বিশ্বকাপ ১৯৫৮
পেলেতে ভর করে ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ
দুয়ারে কড়া নাড়ছে ক্রীড়াবিশ্বের অন্যতম বড় আসর ফুটবল বিশ্বকাপ। আর মাত্র ২৪ দিন পরেই পুরো বিশ্ব মেতে উঠতে যাচ্ছে ফুটবলের উন্মাদনায়, যার আঁচটা পাওয়া যাচ্ছে এখন থেকেই। ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে এনটিভি অনলাইনও নিয়ে এসেছে বিশেষ আয়োজন। আজ পাঠকদের সামনে হাজির করা হচ্ছে ষষ্ঠ বিশ্বকাপের গল্প। ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের পঞ্চম আসরের অনেক অজানা কথা নিয়ে থাকছে আজকের প্রতিবেদন :
একটা দেশের নায়ক যে হওয়া যায় ফুটবল খেলেও, সেটা প্রথম বোধ হয় দেখিয়েছিলেন পেলেই। পুরো দেশের স্বপ্ন পূরণের ভারটা যেন ছিল তাঁর কাঁধেই। অবশ্য দেশের মানুষকে নিরাশ করেননি এই ফুটবল কিংবদন্তি। তাঁর পাখায় ভর করেই সুইডেনের মাঠে বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসরে ব্রাজিল উড়েছিল প্রথম শিরোপা জয়ের আনন্দে।
১৯৫০ সালের বিশ্বকাপটাই আয়োজনের কথা ছিল সুইডেনের। শেষ পর্যন্ত সুইডেনে গড়ায়নি সে বিশ্বকাপ। তবে ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপটা ইউরোপের দেশটিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সে আক্ষেপ পুষিয়ে দিয়েছে ফিফা। সুইডেনের মোট ১২ শহরের ১২টি মাঠে গড়ায় ৩৫টি ম্যাচ। বিশ্ব ফুটবলের সেরা হওয়ার ষষ্ঠ লড়াই মাঠে ছিল ২২ দিন।
পতাকা হাতে টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ ছয় গোল করা ব্রাজিলের ‘মহানায়ক’।
স্বাগতিক হিসেবে সুইজারল্যান্ড আর আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে পশ্চিম জার্মানি সুযোগ পায় বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলার। এ আসরে মাঠে নামার যোগ্যতা অর্জন করেনি এশিয়া ও আফ্রিকার কোনো দলই। আসছে রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে এ আসরেই শেষ বাদ পড়েছিল ইতালি। এই বিশ্বকাপ দিয়ে আর্জেন্টিনা ফিরেছিল তিন আসর পর।
ষষ্ঠ আসরে বিশ্বকাপের লড়াইয়ে নামা দলগুলো ছিল—আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, মেক্সিকো, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া), সুইডেন, ওয়েলস, যুগোস্লাভিয়া ও পশ্চিম জার্মানি। সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে খেললেও সেটাই ছিল আসছে বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ।
চার দল নিয়ে চার গ্রুপের লড়াই দিয়ে এই বিশ্বকাপের শুরুটা হয় ৮ জুন। প্রথম পর্ব শেষে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পায় পশ্চিম জার্মানি, উত্তর আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, যুগোস্লাভিয়া, সুইডেন, ওয়েলস, ব্রাজিল ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। কোয়ার্টার ফাইনালে পেলের করা একমাত্র গোলে ওয়েলসকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট হাতে পায় ব্রাজিল। বাকি তিন সেমিফাইনালিস্ট দল যথাক্রমে ফ্রান্স, স্বাগতিক সুইডেন ও শিরোপাধারী পশ্চিম জার্মানি।
১৯৫৮ বিশ্বকাপের বল ‘টপ স্টার’।
ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে সুইডেন জায়গা করে নেয় ফাইনালে। অন্যদিকে পেলের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ফ্রান্সকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পা রাখে ব্রাজিল। অবশ্য ব্রাজিলের বিপক্ষে বড় পরাজয়ের শোধটা ফ্রান্স তুলে নেয় ৬-৩ গোলে জার্মানদের পরাজিত করে তৃতীয় সেরা হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে।
নিজের ঘরে বিশ্বকাপ সব সময় যে স্বস্তি দেয়, সেটা কিন্তু সত্যি নয়। আর না হলে পশ্চিম জার্মানিকে দেশের টিকেট ধরিয়ে সুইডেন কেন ফাইনালে হজম করবে পাঁচ গোল! স্টকহোমের রাসুদানা স্টেডিয়ামে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে পেলের জোড়া গোলে ৫-২ ব্যবধানে হেরে নিজেদের মাঠে সুইডেনকে দেখতে হলো ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বজয়ের উন্মাতাল আনন্দ।
পেলে যেন আসরের বড় মঞ্চগুলোকেই করেছিলেন পাখির চোখ। গ্রুপ পর্বে যার ঝুলিতে ছিল না কোনো গোলই, তিনিই কি না কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনাল পর্যন্ত হ্যাটট্রিকসহ করলেন টানা ছয় গোল! পেলের আগে এত কম বয়সে অন্তত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করতে পারেনি কেউ, মাত্র ১৭ বছর বয়সেই দলকে উঠিয়েছিলেন ফাইনালের মঞ্চে। আর তাঁর ম্যাচের জোড়া গোলে ব্রাজিল পেয়ে গেল তাদের ফুটবল ইতিহাসের মহানায়ককে, সঙ্গে প্রথম শিরোপাও।