চলছে তখন কেমন উত্তেজনা কাজ করছিল?
সানজিদা আক্তার : যখন বিমানে ছিলাম তখন খুব উত্তেজনা কাজ করতেছিল যে কখন আসব। কখন দেশের মানুষের সামনে ট্রফি নিয়ে আর ছাদখোলা বাসে উঠব, সবাইকে দেখব। খুব ভালো একটা অনুভূতি কাজ করছিল। এই দিন ভুলে যাওয়ার মতো নয়।
এনটিভি অনলাইন : সবাই যেভাবে প্রশংসা করছে, তাতে আপনাদের ফুটবলের প্রতি নিবেদনটা আরও বাড়বে কি না?
সানজিদা আক্তার : আসলে আগে ভাবতাম যে, এই দেশে ক্রিকেট বেশি ভালোবাসে, আমাদের ভালোবাসে না। আমাদের সবার ধারণা ছিল এরকমই। কিন্তু এয়ারপোর্টে আসার পরে যখন দেখি যে হাজার হাজার মানুষ আমাদেরকে বরণ করে নিচ্ছেন, এত সাপোর্ট দিচ্ছেন তখন আসলে কখনো কল্পনা করতে পারিনি এইভাবে। এভাবে সবাইকে দেখার পরে অনেক ভালো লাগছে সত্যি। এখন বুঝি বাংলাদেশের মানুষ শুধু ক্রিকেট না ফুটবলকেও ভালোবাসে।
এনটিভি অনলাইন : চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন আপনি—বিষয়টি উপভোগ করছেন কি না?
সানজিদা আক্তার : আমি আগে ফেসবুক চালাতাম না। ফেসবুকটা ২০২১ সালে খোলা হয়। রানি দিদি এটা খুলে দিয়েছিলেন। আমি আসলে ভাবতে পারেনি এত কম সময়ে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠব। আমি এক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান। এত কোটি কোটি মানুষের মাঝেও যে আমাকে সবাই এত ভালোবাসে এটা সৌভাগ্য ছাড়া আর কি হতে পারে।
এনটিভি অনলাইন : তারকা বনে যাওয়া সানজিদা কে কি এখন পর্দাতেও দেখা যাবে?
সানজিদা আক্তার : আমি এরই মধ্যে দুটি বিজ্ঞাপনে কাজ করে ফেলেছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই আমার কাছে আরও দুটি বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব আসে, এরপর নাটকের প্রস্তাব আসে। কিন্তু আমি চাই না এসবের জন্য খেলায় কোনো প্রভাব পড়ুক। আমি একটা নিয়েই থাকতে চাই। সেটা হলো ফুটবল। তাই আমি বিজ্ঞাপন আর নাটকে বেশি যেতে চাই না। ফুটবলটা আমার স্বপ্ন, সেই স্বপ্নটার সঙ্গেই থাকতে পারি। আসলে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি মানেই সব শেষ নয়, আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। দেশকে আরও অর্জন এনে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যেই কাজ করব।
এনটিভি অনলাইন ডেস্ক : এত কিছুর মাঝে ফুটবল বেছে নিলেন কেন?
সানজিদা আক্তার : আমরা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি তখন বঙ্গমাতা নামে একটা টুর্নামেন্ট ছেড়েছিল। বিদ্যালয়ের সবাইকে ওই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা ছিল বাধ্যতামূলক। তো সেখানে আমাদের বিদ্যালয়ে আমি ফুটবল টুর্নামেন্টটি এন্ট্রি করি। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু। প্রথমে বাছাইপর্ব ছিল সেখানে একটু ভালো করি। এরপর বাছাইকৃতদের নিয়ে আয়োজন হয়। তখন স্যার বলেছিলেন, এতদিন আমাদের বিদ্যালয় থেকে ছেলেরা শুধু ফুটবল খেলতো এখন থেকে মেয়েরাও খেলবে। তো স্যারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়েই ফুটবলে আসা। যদিও প্রথমে লজ্জা পেতাম, হাত দিয়ে খেলতাম আমি কিন্তু ফুটবল তো হলো পায়ের খেলা। এরপর ধীরে ধীরে আয়ত্ব করতে শিখি। এভাবেই ফুটবলে আসা।
এনটিভি অনলাইন ডেস্ক : ভক্তদের উদ্দেশ্য কিছু বলতে চান?
সানজিদা আক্তার : আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই যে, আমাকে যারা ভালোবাসে, যারা এভাবে সাপোর্ট করে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি চাই তারা যেন সবসময় এভাবেই আমাদের সাপোর্ট করে ভালোবাসে। সবার ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চেষ্টা করব।