শুভ জন্মদিন তামিম, সাহস হয়েই থাকুন

Looks like you've blocked notifications!

মাত্র ১৮ বছর পার করা একটা ছেলে যখন জহির খানকে পোর্ট অব স্পেনের তৃতীয় তলায় আছড়ে ফেলেন, তখন তো অবাক হতেই হয়। ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা ইয়ান বিশপের চোয়ালটা সেদিন ঝুলে গিয়েছিল, সেটা নিশ্চিত। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাহস হয়ে থাকার শুরুটা সেদিনই করেছিলেন তামিম ইকবাল।

২০০৭ সালের বিশ্বকাপ। ভারত বনাম বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের সে ম্যাচটায় ব্যাট করছিল বাংলাদেশ। ওই একই ম্যাচে মুনাফ প্যাটেল বোধ হয় নিতেই পারছিলেন না বিশ্বকাপের মতো আসরে বাংলাদেশি এক তরুণ ক্রিকেটার এভাবে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলবেন ভারতীয় বোলারদের। তাই একটু পরপরই তামিমের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছিলেন। মুনাফের ও রকম আচরণের জবাবটা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দিয়েছিলেন ব্যাট দিয়েই। চোখে চোখ রেখে কথা বলার শুরুটাও ওই তামিমই করলেন।

লর্ডসের মাঠে শতক হাঁকানোটা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই স্বপ্নের। তামিম জানলেন, এই মাঠে সেঞ্চুরি হাঁকালে অনার্স বোর্ডে তোলা থাকে সেঞ্চুরিয়ানের নাম। জেনেই বললেন, ওখানে লেখাতে চান নিজের নামটা। প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯৪ বলেই তুলে নিয়েছিলেন শতক। লাফিয়ে যেন আকাশ ছুঁতে চাইছিল খান পরিবারের ছোট ছেলেটা। নিজের জার্সির পেছনটায় ইঙ্গিত করে যেন বলতে চাইলেন, ‘দ্রুত আমার নামটা লিখে ফেল তোমাদের অনার্স বোর্ডে।’

এর পরে অনেক ম্যাচেই তামিমের উড়ন্ত ব্যাটে উড়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু পরীক্ষা তো দিতেই হয়। তামিমও দিয়েছেন। ২০১৪-১৫ সময়টা একদমই পক্ষে ছিল না বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানের। ২০১৫ বিশ্বকাপটায়ও তামিম ছিলেন বিবর্ণই। চারদিকে শুধু সমালোচনার ঝড়। যে ব্যক্তি ক্রিকেটের ‘ক’টাও বোঝেন না, তিনিও যেন তামিমকে পেলেই হয়ে ওঠেন হার্শা ভোগলে কিংবা মার্ক নিকোলাস।

সেই কালো সময়টা আলোয় উদ্ভাসিত করতে তামিম বেছে নিলেন পাকিস্তান সিরিজটা। ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ যেন আটকে ছিল পাকিস্তান জুজুতে। দলও কাটাল সে জুজু। তামিম পেয়ে গেলেন অনেক দিন পর শতক। আরাধ্য সেঞ্চুরিটা হাঁকিয়েই হাতের ইশারায় বোঝালেন, ‘আপনারা কথা বলতে থাকুন, আমি ব্যাট দিয়ে জবাব দিতে প্রস্তুত।’

যে ব্যাটসম্যানের আগের শতকটা এসেছিল দুই বছর পর, তিনিই কি না দুই ম্যাচেই গড়লেন টানা দুই শতকের রেকর্ড। সে সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারটাও গিয়েছিল তাঁর হাতেই। সময়টা মন্দ যেতেই পারে, তবে মোকাবিলাটা করতে হবে সাহস দিয়েই—তামিম যেন বোঝালেন উদাহরণ সহকারেই।

নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসেই এর আগে ছিল একটি মাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম আর বাংলাদেশের ক্রিকেট দ্বিতীয় দ্বি-শতকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে আপনি কী করতেন, জানার প্রয়োজন নেই। তামিম একদম ডাউন দ্য ট্র্যাকে এগিয়ে এসে জুনায়েদ খানকে উড়িয়ে পাঠালেন সীমানার ওপাশে। হ্যালমেটটা খুলে ততক্ষণে উদযাপনে ব্যস্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের সেরা ব্যাটসম্যান।

তামিমকে নিয়ে এত কথা বলতে অবশ্য উপলক্ষের দরকার হয় না। তবে আজকের দিনটা একটু আলাদা। চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবার আলো করে ১৯৮৯ সালের আজকের দিনে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন তামিম ইকবাল খান। একদম ছোট থাকতেই হারিয়েছিলেন বাবা ইকবাল খানকে। তবে তামিমের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হতে পারেনি কোনো কিছুই। মা নুসরাত ইকবাল খান পাশে থেকে জুগিয়ে গিয়েছেন সাহস।

এখন অবশ্য তামিম নিজেও বাবা। ছেলে আরহাম ইকবাল খান আর স্ত্রী আয়েশা ইকবাল খানকে নিয়েই চলছে তাঁর সুখের ছোট্ট সংসারটা। মাঠের মতো বাবা কিংবা স্বামী হিসেবেও তামিমের জুড়ি মেলা ভার।

মাঠে দাপট দেখানোর উদাহরণটা সেই প্রথম দিন থেকেই দিয়ে যাচ্ছেন তামিম। হয়েছেন দেশসেরা ব্যাটসম্যান। একাদশে যখন এমন একজন ব্যাটসম্যান থাকেন, দলও তখন উড়তে পারে আত্মবিশ্বাসের উড়োজাহাজে ভর করে। দলের সাহস হয়ে আপনি আছেন, আপনি থাকুন।