ডালমিয়ার চিরবিদায়ে ‘ঐক্যবদ্ধ’ ভারতীয় ক্রিকেট
ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গনের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কথা কারো অজানা নয়। দেশের ক্রিকেটকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন জগমোহন ডালমিয়া। এই অনন্য ক্রিকেট-ব্যক্তিত্বের চিরবিদায়ও এককাতারে নিয়ে এসেছে ভারতীয় ক্রিকেটের বিবদমান অনেক পক্ষকে। আজীবন ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া ডালমিয়ার শেষকৃত্যে তাঁরা সবাই উপস্থিত হয়েছিলেন গভীর শ্রদ্ধা আর বেদনা নিয়ে।
রোববার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়সে মারা গেছেন ডালমিয়া। সোমবার সম্পন্ন হয়েছে তাঁর শেষকৃত্য। তার আগে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে প্রায় দুই ঘণ্টা রাখা হয়েছিল মরদেহ। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী, বিসিসিআইর তিন সাবেক সভাপতি এন শ্রীনিবাসন, শারদ পাওয়ার ও শশাঙ্ক মনোহর, বর্তমান সচিব অনুরাগ ঠাকুর, আইপিএল সভাপতি রাজীব শুক্লা, ভারতের ‘টিম ডিরেক্টর’ রবি শাস্ত্রী প্রমুখ। সবার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
শ্রীনিবাসন ও শারদ পাওয়ারের সঙ্গে তেমন ভালো সম্পর্ক ছিল না ডালমিয়ার; বরং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ভিন্ন ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়েছিল তাঁদের। কিন্তু ডালমিয়ার মৃত্যুতে দূরে থাকতে পারেননি শ্রীনিবাসন আর পাওয়ার। ক্রিকেটে ডালমিয়ার অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে আইসিসির বিতর্কিত চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন বলেছেন, ‘আমরা যখন ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, তখন ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের পুরস্কার হিসেবে ১৫ লাখ রুপিও দিতে পারেনি। সে সময় লতা মঙ্গেশকর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বোর্ডের দিকে। এ সংকট থেকে ক্রিকেটকে বের করে এনেছিলেন ডালমিয়া। টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রির মাধ্যমে খেলাটা যেন সবার কাছে পৌঁছায়, তিনি তা নিশ্চিত করেছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতি অনেক বড় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। তাঁর সব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমরা বোর্ড এমনভাবে চালাব, যাতে তাঁর সব আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পেতে পারে।’
বিসিসিআই সচিব অনুরাগ ঠাকুর সদ্যপ্রয়াত সভাপতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমার জন্য এটা একটা ব্যক্তিগত ক্ষতি। বিসিসিআই ও ক্রিকেট খেলাটার জন্যও তাই। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ নেতা ও ক্রীড়া প্রশাসক। ক্রিকেট খেলার মধ্যে অনেক পরিবর্তন আনার জন্য তিনি সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ক্রিকেটকে আর্থিকভাবে লাভজনক করতে তাঁর বিশাল অবদান। খেলোয়াড়দের প্রচুর সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় ক্রিকেটের মান সমুন্নত করেছেন তিনি। সারা দেশে অজস্র ক্রিকেট অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন। তাঁর শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারবে না।’