বেঙ্গালুরুতে পারেননি, প্রেমাদাসায় পারলেন মাহমুদউল্লাহ

Looks like you've blocked notifications!

বেঙ্গালুরুর ১৮হাজার দর্শককে সেদিন বাকরুদ্ধ করে দেয়ার সুযোগ ছিল মাহমুদউল্লাহর সামনে। বড় শট খেলার লোভে অবশ্য সেদিন সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি। আর সেই আক্ষেপ ঘুঁচাতে বোধহয় আজ মাহমুদউল্লাহ বেছে নিলেন প্রেমাদাসাকে। ১৮ হাজার দর্শককে চুপ করাতে পারেননি বটে। তবে প্রেমাদাসার ২৩ হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে দিয়ে মাহমুদউল্লাহ এনে দিলেন জয়। গড়ে দিলেন ফাইনালে লড়বার মঞ্চটা।

বাংলাদেশ দলে নিজের শুরু থেকেই মাহমুদউল্লাহ দেখছেন সব ভারগুলো যেন তাঁর উপরেই ভর করে। এই সিরিজের বাকি সব ম্যাচে এই ব্যাটসম্যানের কাঁধে ছিল অধিনায়কত্বের ভার। আর অঘোষিত সেমিফাইনালে চাপলো ম্যাচ জেতানোর ভারটাও।

নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আঙুলের চোটটার জন্য খেলতে পারছিলেন না নিজের স্বাভাবিক খেলাটা। মাহমুদউল্লাহ বুঝেছিলেন। তাই তো শট খেলার দায়িত্বটা নিয়ে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধেই। সাকিব অবশ্য ফিরে গেলেন। মিরাজকে নিয়ে ১২ বলের ছোট্ট পথটা অতিক্রম করতে মাহমুদউল্লাহকে নেতৃত্বটা দিতে হতো সামনে থেকেই।

মাহমুদউল্লাহ সেই নেতৃত্বটা দিয়েছেনও দারুণভাবে। উইকেটের এক প্রান্তে মিরাজ কাটা পড়ছিলেন অহেতুক এক রানআউটে। ওভারটা হয়ে যাওয়ায় মাহমুদউল্লাহ পারছিলেন না স্ট্রাইক প্রান্তে যেতে। এর পরের দুই বল মুস্তাফিজুর রহমান শুধু ডটই দেননি, সাথে নিজেও ফিরেছেন রানআউটের শিকার হয়ে।

কাটার মাস্টার রানআউট হয়ে গেলেও অবশেষে মাহমুদউল্লাহ পেলেন স্ট্রাইক। তবে লক্ষ্যটা ততক্ষণে কঠিন হয়ে গেছে অনেকটাই। চার বলে প্রয়োজন ১২ রান। ওপাশে গিয়েই মাহমুদউল্লাহ হাঁকালেন চার। ব্যবধানটা আসলো আরও কাছে। এবার দরকার তিন বলে আট রান।

চতুর্থ বলটা মিড অফে ঠেলে দিয়েই দুই রানের জন্য রুবেল হোসেনকে নিয়ে দৌড়ালেন মাহমুদউল্লাহ। জয়ের মঞ্জিল ছুঁতে দুই বলে প্রয়োজন ছয় রান। বেঙ্গালুরুর আক্ষেপটা মুশফিকুর রহিম দাফন করেছিলেন দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধেই। মাহমুদউল্লাহও বেছে নিলেন সেই শ্রীলঙ্কাকেই।

বড় শট সেদিন খেলতে পারেননি। ইসুরু উদানার বলে লেগ সাইডের বড় ছয়ে এই ম্যাচ জেতাবেন বলেই কি ভাগ্যদেবতা সেদিন সাড়া দেননি মাহমুদউল্লাহর পক্ষে? পরের বলটা আসলো; সপাটে হাঁকালেন কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের ভরসা বনে যাওয়া এই ‘পার্শ্বনায়ক’।  ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বলটা যতক্ষণে সীমানার ওপাশে। ততক্ষণে বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়ে গেছে উল্লাস। কলম্বোর মাঠটাতে তখন চলছে পিনপতন নীরবতা। মাহমুদউল্লাহ যে স্বাগতিকদের ছিটকে দিয়েছেন তাদেরই স্বাধীনতা উদযাপনের ট্রফি থেকে! কবরের নীরবতা নেমে আসাই তো শ্রেয়।

পার্শ্বনায়ক থেকে এদিন নায়ক বনতে মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১৮ বল। দুই ছক্কার সাথে তিন চারে গড়েছেন ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কারটা যে তাঁর হাতেই সবচেয়ে বেশি মানায়।

সেই ২০১১ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে আজকের ম্যাচ, জয়গুলোতে ব্যাটিংয়ের একটা পাশ আগলে রেখে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন, আছেন। আরও অনেক শ্বাসরোধ করা ম্যাচের শেষটা নিজের আলোয় উদ্ভাসিত করে মাহমুদউল্লাহ থাকবেন সেই আশায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা বুক বাঁধলে দোষের কিছু হবে না বোধহয়।