বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি

Looks like you've blocked notifications!
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বিজয় উদযাপন। ছবি : আইসিসির সৌজন্যে

১৯৯৯ বিশ্বকাপ দিয়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে বাংলাদেশের প্রবেশ। ইংল্যান্ডে প্রিয় দল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা হয়তো খুব বেশি ছিল না। কিন্তু প্রথমে স্কটল্যান্ড এবং পরে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে গোটা দেশকে আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন আমিনুল-মিনহাজুলরা। প্রথম বিশ্বকাপে লাল-সবুজের বিজয়-নিশান যাঁরা উড়িয়েছিলেন, তাঁদের নিয়ে এনটিভি অনলাইনের বিশেষ আয়োজন।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : ১৯৯৯ বিশ্বকাপে তাঁর অধিনায়কত্বে স্কটল্যান্ড এবং বিশেষ করে পাকিস্তানকে হারিয়ে আলোড়ন তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে ব্যাটসম্যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল ছিলেন নিষ্প্রভ। পাঁচটি ম্যাচ খেলে মাত্র ৪৫ রান করেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ১৪৫ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলা বুলবুল অবসরের পর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের কোচের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর মূল দায়িত্ব ক্রিকেটে এশিয়ার পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে কোচিং করানো। ১৩টি টেস্ট খেলে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরি এবং ৩৯টি ওয়ানডে খেলে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করা বুলবুল এখন সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : প্রথম বিশ্বকাপের দলে শুরুতে রাখা হয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানকে। তবে মানুষের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে তাঁকে দলে নিতে বাধ্য হন নির্বাচকরা। সবার ভালোবাসার প্রতিদানও দুর্দান্তভাবে দিয়েছিলেন দুটি হাফ সেঞ্চুরি করে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ম্যাচ-সেরা হওয়ার কৃতিত্ব মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুকছিল, ঠিক তখনই বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়ান তিনি। তাঁর অপরাজিত ৬৮ রানের এক অসাধারণ ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ পেয়ে যায় লড়াই করার মতো সংগ্রহ। এবং জিতে যায় ২২ রানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচে দল হারলেও নান্নুর ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৫৩ রানের আরেকটি চমৎকার ইনিংস। ২৭টি ওয়ানডে খেলে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক নান্নু এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করছেন। 

ফারুক আহমেদ : প্রথম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। যদিও ইংল্যান্ডে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। দুই ম্যাচ খেলে মাত্র ১৬ রান করেন ফারুক আহমেদ। খেলা থেকে অবসর নিলেও ক্রিকেটের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক। সাতটি ওয়ানডে খেলে একটি ফিফটি করেছেন ফারুক।   

আকরাম খান : প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। ওই ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪২ রান ছিল তাঁর। অবসরের পর শুরুতে নির্বাচক এবং পরে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করা আকরাম খান এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম পরিচালক। আটটি টেস্ট ও ৪৪টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে কখনো ৫০ ছুঁতে না পারলেও ওয়ানডেতে পেয়েছেন পাঁচটি ফিফটি।

এনামুল হক মনি : বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ খেলে বাঁ-হাতি স্পিনে তিনটি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। অবসরের পর এখন আইসিসির আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। ১০টি টেস্ট খেলে ১৮ উইকেট এবং ২৯টি ওয়ানডে খেলে ১৯ উইকেট পেয়েছেন এনামুল হক মনি। 

মোহাম্মদ রফিক : প্রথম বিশ্বকাপে তিনি দুই ম্যাচ খেলে দুই উইকেট নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই বাঁ-হাতি স্পিনার ৩৩ টেস্টে ১০০ উইকেট এবং ১২৫ ওয়ানডেতে ঠিক ১২৫টি উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানলেও ক্রিকেট ছেড়ে দেননি। আবাহনী লিমিটেডের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করছেন দুই বছর ধরে। পাশাপশি ব্যবসাও করছেন তিনি।

খালেদ মাহমুদ সুজন : প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক তিনি। ব্যাট হাতে ২৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার পর মিডিয়াম পেসে ৩১ রানের বিনিময়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ আফ্রিদি, ইনজামাম-উল-হক ও সেলিম মালিককে। ঐ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও ওঠে খালেদ মাহমুদ সুজনের হাতে। অবসরের পর কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া সুজন কিছুদিন জাতীয় ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ১২টি টেস্ট ও ৭৭টি ওয়ানডে খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। ওয়ানডেতে একটি ফিফটি করার পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ৬৭টি। টেস্টে নিয়েছেন ১৩ উইকেট, তবে ব্যাট হাতে তেমন সফলতা পাননি জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক। বর্তমানে বিসিবির পরিচালক সুজন এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন।  

