খেলার মাঠ থেকে মসনদে যাঁরা

খেলার মাঠে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে যতটা উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন, অধিনায়কত্ব গুণে আরো বেশি প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কথা বলা হচ্ছে। ক্রিকেট মাঠে তাঁর হাত ধরে বহু সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার রাজনীতির মাঠে নেমেও দারুণ সাফল্য পেয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নড়াইল-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মাশরাফি। ক্রীড়াবিদ থেকে অনেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি খেলোয়াড় থাকাকালীন সময়েই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে শ্রীলঙ্কার সনৎ জয়সুরিয়া খেলা থেকে অবসর নেওয়ার আগেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রীও হয়েছিলেন এই লঙ্কান ক্রিকেটার।
খেলা থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতির মঞ্চে অনেকেই সাফল্য পেয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার গত জুলাইয়ে দেশটির ক্ষমতার মসনদে বসেন। এবার দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু ক্রীড়াবিদের গল্প, যারা খেলার মাঠ থেকেও রাজনীতিতে গিয়ে সাফল্য পেয়েছেন :
নাঈমুর রহমান দুর্জয় : বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় ক্রিকেটার হিসেবে অনেক সাফল্য পেয়েছেন। তাঁর অন্যতম সফলতায় দেশের ক্রিকেটে অর্জন জমা পড়েছে। ক্যারিয়ার শেষে তিনি যোগ দেন রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগের টিকেটে তিনি মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ইমরান খান : পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন ইমরান খান। ১৯৯২ সালে পাকিস্তান বিশ্বকাপ জেতে তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বগুণে। মাঠের সেই নেতৃত্বগুণ দিয়ে রাজনীতিতেও সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এই বছর জুলাইয়ে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল জয়ী হয়ে। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।
নভোজৎ সিং সিধু : একসময় ভারতীয় জাতীয় দলের দুর্দান্ত ওপেনার ছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়ে ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে তিনি তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে দলবদল করে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন।
সনাৎ জয়সুরিয়া : শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সনাৎ জয়াসুরিয়া। ১৯৯৬ সালে দেশটির বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। 'মাতারা হারিকেন' খ্যাত এই ক্রিকেটার ২০১০ সালে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি ছিলেন জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তাই বেশ আলোচনার জন্মদিয়েছিলেন তিনি। সে ধারাবাহিকতায় আরো কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হন এবং উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা : শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দেন, সাফল্য পান। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা এই অধিনায়ক দেশটির বেশ কয়েক দফা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
রোমারিও : ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন রোমারিও। পেলের পর দেশটির অন্যতম সেরা তারকা ধরা হয়ে থাকে তাঁকে। খেলা থেকে বিদায় নিয়ে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন তিনি, বর্তমানে ব্রাজিলের সিনেটর তিনি।
জর্জ উইয়া : ফুটবল মাঠ একসময় দারুণ মাতিয়েছেন তিনি। ২০০৩ সালে খেলা থেকে অবসর রাজনীতিতে নেমে অসাধারণ সাফল্য পান একসময় চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলা এই ফুটবলার। বর্তমানে তিনি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট।
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার : তিনি হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা। একসময় ক্রীড়াবিদও ছিলেন, বডি বিল্ডার হিসেবে বেশ খ্যাতি ছিল তাঁর। ২০০৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন। তিনি দুই দফা দেশটির গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন।
মাশরাফি বিন মুর্তজা : এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া এই তারকা এখনো খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে আগামী মে-জুনে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।