শেখ জামালের ফুটবলার এখন রাজমিস্ত্রি!
ঢাকার ফুটবলে পরিচিত মুখ আরিফ হাওলাদার। নারায়ণগঞ্জের এই ফুটবলার দীর্ঘদিন প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও বিজেএমসি হয়ে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ মৌসুমে খেলেছিলেন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবে। অবাক করার মতো হলেও সত্য, এই তরুণ ফুটবলার এখন রাজমিস্ত্রি।
আরিফ ২০১৮-১৯ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে খেলেছিলেন। আর সর্বশেষ বাতিল হওয়া ২০১৯-২০ মৌসুমে কোনো দল পাননি। দীর্ঘদিন ফুটবল খেললেও আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মা-বাবার চিকিৎসা, ছোট ভাইয়ের দেখভাল ও করোনাকালে পরিবারের খরচ জোগাতে খুবই হিমশিম খেতে হয়। চরম অর্থ সংকটের কারণে লুকিয়ে লুকিয়ে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করছিলেন। কিন্তু এক বন্ধুর পরামর্শে শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি।
আরিফের বাবা স্ট্রোক করে বিছানায়। প্রতি সপ্তাহে ওষুধের পেছনে ১০ হাজার খরচ। মায়ের চোখের সমস্যা, ছোট ভাই ফুটবল খেললেও নিজেকে সেই পর্যায়ে এখনো নিয়ে যেতে পারেননি।
গত বছর দল না পাওয়ায় মূলত সমস্যায় পড়ে যান আরিফ। পুরো এক মৌসুম ঘরে বসে কাটাতে হয় তাঁকে। কোনো আয় না থাকায় করোনাকালে আরিফের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অতিকষ্টে এত দিন সংসার টেনে নিলেও এখন আর পারছিলেন না।
বলেছেনও আরিফ, ‘আমাদের পরিবারের অবস্থা খারাপ ছিল না। ফুটবল খেলে নিজের জমানো টাকা বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেই টাকায় তিনটা বাসও (পরিবহন) কেনা হয়েছিল। বাসগুলো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলত। হঠাৎ সেই সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়, ব্যবসায় চরম ক্ষতি হয়। বাবা স্ট্রোক করে বিছানায়। পুরো পরিবারের অবস্থা এখন বেহাল। মা চোখের সমস্যায় ভুগছেন। কারো কাছে হাত পাততে পারছিলাম না। গেল মৌসুমটা দল পেলে সমস্যা হতো না। তার ওপর করোনার হানা। মা-বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতেই শেষ পর্যন্ত রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতে হচ্ছে।’
রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে কঠিন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এই তরুণ ফুটবলারকে, ‘এই কাজ করতে গিয়ে হাত-পায়ে জখম হয়েছে। আজ সকালেও রড মাথায় করে ছয়তলায় তুলেছি। কাঁধে রক্ত জমে গেছে। পরিশ্রম করতে আমার মোটেও কষ্ট নেই, মা-বাবাকে তো খাওয়াতে পারছি।’