যে স্টেডিয়ামগুলোতে হবে বিশ্বকাপের লড়াই

Looks like you've blocked notifications!

১৪ জুন শুরু হতে যাচ্ছে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ। রাশিয়া বিশ্বকাপের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে এখনই। জুনের ১৪ তারিখ থেকে ১৫ জুলাই ৩২ দিন ধরে ৩২টি দেশের অংশগ্রহণে বিভিন্ন দেশের তারকাদের পায়ের কৌশলী মহারণ চলবে। ১২টি দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম সাক্ষী হবে এই ফুটবল যুদ্ধের। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কালের সাক্ষী হতে যাওয়া এই ১২টি স্টেডিয়াম সম্পর্কে।

লুঝনিকি স্টেডিয়াম : ৩১ জুলাই ১৯৫৬ সালে এই স্টেডিয়াম উদ্বোধন করা হয়। আগে স্টেডিয়ামটির নাম ছিল সেন্ট্রাল লেলিন স্টেডিয়াম।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত এটি। স্টেডিয়ামের মোট আসন সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩৬০। মস্কো শহরের খামোভনিকি জেলায় এর অবস্থান। মস্কোভা নদীর বাঁকে জন্মানো সুগভীর তৃণক্ষেত্র থেকে ‘লুঝনিকি’ নামটির উৎপত্তি ঘটেছে। ১৯৯০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের মাঠ ছিল এই স্টেডিয়াম। তখন ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। ২০০৮ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ও ২০১৩ সালে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসের আসর অনুষ্ঠিত হয় এখানে। রাশিয়ার সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম হওয়ায় এবারের বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচ আয়োজন করার গৌরব অর্জন করবে এই স্টেডিয়াম।

অতক্রিটিয়ে অ্যারিনা : ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করা হয়। রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করা এই স্টেডিয়ামটি বহু উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়। এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার ৩৬০। বেশিরভাগ সময়ে এই স্টেডিয়ামে ঘরোয়া ফুটবলের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে রাশিয়া জাতীয় ফুটবল দলের ম্যাচও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। অতক্রিটিয়ে অ্যারিনা নাম হলেও ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে এই স্টেডিয়ামের নাম স্পার্টাক স্টেডিয়াম নামে ডাকা হবে।

ক্রেস্তভস্কি স্টেডিয়াম : গত বছর তুলনামূলক নতুন এই স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শেষ হয়। প্রথমে এর নাম ছিল গাসপ্রোম আরেনা। সেন্ট পিটার্সবার্গের মনোরম ক্রেস্তভস্কি দ্বীপে এর অবস্থান। ৬৮ হাজার ১৩৪ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়াম ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা গড়িয়ে ২০১৭ সাল হয়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ থেকে এই স্টেডিয়ামের নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়াম নামে সুপরিচিত হবে। তবে শুরুতেই এই স্টেডিয়াম বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দেয়। নরওয়েজীয় ফুটবল পত্রিকা জসিমর গত বছর মার্চ মাসে দাবি করে, এই স্টেডিয়াম তৈরির প্রকল্পে কয়েকজন শ্রমিক ছিলেন উত্তর কোরিয়ার ‘ক্রীতদাস’।

কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম : রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের জন্য ৩৫ হাজার ২১২ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়াম প্রস্তুত করা হয়। অবশ্য বিশ্বকাপের পর ধারণক্ষমতা কমিয়ে ২৫ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। এই স্টেডিয়ামকে অ্যারিনা বালটিকা নামেও ডাকা হয়। ২০১৬-১৮ সালব্যাপী নির্মাণকাজ শেষ করে ২০১৮ সালের ২২ মার্চ এই স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের কিছু ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।

কাজান অ্যারিনা : রাশিয়ার তাতারস্থান কাজানে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। ৪৫ হাজার ৩৭৯ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে রুবিন কাজান তাদের হোম ম্যাচগুলো খেলে থাকে। এই স্টেডিয়ামে রয়েছে ইউরোপের সর্ববৃহৎ বাইরের দিকের পর্দা। ২০১৭ সালের ফিফা কনফেডারেশন কাপের ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

নিঝনি নওগোরোদ স্টেডিয়াম : ৪৪ হাজার ৮৯৯ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শেষ হয় এ বছরেই। রাশিয়ার নিঝনি নওগোরদে অবস্থিত এই স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের বেশ কিছু ম্যাচ আয়োজন করার সাক্ষী হবে। রাশিয়া ফুটবল প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ এবং নিঝনি নওগোরোদের ঘরোয়া ম্যাচগুলো এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

কসমস অ্যারিনা : রাশিয়ার সামারায় ৪৪ হাজার ৯১৮ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়াম এবার বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে এই স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শেষ হয়। বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের পর থেকে এই স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তিত হয়ে সামারা নামকরণ করা হবে। এফসি ক্রিলিয়া সোভেতভ সামারা এবং রাশিয়া প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলো এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

ভলগ্রোগাদ অ্যারিনা : রাশিয়ার ভলগ্রোগাদে ৪৫ হাজার ৫৬৮ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামের ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এই স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকা বেশ অনুন্নত। টাকা বাঁচাতে বেশ স্বল্প পরিসরে এই স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এই স্টেডিয়ামের নকশায় অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ থাকলেও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মূল ভবনে সেগুলো সংযোজন করা হয়নি। বিশ্বকাপের ম্যাচের পাশাপাশি এই স্টেডিয়ামে এফসি রটোর ভলগ্রোগাদের ঘরোয়া ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়। 

মর্ডোভিয়া অ্যারিনা : রাশিয়ার মর্ডোভিয়ার সারানস্কে ২০১৭ সালে এই স্টেডিয়াম নির্মিত হয়। ৪৪ হাজার ৪৪২ দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে এর আগে এফসি মর্দোভিয়া সারানস্কের ঘরোয়া ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো। গামলা-আকৃতির মাঠটি বিশ্বকাপের জন্য ৪৪ হাজার ৪৪২ জন দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন করে বানানো হলেও বিশ্বকাপের পরে আসন সংখ্যা কমিয়ে ২৮ হাজার করা হবে। বাম স্ট্যান্ড ও ছাদের মধ্যবর্তী অংশে অবসর সময় কাটানোর এবং বিনোদনের জন্য একটি স্থান নির্মাণ করা হচ্ছে।

রোস্তভ অ্যারিনা : ২০১৭ সালে রাশিয়ার রোস্তভ-অন-দনে এই স্টেডিয়াম নির্মিত হয়। ৪৫ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়াম রাশিয়া বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি এখন পর্যন্ত রুশ প্রিমিয়ার লিগে এফসি রোস্তভের গোম গ্রাউন্ডের ম্যাচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত দন নদীর তীরে সবচেয়ে বড় স্থাপনা। এই স্টেডিয়ামে পরে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বাণিজ্যিকীকরণের পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

ফিস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম : ২০১৭ সালে রাশিয়ার সোচিতে ফিস্ট অলিম্পিক স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। ৪০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়াম মূলত ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিকের জন্য নির্মিত হয়েছিল। এখানে এই আয়োজনের উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। স্টেডিয়ামটি আবদ্ধভাবে তৈরি করা হলেও ২০১৬ সালে এটি পুনরায় খোলা হয়েছিল, যাতে গত বছর কনফেডারেশন কাপ ও ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো আয়োজন করতে পারে।

ইয়েকাতেরিনবুর্গ অ্যারিনা : ৩৫ হাজার ৬৯৬ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়াম রাশিয়ার বেশ পুরোনো স্টেডিয়াম। ১৯৫৭ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। যদিও বিভিন্ন সময়ে এটি পুনর্নির্মিত হয়েছে। বিশ্বকাপের জন্য এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা বেশি করলেও বিশ্বকাপ শেষ হলে ধারণক্ষমতা কমিয়ে ২৩ হাজার করা হবে।