সাক্ষাৎকার

‘দর্শকদের প্রার্থনা আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা’

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লাল-সবুজের দলের বহু সাফল্যের এই নায়ক তরুণদের জন্য আদর্শ। কী ছিল তাঁর সাফল্যের চাবি-কাঠি, সেটা নিজের মুখেই বললেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ইএসপিএন-ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারটি সবিস্তারে তা তুলে ধরা হয়েছে এনটিভির পাঠকদের জন্য।  

প্রশ্ন : গত পাঁচ বছরে টেস্টে বিদেশের মাটিতে গড় রান ৫০ রান, কীভাবে সম্ভব?

মুশফিক : আমি মনে করি না, কেউ শুধু ঘরে বা বাইরের মাঠে বেশি রান করার জন্য খেলে। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সব ম্যাচে ভূমিকা রাখতে চাই। তবে বাইরের মাঠে ব্যাটিং করাকে আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, এটা সত্য। মনে করা হয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শুধু দেশের মাটিতে ভালো খেলে। আমি আমার খেলার মধ্য দিয়ে এই ধারণাকে উন্নত করার চেষ্টা করি, বলের এবং পরিবেশের অবস্থা বুঝে ব্যাটিং করি। আমি, তামিম, সাকিব, রিয়াদ মিলে ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে দলকে উপরে রাখার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন : আপনার ক্যারিয়ারের প্রথম সাত বছর ক্রিকেটের তুলনায় ২০১৪-২০১৫ সালে ওয়ানডে ম্যাচের পারফরমেন্সে অনেক উন্নতি হয়েছে। কীভাবে স্ট্রাইক রেট এবং রানে এত পরিবর্তন আনলেন?

মুশফিক : ভালো উইকেটে আজকাল ৩০০ রানও নিরাপদ নয়। ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী, খেলায় খুব বেশি শট নিয়ে আসা সম্ভব নয়। ১১ থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত মিড-অফ এবং মিড-অন সার্কেলে ফাঁকা থাকে। আমি এই সময়ে রান করার চেষ্টা করেছি। ১০০ স্ট্রাইক রেটের উপরে রান আসতে থাকলে বোলার চাপে থাকে এবং আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস কাজ করে। অন্যপ্রান্তের ব্যাটসম্যানও নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে পরে রান করতে পারে। বিশেষত, আমি কোথায় রান বের করতে পারব এটি জানতে বের করতে আমার সময় লেগেছে। এই ব্যাপারে চন্দ্রিকা হাথুরুসিংয়ের কিছু অবদান রয়েছে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সময় এটি কাজে এসেছে।

প্রশ্ন : কোনটি কঠিন? দ্রুত রান করতে পারা, নাকি ধরে খেলা?

মুশফিক : বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের জন্য দুটিই কঠিন। আমাদের এ রকম পরিস্থিতিতে কমই পড়তে হয়েছে। ভারত দশবারের মধ্যে নয়বারই এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। আমরা ছয় মাস বা বছরে একবার এমন অবস্থায় পড়ি। ফলে ম্যাচ বের করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আপনি যত এমন অবস্থায় পড়বেন এবং ম্যাচ জিতবেন, তত বেশি আত্মবিশ্বাসী হবেন।

প্রশ্ন : ১২ বছর ধরে বাংলাদেশ দলে খেলেও এত অনুশীলন করার পেছনে অনুপ্রেরণা কী?

মুশফিক : আমি মনে করি, আমার সর্বোচ্চটা বাংলাদেশকে দিতে পারিনি-এটাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা। ১২-১৩ বছর দেশের জন্য খেলা গর্বের। ক্যারিয়ার শেষে যেন মনে করতে পারি, আমার জায়গার মূল্যায়ন আমি করতে পেরেছি। আমি আমার ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করি। আপনি যখন খেলেন, ১৮-২০ কোটি সমর্থক আপনার জন্য প্রার্থনা করে। এর চেয়ে বড় প্রেরণা আর কী হতে পারে?

প্রশ্ন : বাংলাদেশের জন্য খেলা আপনার কাছে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

মুশফিক : প্রথম আর শেষ কথা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা। আমরা পরিবার থেকে মাসের পর মাস দূরে থাকি। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো গর্বের আর কিছুই নেই। ১৮-২০ কোটি দর্শক আমার জন্য প্রার্থনা করে, একজন রিকশাওয়ালা হয়তো সারাদিনের রোজগার বাদ দিয়ে আমার খেলা দেখছে, এটিই আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। আমার সঙ্গে অনেক ক্রিকেটার খেলা শুরু করলেও আল্লাহর রহমতে আমি টিকে আছি।

প্রশ্ন : গত বছর আপনি অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন। ভালো এবং খারাপ মুহূর্তগুলো নিয়ে বলবেন কি?

মুশফিক : আমি পেছনে থেকে কাজ করতে ভালোবাসি। ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। খেলার মতো অধিনায়কত্বেও উত্থান পতন রয়েছে। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমার অধিনায়ক এবং খেলোয়াড় হিসেবে কর্তব্য পালন করা কঠিন ছিল। দল হিসেবে আমাদের ভালো করা উচিত ছিল। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলংকাকে আমরা হারিয়েছি। অধিনায়ক নয়, দলই সবকিছু জিততে পারে। তাই আমি খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ জানাই।

প্রশ্ন : সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের সঙ্গে ১০ বছর ধরে খেলে কেমন লাগছে?

মুশফিক : আমার গত চার বছর ধারাবাহিক খেলার পেছনে এদের ভূমিকা অনেক। সাকিব, রিয়াদ ভাই বা তামিমের সঙ্গে ব্যাট করা সহজ। ক্রিকেট একার নয়, দলীয় খেলা। আমরা চার বছর ধরে অনেক চেষ্টা করে সর্বোচ্চটুকু দিতে পারছি। মাশরাফি অতুলনীয়; সাকিব, তামিম, রিয়াদ ভাই বিশ্বমানের খেলোয়াড়।

প্রশ্ন : তামিম বলেছেন, বিশ্বসেরা ১০ ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনি আসতে চান। আপনার লক্ষ্য কী?

মুশফিক : অবশ্যই একই রকম লক্ষ্য। তবে আমি পূর্বরর্তী সিরিজ থেকে বর্তমানে উন্নতির চেষ্টা করি। আমার আশৈশব স্বপ্ন বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের নায়ক হওয়ার, এটি করার এখনো চেষ্টা করি। ভালো সময় এসেছে, আরো ভালো সময় আমি কাটাতে চাই ।

প্রশ্ন : ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সময়টি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

মুশফিক : একটি টুর্নামেন্টে ভালো করতে হলে দলকে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে হয়। হঠাৎ ম্যাচ জেতা কঠিন। এশিয়া কাপে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারলে আমরা আত্মবিশ্বাসী হবো, যেটি দলের জন্য জরুরি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অতীত এবং সামনে আরো বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। আমরা মনে করি, পুরো দল যদি এভাবে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধারাবাহিক পারফরমেন্স ধরে রাখতে পারে, আমরা ভালো খেলতে পারব। এটি টুর্নামেন্টকে স্মরণীয় করে রাখবে।