যে কারণে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া

Looks like you've blocked notifications!

অনেক প্রতীক্ষার পর গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্য দিয়ে রাতে হোটেলে পৌঁছেছেন স্টিভেন স্মিথ ও তাঁর দল। প্রায় এক যুগ পর হতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। এই সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা দারুণ রোমাঞ্চিত। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এটি চ্যালেঞ্জের সফর। বাংলাদেশ সিরিজ শেষ করেই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাঠে নামবেন ওয়ার্নাররা। এরপর রয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত অ্যাশেজ সিরিজ। বাংলাদেশ সফরটাকে সেই দুটি সিরিজের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন অসি ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ সিরিজে মূলত দশটি বাধা পার করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে।

ওয়ার্নারকে নিয়ে দুশ্চিন্তা : উপমহাদেশের মাটিতে ডেভিড ওয়ার্নারের ফর্মটা একেবারেই ভালো নয়। সর্বশেষ ভারত সফরে চার টেস্টে মাত্র একটিতে হাফ সেঞ্চুরি করতে সক্ষম হন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এ ছাড়া ২০১৪ সালের পর দেশের বাইরে একটিও সেঞ্চুরি করতে পারেননি ওয়ার্নার। এটি স্মিথের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এ ছাড়া ডারউইনে প্রস্তুতি ম্যাচে জস হ্যাজেলউডের বলে চোট পেয়েছিলেন এই ব্যাটসম্যান। এটাও ভাবনা বাড়াচ্ছে সফরকারী দলটির।

উইকেটের পেছনে কে : পিটার নেভিলকে বাংলাদেশ সফরের দলে নেওয়া হয়নি। সেই কারণে ম্যাখু ওয়েডের ওপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে স্টিভেন স্মিথকে। তবে ব্যাট হাতে ওয়েডের ফর্ম ভাবাচ্ছে দলটিকে। এই কারণে পিটার হ্যান্ডসকম্বকেও দেখা যেতে পারে গ্লাভসজোড়া সামলাতে। স্পেশালিস্ট উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের অভাবটা বাংলাদেশ সফরে ভোগাতে পারে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে উইকেটের পেছনে মুশফিকের বিশ্বস্ত হাত দুটি ভরসা জোগাচ্ছে বাংলাদেশকে।

উসমান খাজার বাজে রেকর্ড : সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়া দলে তিন নম্বরে ব্যাটিং পজিশনে নিজেকে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছেন উসমান খাজা। তবে উপমহাদেশে উসমান খাজার রেকর্ড একবারে বলার মতো নয়। একটি হাফ সেঞ্চুরিও নেই তাঁর। এই কারণে পিটার রেনশ জায়গা দখল করে নিতে পারেন খাজার।   

অভিজ্ঞ স্পিনারের অভাব : বাংলাদেশ দলে সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলামদের মতো স্পিনাররা রয়েছেন। তবে অস্ট্রেলিয়া দলে স্পিনাররা ততটা অভিজ্ঞ নন। অ্যাশটন অ্যাগার টেস্ট খেলেছেন সবেমাত্র দুটি। এ ছাড়া মিচেল সুয়েপসনের এখনো টেস্টে অভিষেকই হয়নি। অভিজ্ঞ বলতে কেবলমাত্র নাথান লায়ন। উপমহাদেশের মাটিতে অনভিজ্ঞ স্পিনারের কারণে বেশ বেগ পেতে হতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশ : ২০০৬ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলেবে অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ রিকি পন্টিংয়ের অভিনায়কত্বে বাংলাদেশে সিরিজ জয় করেছিল অসিরা। এরপর মাইকেল ক্লার্কের দীর্ঘ অধিনায়কত্বের সময়ে বাংলাদেশে আসতে পারেনি দলটি। ২০০৬ সালে টেস্টে বাংলাদেশ ছিল আনাড়ি প্রতিপক্ষ। তারপরও সিরিজটা জমিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। গত এক যুগে অনেক বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশেষ করে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, পরের বছর এশিয়া কাপের ফাইনাল। এ ছাড়া এ বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছেন তামিম-সাকিবরা। ঘরের মাটিতে ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাকেও চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। টাইগারদের সাম্প্রতিক ফর্মটা ভীতি ছড়াচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার।

ম্যাক্স ফ্যাক্টর : দলে নেই মিচেল মার্শ। তাই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে স্মিথকে। ম্যাক্সের সাম্প্রতিক ফর্মটা ভালো হলেও অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁর ওপর ভরসা করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে উপায় নেই। ম্যাক্সওয়েল হতাশ করলে তার ফলটা কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে ভুগতেই হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব রয়েছেন।  

আবহাওয়া : দীর্ঘ এক যুগ পর অস্ট্রেলিয়া দল খেলতে এসেছে বাংলাদেশে। তবে বাংলাদেশের আকাশ সিরিজটার ওপর কালো ছায়া হয়ে রয়েছে। দুটি টেস্টেই বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে সেটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য বিপদ ডেকে আনবে। সিরিজটা ড্র হলে র‍্যাংকিংয়ে পাঁচে নেমে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়া।

উপমহাদেশে বাজে রেকর্ড : এই উপমহাদেশে অস্ট্রেলিয়ার বাজে পারফরম্যান্সও সিরিজটাকে প্রভাবিত করবে। এখানকার আবহাওয়ায় অসিদের রেকর্ডটা একেবারে বাজে। এখানে সর্বশেষ চার সিরিজেই হেরেছে দলটি। ১৩ টেস্ট খেলে জিতেছে মাত্র একটিতে। কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে তাদের। ২০১১ সালে সিরিজজয়ের পর এই উপমহাদেশে আর সিরিজ জিততে পারেনি দলটি।

পারিশ্রমিক যুদ্ধের প্রভাব : পারিশ্রমিক নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। এ নিয়ে ক্রিকেটার-বোর্ডের সম্পর্কটা বেশ নাজুক হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে বোর্ড-ক্রিকেটার সম্পর্কটা আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে চাইবেন ক্রিকেটাররা। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ না জিতলে সেটি যে সম্ভব নয়।