নাইমুর রহমান দুর্জয় : বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যান-বোলার দুই ভূমিকায় ভালোই সাফল্য পেয়েছিলেন। পাঁচটি ম্যাচ খেলে ১১৪ রান করার পাশাপাশি অফস্পিনে দুই উইকেট নিয়েছিলেন। আটটি টেস্ট ও ২৯টি ওয়ানডে খেলা দুর্জয় ক্রিকেট মাঠকে বিদায় জানালেও ক্রিকেটাঙ্গন ছাড়তে পারেননি। কিছু দিন নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করে এখন তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি দুর্জয় বর্তমান জাতীয় সংসদের একজন সম্মানিত সদস্যও।

খালেদ মাসুদ পাইলট : বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন উইকেটরক্ষক। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর ক্রিকেট কোচিংয়ে যুক্ত করেছেন নিজেকে। নিজের জেলা রাজশাহীতে একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি গড়ে তুলেছেন পরম নিষ্ঠায়। ৪৪ টেস্ট ও ১২৬ ওয়ানডে খেলা পাইলট ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। টেস্টে একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি ফিফটি এবং ওয়ানডেতে সাতটি ফিফটি আছে তাঁর।

মেহরাব হোসেন অপি : বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬৪ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪২ রানের দুটো দারুণ ইনিংস এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ফিফটি অপির। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও তিনি। ক্রিকেট থেকে অবসরের পর পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন অপি। মোহামেডানের সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন গত মৌসুমে। প্রথম বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ৯টি টেস্ট খেলে একটি ফিফটি এবং ১৮টি ওয়ানডে খেলে একটি সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি করেছেন।  

শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তবে ইংল্যান্ডে ব্যাট হাতে সময়টা তেমন ভালো কাটেনি। তিন ম্যাচ খেলে করেছিলেন মাত্র ৪১ রান। একটি ম্যাচে ৩৯ রান করলেও অন্য দুই ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনটি টেস্ট ও ২০টি ওয়ানডে খেলা শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ অবসরের পর ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

হাসিবুল হোসেন শান্ত : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে বল হাতে ভালো অবদান ছিল তাঁর। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ২৬ রানে দুই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের বাকি তিন ম্যাচে অবশ্য তেমন ভালো খেলতে পারেননি, মাত্র এক উইকেট নিয়েছিলেন। ডানহাতি পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত পাঁচটি টেস্ট খেলে ছয় উইকেট এবং ৩২টি ওয়ানডে খেলে ২৯ উইকেট নিয়েছেন। অবসরের পর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর। দুই মৌসুম আগে ঢাকার প্রিমিয়ার লিগে ওল্ড ডিওএইচএসের বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

মঞ্জুরুল ইসলাম : প্রথম বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ খেলে তিন উইকেট নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি পেসে। ১৭ টেস্টে ২৮ এবং ৩৪ ওয়ানডেতে ২৪ উইকেট নেওয়া মঞ্জুরুল খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। চীন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন এখন।

নিয়ামুর রশীদ রাহুল : প্রথম বিশ্বকাপের দলে থাকলেও একটি মাত্র ম্যাচ খেলে মাত্র এক রান করতে পেরেছিলেন। দুটি ওয়ানডে খেলা নিয়ামুর রশীদ রাহুল পেশায় ব্যাংকার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ রেফারির দায়িত্বও পালন করেন।

শফিউদ্দিন আহমেদ বাবু : ১৯৯৯ বিশ্বকাপে একটিমাত্র ম্যাচ খেলে এক উইকেট নিয়েছিলেন। ১১টি ওয়ানডে খেলা এই ডানহাতি পেসারের উইকেট-সংখ্যাও ১১। অবসরের পর জড়িয়ে পড়েছেন ব্যবসার সঙ্গে।

জাহাঙ্গীর আলম : প্রথম বিশ্বকাপে মূল দলে সুযোগ পেলেও পরে তাঁর জায়গায় মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে নেওয়া হয়। তবে দলের সঙ্গে থাকলেও কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তিনটি ওয়ানডে খেলা জাহাঙ্গীর আলম অবসরের পর নারায়ণগঞ্জে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন সেই অ্যাকাডেমি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর।