বিশ্বকাপ ১৯৬৬
ফুটবলের জনকদের প্রথম শিরোপা
যে ইংল্যান্ডের মতোই ছিলনা ফুটবলের কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হওয়ার পক্ষে, শেষমেশ তাদের মাঠেই গড়াল ফুটবল বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। জন্ম যে দেশে সে দেশে এসে ফুটবল অবশ্য জনকের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। তাই সেবারের বিশ্বসেরার মুকুট পরেই টুর্নামেন্টটা শেষ করেছিল স্বাগতিকরা।
পশ্চিম জার্মানি, স্পেন আর ইতালিও ছিল এই বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ার দৌড়ে। তবে বেছে নেওয়া ইংল্যান্ডকেই। প্রথম আয়োজনে সাত শহরের আট ভেন্যুতে ২০ দিনে শেষ হয় ৩২ ম্যাচের এই আসর। এই আসর দিয়েই বিশ্বকাপে প্রচলন হয় মাসকটের। ‘উইলি’ নামের একটি সিংহ ছিল বিশ্বকাপের প্রথম মাসকট।
এই আসরেও ছিল না আফ্রিকার কোনো দল। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি আর উরুগুয়ে ছিল বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিনিধি, উত্তর আমেরিকার পক্ষ থেকে এসেছিল মেক্সিকো। স্বাগতিক হিসেবে ইংল্যান্ড আর আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে ব্রাজিলও এই বিশ্বকাপে খেলেছে সরাসরি।
এশিয়া থেকে একমাত্র দল হিসেবে উত্তর কোরিয়া প্রথম বিশ্বকাপে মাঠে নামে সেবারই। ইউরোপ থেকে এসেছিল মোট নয় দল। বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় পর্তুগালের।
চার গ্রুপে দলগুলোকে ভাগ করে ১২ জুলাই থেকে মাঠে গড়ায় ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। স্বাগতিক ইংল্যান্ড, উরুগুয়ে, পশ্চিম জার্মানি, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, হাঙ্গেরি, সোভিয়েত ইউনিয়ন আর উত্তর কোরিয়া ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। মজার ব্যাপার, অভিষিক্ত দুই দল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে গেলেও সেবার গ্রুপ পর্বের বাধাই পার হতে পারেনি শিরোপাধারী ব্রাজিল।
অভিষেকেই উত্তর কোরিয়া না পারলেও তাদের হারিয়েই প্রথম বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পা রাখে পর্তুগাল। আর্জেন্টিনাকে হারায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। উরুগুয়ে ও হাঙ্গেরিকে হারিয়ে পশ্চিম জার্মানি ও হাঙ্গেরি টিকেট পায় সেরা চারের।
সেমিতে পর্তুগাল হেরে যায় জার্মানদের কাছে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত করে স্বাগতিকরা। পর্তুগালকে হারিয়ে আসরের তৃতীয় হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফাইনালের মহারণে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও পশ্চিম জার্মানি।
জার্মানদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপের স্বপ্নটা অবশ্য সত্য হয়নি। ২-২ সমতায় দারুণ লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানিকে অতিরিক্ত সময়ে আরো দুই গোল দিয়ে ৪-২ ব্যবধানে শিরোপা জিতে নেয় স্বাগতিকরাই। উরুগুয়ে আর ইতালির পর তৃতীয় দেশ হিসেবে ইংল্যান্ড বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় নিজেদের মাঠে গড়ানো প্রথম বিশ্বকাপেই।
প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করে ইংল্যান্ড শিরোপা রেখে দিল ঘরেই!
১৯৬৬ বিশ্বকাপের মাসকট ‘উইলি’।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের বল ‘চ্যালেঞ্জ’।